রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত করণ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে
ব্যয় হচ্ছে ৩৬ কোটি ৬৫ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা
নির্মল বড়ুয়া মিলন, স্টাফ রিপোর্টার:: রাঙামাটি পার্বত্য জেলা ও তার আশ-পার্শ্বের এলাকার জনসাধারনের উন্নত স্বাস্থ্য সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাহাড়ি এলাকায় সরকারি ভাবে প্রথমবার ৬ তলা বিশিষ্ট স্থাপনা রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করণ প্রকল্প ৩৬ কোটি ৬৫ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তর এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে যথা সময়ে ভূমি বুঝিয়ে দিতে দেরী হওয়াতে ২০১৮ সালে পাওয়া কাজ ২০২০ সালে ২ বছরে বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও স্থাপনা সরিয়ে ভুমি খালি করে বুঝিয়ে দিতে দেরী হওয়াতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্থাপনা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করিতে ৬ বছরে গড়িয়েছে।
প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন অংশের সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত কাজের মধ্যে রয়েছে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ ৩য় তলা পর্যন্ত ব্যয় ১৯ কোটি ৮১ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা, (ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামাল কন্সট্রাকশন লিঃ ও মেসার্স শেফাক এন্টারপ্রাইজ), ৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত ব্যয় ১৪ কোটি ৬৫ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা, (ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শেফাক এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স রিপ এন্টারপ্রাইজ), ৬ তলা ভীত বিশিষ্ট ১ তলা সার্ভিস ভবন নির্মাণ ব্যয় ৮৯ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা, (ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স অনুপম এন্টারপ্রাইজ), ৪ টি লিফট সরবরাহ ও স্থাপন ব্যয় ৩ কোটি ৪৪ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা, (ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুপারস্টার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড), মেডিকেল গ্যাস সিস্টেম স্থাপন ব্যয় ২ কোটি ৬৯ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা, (ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড), বহিঃস্থ বৈদ্যুতিকীকরণ ৬ কোটি ৭৪ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা ব্যয়ে (ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কন্সট্রাকশন লিঃ ও সাউথ বাংলা কন্সট্রাকশন প্রাঃ লিঃ) এ প্রকল্পের কাজ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে।
সর্বশেষ বর্ধিত ভৌত অগ্রগতি বিষয়ে বলা হয়েছে ৯৬% (ফিনিশিং কাজ চলমান), ৭৩% (৬ষ্ঠ তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন, গাঁথুনী ও ফিনিশিং কাজ চলমান), ১০% (পাইলিং কার্য সম্পন্ন), ফ্রান্সে লিফটসহ প্রস্তুত হয়েছে। লিফ্ট এর প্রি -শিপমেন্ট ইন্সপেকশন, ইন্সটলেশন এবং কমিশনিং এর পর কাজ শতভাগ সম্পন্ন হবে। ইংল্যান্ডে মেশিনারিজ প্রস্তুত হয়েছে। প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন, ইন্সটলেশন এবং কমিশনিং এর পর কাজ শতভাগ সম্পন্ন হবে, সিসিটিভি লাইন স্থাপন, বিভিন্ন অংশের মালামাল অর্ডার প্রক্রিয়া ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এলসি খোলার প্রক্রিয়া চলমান ও চুক্তি সম্পাদন পূর্বক কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে।
