রাউজানের হৃদয়কে জবাই করে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করেন উচিংথোয়াই মারমা
আমির হামজা, রাউজান:: চট্টগ্রামের রাউজানের ব্যাপক আলোচিত ঘটনা কলেজ শিক্ষার্থী হৃদয়কে হত্যার পর তার মাংস ভক্ষণ করার ঘটনাটি।
কলেজ শিক্ষার্থী শিবলি সাদিক হৃদয় পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের আয়ের জন্য ঘরের পাশে একটি মুরগী’র খামারে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। খামারের কাজ নিয়ে খামারে কর্মরত প্রায় উপজাতি ৫/৭ জন এবং তাদের অন্যান্য সহযোগী কর্মচারী বন্ধুদের সাথে হৃদয়ের বিভিন্ন সময় বাক-বিতন্ডা হত।
এ ব্যাপারে খামারের মালিক তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিলেও তারা হৃদয়কে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।
উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আসামী উমংচিং মারমা গত ২৮ আগস্ট রাতে হৃদয়কে ফোন করে রাস্তায় আসতে বলে। তখন হৃদয় রাস্তায় আসলে আসামীরা জোর করে সিএনজিতে তুলে নেয়। এসময় হৃদয় চিৎকার করলে তার মুখে গামছা বেধে রাঙামাটি-রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার সীমান্তে অবস্থিত একটি উঁচু পাহাড়ের সেগুন বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরবর্তীতে উমংচিং মারমার ব্যবহৃত ফোন হৃদয়’কে দিয়ে তার বাবার নিকট ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দর কষাকষির একপর্যায়ে অপহরণকারীরা ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অপহৃত ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়।
গত ১ সেপ্টেম্বর হৃদয়ের বাবা ও নানা মুক্তিপণের ২ লক্ষ টাকা বান্দরবানে গিয়ে অপহণকারীদের দিলেও তারা ছেলেকে ফেরত দেয়নি। পরবর্তীতে ছেলেকে ফেরত না পেয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর হৃদয়ের মা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে রাউজান থানা পুলিশ অপহরণের ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন।
উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত সুইচিংমং মারমা ও অংথুইমং মারমা আসামী উমংচিং মারমা এর নেতৃত্বে অপহরণ, হত্যা, আলামত ধ্বংস করার জন্য লাশগুম এবং মুক্তিপণ আদায় করে মর্মে চট্টগ্রামের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে অপহরণ মামলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানায় রুজু করা হয়।
পরবর্তীতে আদালতে দেয়া জবানবন্দী অনুযায়ী হৃদয়’কে হত্যার বিষয়টি উদঘাটিত হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক অপহরণ মামলার ধারার সাথে হত্যা মামলার ধারা সংযোজন করার জন্য বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চট্টগ্রাম বরাবর আবদেন করেন।
র্যাব আরও জানান, উক্ত অপহরণ এবং হত্যা পরবর্তীতে লাশ বহু খন্ডিত করে গুম করা মামলার অবশিষ্ট আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ব্যাপক গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে।
নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, উক্ত নৃশংস হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান এবং হৃদয়কে নৃশংসভাবে জবাইকারী আসামী চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় অবস্থান করছে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি অভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে আসামী রাঙামাটি কাউখালী থানার কলমপতি এলাকার উচিংথোয়াই মারমা (২৩)কে আটক করতে সক্ষম হয়।
তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত অপর আসামী বান্দরবান রুমা উপজেলার আশ্রম পাড়ার মৃত ক্য থোয়াই অং চৌধুরী ছেলে ক্যাসাই অং চৌধুরী (৩৬) শনিবার চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন নতুন ব্রীজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব-৭।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে গ্রেফতারকৃত আসামী উচিংথোয়াই মারমা স্বীকার করে যে, সে নিজ হাতে ধারালো ছুরি দিয়ে হৃদয়কে জবাই করে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে এবং অপর আসামী ক্যাসাই অং চৌধুরী হৃদয়ের দুই পা চেপে ধরে জবাই করতে সহযোগীতা করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে নিম্নবর্ণিত নৃশংস ও চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হয়।
র্যাব আরও জানান, অপহরণ পূর্বক হৃদয়কে রাঙ্গুনিয়ার একটি উঁচু পাহাড়ের সেগুন বাগানে নিয়ে গেলে সেখানে আসামী উচিংথোয়াই মারমা ও ক্যাসাই অং চৌধুরী পূর্ব থেকে উপস্থিত থাকে। পাহাড়ে হৃদয়কে একদিন অবরুদ্ধ রাখার পর উমংচিং মারমা বাকি আসামীদের বলে ‘হৃদয়’কে মেরে ফেললে কিছুই হবেনা। সে কথা মোতাবেক উমংচিং মারমা হৃদয়কে হত্যা করার জন্য উচিংথোয়াই মারমাকে দায়িত্ব দেয়।
উচিংথোয়াই মারমা নিজ হাতে ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে হৃদয়কে।
হৃদয়ের মা নাহিদা আকতার ও বাবা শফি জানান, আমার ছেলের সাথে যে ঘটনা হয়েছে এমন ঘটনা যেন আর কারো সাথে না হয়। কোনো মায়ের বুক সাথে আর খালি না হয়। বাকি আসামিদের আইনের আওতায় এনে কঠিন বিচার দাবি করেন হৃদয়ের বাবা মা।
হৃদয় কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের ৯নম্বর ওয়ার্ডের রওশান আলী বাড়ির মুহাম্মদ শফির সন্তান। সে কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।