কাপ্তাই সড়কে ব্যারিকেড ও আগুন জ্বালিয়ে রাতেও চলছে চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
আমির হামজা, রাউজান: চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় কাপ্তাই সড়কে ব্যারিকেট ও আগুন জ্বালিয়ে রাতেও চলছে আন্দোলন। অবরুদ্ধ রয়েছে কাপ্তাই সড়ক।
পাহাড়তলী বাজারে হয়ে কয়েক কিলোমিটার সড়ক জুড়ে আটকে আছে পণ্য বাহী শতশত ট্রাক। যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন রাউজান-রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাই-রাজস্থলী উপজেলার সাধারণ মানুষ।
আন্দোলনরত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভিসি ভবনে তালা লাগিয়ে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ ও ভবনের সামনে আগুন জ্বালিয়ে আন্দোলন করেন।
পরে অবরুদ্ধ ভবন থেকে বাহির হয়ে চুয়েটের ভিসি শিক্ষার্থীদের সাথে দাবি গুলো নিয়ে কথা বলেন।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের দাবি পুরোপুরি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এবং ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন থাকবে।
১০দফা দাবির মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে শাহ আমানতের গাড়ী চালক তাজুল ইসলামকে চট্টগ্রাম থেকে আটক করেছে পুলিশ।
শিক্ষার্থীরা জানান আমরা দাবি আদায় করে সড়ক থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে যাব। দাবি গুলো যতক্ষণ পর্যন্ত পূরণ না হবে আমরা রাজপথে আছি।
চুয়েট কর্তৃপক্ষের সূত্র জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের দাবি গুলো মধ্যে, শাহ আমানত পরিবহনের ড্রাইভারকে আটক করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয় সোমবার রাতে।
নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করে এবং আহত শিক্ষার্থীর পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে তাৎক্ষণিক ২ লক্ষ টাকা করে এবং আহত ছাত্রের পরিবারকে ১ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিল থেকে অনুদান প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
আগামী ১ মাসের মধ্যেই চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শুরু করা হবে। জানা গেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব কাপ্তাই সড়কটি সরেজমিনে দেখে গেছেন।
এছাড়া নিরাপত্তা বিবেচনায় এই রুটে দূরপাল্লার বাস ব্যতীত লোকাল বাস বন্ধ রাখার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ফিটনেসবিহীন, লাইসেন্সবিহীন গাড়ির বিরূদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযান চলমান থাকবে।
চুয়েট মেডিকেল সেন্টারে সকল প্রকার প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি নিশ্চত করা হয়েছে। এক্স-রে মেশিনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে। এবং অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন সম্বলিত সিলিন্ডার, শ্বাস প্রদান যন্ত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও মেডিকেল সেন্টারে আরও উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বর্তমানে চুয়েট তিনটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। তন্মধ্যে দুটি অ্যাম্বুলেন্স ছাত্রদের জন্য এবং অন্যটি শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১টি বাস ও ১টি অ্যাম্বুলেন্সের ক্রয়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু গাড়ি ক্রয়ে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ক্রয় সম্ভব হয়নি। গাড়ি ক্রয়ে ইউজিসির অনুমোদনের জন্য পত্র প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উক্ত পত্রের অনুলিপি জেলা প্রশাসকে প্রদান করার জন্য তিনি বলেছেন, যাতে তিনিও এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যথাযথ অনুমোদনের জন্য সহযোগিতা করতে পারেন।
অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে ১টি বাস ও ১টি অ্যাম্বুলেন্স ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুনের মধ্যে ক্রয় করা হবে। আরো বাস ও অ্যাম্বুলেন্স ক্রয়ের জন্য পরবর্তী অর্থবছরে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে বাসের শিডিউল পুন:নির্ধারণ করা হবে।
চট্টগ্রাম থেকে চুয়েট সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাফিক বক্স স্থাপন, সড়ক বিভাজক, স্পিডব্রেকার স্থাপন ইত্যাদির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে চুয়েট কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার।
আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সকল একাডেমিক কার্যক্রম রিশিডিউল করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রকল্যাণ অধিদফতর ছাত্র-ছাত্রীদের যৌক্তিক দাবিসমূহের ব্যাপারে অধিকতর দায়িত্ববান ও সজাগ থাকবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
শিক্ষার্থীদের সব দাবির সাথে একমত পোষণ করে চুয়েট কর্তৃপক্ষ অন্যান্য সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে দাবি পূরণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সুমন দে এর বিষয়টির ব্যাপারে প্রশাসনিক ব্যবস্থার নিবেন।
প্রসঙ্গত, কাপ্তাই সড়কের গত ২২ এপ্রিল যাত্রীবাহী বাস শাহ আমানত পরিবহনের ধাক্কায় নিহত হয় চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও তৌফিক হোসেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে চুয়েটের ইইই বিভাগের মো: জাকারিয়া হাসান হিমু।