আধুনিক সুবিধাদি মধ্যে থাকছে : সেমি-বেজমেন্টে কার পার্কিং এর সুবিধা। আধুনিক সুবিধাদি সম্বলিত রান্নাঘর, মেডিকেল স্টোর, ডিসপেনসারি, জরুরী বিভাগ, মাইনর ওটি, নার্স রুম, ওয়েটিং রুম, রোগীদেরকে ষ্টেচার বা হুইল চেয়াারে করে সরাসরি জরুরী বিভাগে ওপরে তোলা জন্য র্যাম্প ইত্যাদি।
১০ শয্যা আইসিইউ ও ২০ শয্যা আইসোলেশন ইউনিট এবং করোনারি কেয়ার ইউনিট। আধুনিক সুবিধাদি সম্বলিত মৃতদেহ সংরক্ষণাগার।
আধুনিক সুযোগ সুবিধাদি সম্বলিত এক্স রে, সিটি স্ক্যান, এম আর আই, ম্যামোগ্রাফি, ব্লাড ব্যাংক, ইসিজি, ইউএসজি ও প্যাথলজি কক্ষ। আধুনিক সুযোগ সুবিধাদি সম্বলিত ৩টি অপারেশন থিয়েটার ও পোস্ট অপারেটিভ রুম।
লিফট, ম্যাডিকেল গ্যাস সিস্টেম সহ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যৎ সরবরাহের জন্য সাব-স্টেশন ও জেনারেটর।
আধুনিক সুযোগ সুবিধাদি সম্বলিত গাইনি, ওবস বিভাগ এবং নবজাতক শিশু বিভাগ। আধুনিক সুযোগ সুবিধাদি সম্বলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করণে সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরার সুবিধাদি। অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অত্যাধুনিক ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম।
স্টোর কক্ষ, মেইন্টেন্যান্স কক্ষ, নিরাপত্তা ব্যারাক, ঔষধ সংরক্ষণ কক্ষ, লন্ড্রি, মেডিক্যাল রেকর্ড কক্ষ, পরিদর্শন বাংলোর সুবিধাদি সম্বলিত সার্ভিস ভবন ইত্যাদি।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামাল কন্সট্রাকশন লিঃ ও মেসার্স শেফাক এন্টারপ্রাইজ এর প্রজেক্ট ইনঞ্জিনিয়ার মো. ওমর ফারুক বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান ২টি ২০১৮ সালে কাজ পেয়েছে ২০২০ এ কাজ বুঝিয়ে দেয়ার কথা কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে মুল ভবণের জন্য ২০২১ ও রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ক্যান্টিন সরিয়ে প্রকল্পের জন্য ২০২৩ সালে জায়গা খালি করে দেন।যথা সময়ে ভূমি বুঝিয়ে এবং স্থাপনা সরিয়ে জায়গা খালি করে দিতে দেরী হওয়াতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময় লাগছে। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইনঞ্জিনিয়ার মো. ওমর ফারুক জানান, প্রকল্পের ৯০% নির্মান কাজ শেষ। এখন চলছে গ্রিল বসানো, ওয়ালে টাইলস্ বসানোর কাজ, ফ্লোর এ টাইলস্ বসানোর কাজ বাকি আছে, তার পর আস্তর করা, রং করা, লিফট স্থাপন ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জিম যুক্ত করা। বড় কোন ধরনের দুর্যোগ না হলে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করণ প্রকল্পের নির্মান কাজ শতভাগ নিধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারবে বলে ইনঞ্জিনিয়ার মো. ওমর ফারুক নিশ্চিত করেন।
এবিষয়ে রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশল বলেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় নির্মানাধীন জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরন প্রকল্প। এ প্রকল্পটি রাঙামাটি পার্বত্য জেলাবাসীর প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি উপহার। এর মাধ্যমে রাঙামাটি জেলাবাসী এবং আশেপাশে জেলায় বসবাসকারী জনগন স্বাস্থ্যসেবা পাবেন এবং উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশিচত করবেন। রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় নির্মানাধীন ২৫০ শয্যার হাসপাতাল গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন।
