রাউজান-ফটিকছড়ি দুই উপজেলার মানুষের বদলে যাবে ভাগ্য
সাড়ে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সর্তা খালের উপর নির্মিত হচ্ছে হচ্চারঘাট সেতু
আমির হামজা, রাউজান:: চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সর্তা খালের উপর নির্মিত হতে যাচ্ছে সেতু। এক সেতুতে ভাগ্য খুলতে যাচ্ছে দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্যের চাকা। সর্তা খালের মধ্যে বিভক্ত দুই উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো সর্তা খালে সেতু নির্মিত হলে শুধু যোগাযোগ নয় খুলে যাবে দুই পাড়ের মানুষের কৃষি, ব্যবসা বাণিজ্যের অপার নতুন সম্ভাবনা দ্বার।
বাড়বে দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে আত্মীয়তার মেল বন্ধন। এই সেতু হওয়ার ফলে দুই উপজেলার অসংখ্যা শিক্ষার্থীদের যাতায়ত ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের জন দুর্ভোগ লাগব হবে। আর যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে বাড়বে দুই উপজেলার শিক্ষার মান উন্নয়ন। সেই সাথে বদলে যাবে দুই এলাকার মানুষের অর্থনীতির চিত্র।
জানা গেছে, স্বাধীনতার আগ থেকে দুই উপজেলার মানুষ এই খালের পানি সাঁতরিয়ে এপার-ওপার চলাফেলার করতেন। বিশেষ করে বর্ষাকালে দুই পাড়ের মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে এই খাল পার হতে হয়। বর্ষার সময়ে দুই পাড়ের শিক্ষার্থীরা ভয়ে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যেতে চায় না। প্রায়ই সময়ে ছোট খাটো দুর্ঘটনা ঘটে যেত। এছাড়া কৃষিপণ্য ও অসুস্থ রোগীদের নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হতো। বর্ষাকাল আসলে মানুষের দুর্ভোগ দ্বিগুণ হয়ে যেত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাউজানের এপার থেকে ফটিকছড়ির ওপারে কোমড় ও হাঁটু পরিমান পানি সাঁতরিয়ে মানুষ পারাপার হচ্ছেন। এই দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে দেখা যায় দুই পাড়ে নানা রকমের সাকসবজির ব্যাপক উৎপাদন করা হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিক সুযোগ সুবিধা না হওয়া অনেক সময় উৎপাদিত ফলমূল বাজারে ও বিভিন্ন জায়গা হতে আসা বেপারি দের হাতে পৌঁচাতে সময় চলে যেত। এতে নষ্ট হয়ে যেত তরিতরকারি। এখন সেতু হওয়ার কথা শুনে দুই উপজেলার মানুষের মাঝে ব্যাপক আনন্দ সৃষ্টি হয়েছে।
এবিষয়ে রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল বলেন, রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী প্রচেষ্টায় রাউজানে ব্রিজ কালভার্ট ও রাস্তাঘাট নির্মাণখাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সর্তা খালের উপর নির্মিত হচ্ছে হচ্চারঘাট সেতু। এই সেতু হওয়ার ফলে রাউজান ও ফটিকছড়ির মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বের কারণে আজ বাংলাদেশে উন্নয়ন কাজ সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর দক্ষ প্রচেষ্টায় এই উপজেলায় সবদিকে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
ফটিকছড়ির স্থানীয় কয়েকজন প্রবীণ মানুষ ও শিক্ষক নরুল হুদার সাথে কথা বলে জানা গেছে, হচ্চারঘাট নাম করণের পিছনে এক দারুণ ইতিহাসের কথা ওঠে আসেন তাদের মূখ থেকে, বর্তমান সময়ে হজ্বের বিষয়টি অনেকটা সূলভ হলেও তৎকালীন সময়ে খুব কম মানুষ হজ্বে যেত। আর সেই সময়ে হাজীদের সম্মান ছিলো সমাজে অন্যরকম। তারা জানান সেই সময়ে দুই পাড়ের মানে রাউজান ও ফটিকছড়ির ৪ জন প্রসিদ্ব হাজী ছিলেন যারা ঐ এলাকায় মিলিত হয়ে আড্ডা বা আলোচনা করতেন। পরবর্তীতে সেখানে সৃষ্টি হয় অস্থায়ী দোকান পাট। আর তাদের ৪ হাজীর কারণে এই স্থানের নাম হয়ে যায় হজ্বচার ঘাট যা বর্তমানে দুই উপজেলার মানুষ চিনেন হচ্চারঘাট নামে। কালের বিবর্তনে মানুষের মুখেমুখে এখন হচ্চারঘাট নামে পরিণত ও পরিচিতি লাভ করেছে।
রাউজান উপজেলরা উত্তর হলদিয়া গ্রামের ৭০ বছর বয়সী রহিম আলী বলেন, একসময় দুই উপজেলার মানুষ নৌকা দিয়ে এই খাল পারাপার করতেন। তখন ভাড়া ছিলো ১০ পয়সা। স্বাধীনতার অনেক পর ১টাকা মতো ভাড়ায় চড়ে এই খাল মানুষ পার হত।
উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক সুমন বলেন, রাউজানের সংসদ সসদ্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এটি দুই উপজেলরার মানুষের জন্য বিশাল একটি উপহার হতে যাচ্ছে। দুই পাড়ের মানুষের মনে সেতু হওয়ার কথা শুনে ঈদের মতো আন্দন ছড়িয়ে পড়েছে। আমি মনে করি এই সেতু হওয়ার ফলে বদলে যাবে দুই উপজেলরা প্রায় কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্য। সেইসঙ্গে পাল্টে যাবে দুই উপজেলার মানুষের অর্থনীতি চিত্রও। সেই সাথে কৃষিখাতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। কৃষকরা ফসল উৎপাদনে আরও ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। কুষিপণ্য বহন, অসুস্থ রোগীদের নিয়ে আর পড়তে হবেনা দুর্ভোগে। ব্রিজটি নির্মাণ হওয়ার ফলে দুই উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হবে। সেই সাথে তিনি রাউজানের এমপিকে ধন্যবাদ জানান।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের রাউজান উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম জানান, “এই সেতুর নির্মাণ কাজে ব্যয় হবে প্রায় ২৪ কোটি ৬৬লাখ টাকা। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ৪৫০ মিটার, সেতুর দুই পাশে ৩২০ মিটারে করা হবে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। আগমী ১৩ নভেম্বর ব্রিজটি ভিত্তিস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।