এই প্রকল্পটি ৪র্থ এইচপি এনএসপির আওতায় ফিজিক্যাল ফেসিলিটিজ ডেভলাভমেন্ট পিএসডির অধীনে নির্মান করা হচ্ছে, এটি টোটাল ছয়টি প্যাকেজে বিভক্ত। প্রতিটি প্যাকেজের দরপত্র আলাদা ভাবে আহবান করা হয়েছে এবং প্রতিটি প্যাকেজের কাজই একই সাথে চলমান আছে। এই হাসপাতালটি এগারো তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট যাতে একটি বেজমেন্ট আছে। আপাতত ৪র্থ এইচপি এনএসপির আওতায় অপারেশন প্লান এর আওতায় ছয় তলা পর্যন্ত নির্মিত হবে এ ছয় তলায় একটি অত্যাধুনিক আইসিইউ থাকবে, একটি আইসোফ্লোর থাকবে এবং আইসোলেশন ইউনিট থাকবে যেটা আমরা কোভিডের সময় দেখেছি আইসোলেশনের প্রয়োজনীয়তা।
এছাড়া এ হাসপাতালে বেজমেন্টে কার পার্কিং এর সুবিধা একটি মেডিকেল ষ্টোর ডিসপেনসারি, জরুরী বিভাগ, মাইনর ওটি, নার্সরুম, ওয়েটিং রুম ইত্যাদি থাকছে। করোনারি কেয়ার ইউনিট থাকবে, মৃতদেহ সংরক্ষনাগার একটি আধুনিক সুবিধা সম্বলিত মৃতদেহ সংরক্ষনাগার থাকছে, এক্সরে, সিটি স্ক্যান এমআরআই, ব্লাড ব্যাংক, ইসিজি, ইউএসডি ও প্যাথলজি কক্ষ থাকছে। তিনটি অপারেশন থিয়েটার এবং পোষ্ট অপারেটিভ রুম এ হাসপাতালে থাকছে। এ হাসপাতালে চারটি লিফট, মেডিকেল গ্যাস সিষ্টেমসহ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য সাবষ্টেশন ও জেনারেটর থাকবে। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত গাইনী ওয়ার্ড এবং শিশু বিভাগ এবং নবজাতক শিশু বিভাগ থাকবে। এই হাসপাতালটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে এবং এটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সার্বক্ষনিক সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অত্যাধুনিক ফায়ার ফাইটিং সিষ্টেম, ফায়ার হাইড্রিন সিষ্টেম থাকছে। এবং এর পাশাপাশি হাসপাতালের সাথে একটি সার্ভিস বিল্ডিং তৈরী করা হচ্ছে যে সার্ভিস বিল্ডিংএ ষ্টোরকক্ষ মেইনটেন্যান্স কক্ষ নিরাপত্তা ব্যারাক, ঔষুধ সংরক্ষণাগার লন্ড্রী, মেডিকেল রেকর্ড কক্ষ এবং রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের একটি রেষ্টহাউজসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা থাকবে।
এ ২৫০ শয্যা হাসপাতাল প্রকল্পটি যখন অনুমোদন হয় তারপরে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল জায়গা বা স্থান নির্বাচন নিয়ে কিছু সমস্যা ছিলো, আমাদের রাঙামাটি পার্বত্য জেলার সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি নিজ উদ্যোগে এ হাসপাতালের জায়গার যে সমস্যা সেটি সমাধান করেছেন এবং ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তারপর হতে ফাউন্ডেশন কাজ পাইলিং কাজ সম্পন্ন করে হাসপাতালটির নির্মাণকাজ বর্তমানে ১ম তলা থেকে ৩য় তলা পর্যন্ত ৯৬% এবং ৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত ৭৩% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের যে সার্ভিস বিল্ডিংটি আছে সে বিল্ডিংটি এখন নির্মানাধীন আছে এছাড়া যে চারটি লিফট সেগুলো ফ্রান্সে তৈরী হয়েছে এবং প্রি -শিপমেন্ট ইন্সপেকশন দ্রুত বাংলাদেশে চলে আসবে। মেডিকেল গ্যাস সিষ্টেমের ইক্যুপমেন্টগুলো ইংল্যান্ডে প্রস্তুত হয়েছে এবং সেগুলো দ্রুত চলে আসবে।
এছাড়া বহি:স্থ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সাবষ্টেশন, জেনারেটর, এয়ার কন্ডিশনিং সিষ্টেম, ফায়ার ফাইটিং সিষ্টেম, সিসিটিভিসহ যা যা সুযোগ সুবিধা আছে সবকিছু বিভিন্ন ভেন্ডরের মাধ্যমে সোর্সিং করা হচ্ছে এবং সেগুলোর জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এলসি খোলা হয়েছে এগুলো দ্রুততম সময়ে আসবে।
এ প্রকল্পটির মেয়াদ জুন ২০২৪ পর্যন্ত আছে তবে আমরা আশাবাদী আমরা ডিসেম্বর-২০২৩ এর মধ্যে এ হাসপাতালটি হস্তান্তর উপযোগী করতে পারবো এবং রাঙামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে হস্তান্তর করতে