জীবিত থাকা ও বেঁচে থাকা
ফজলুর রহমান:: ‘আপনি আপনার জীবনে কত বছর বেঁচে ছিলেন?’-এটি একটি তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি উত্থাপন করা সহজ। তবে জবাব দেয়া কঠিন। তাই অধিবেশনের শুরুতেই উত্তর না খুঁজলে ভালো হয়। আপাতত: এই প্রশ্নটিকে শিরোনাম ধরে নিতে পারি। এরপর চলুন বিস্তারিত-তে যাই।
প্রথমেই এই বিষয়ে কিছু দার্শনিক উক্তি দেখি। আমাদের দেশের জ্ঞানবান অধ্যাপক যতীন সরকার স্যার এর একটি কথা আছে, “জীবিত থাকা আর বেঁচে থাকা এক নয় । বেঁচে থাকা মানে সৃজনশীলতা, জ্ঞান চর্চা ও আবিষ্কারে বুঁদ হয়ে থাকা।” আল্লামা জালালুদ্দিন রুমির উপলব্ধি ছিল, “নশ্বর পৃথিবীতে মরণের স্বাদ সবাই পায়, জীবনের স্বাদ পায় অল্প কয়েকজন।” তাত্ত্বিক লিভো গ্র্যান্ড এর একটি উক্তি আছে,“The biggest reason for our existence is to feel the rapture of being alive.” বিখ্যাত লেখক কার্ল সেগান বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে তুমি কিন্তু জীবিত! এটা কিন্তু মোটেও সাধারণ কিছু নয়। একটা মানুষ জন্ম নেওয়ার রাস্তায় যে কতগুলো বাঁক আছে, সেই অসীম সম্ভাবনার কথা যখন চিন্তা করবে, তখন এই জীবনের জন্য আপনা আপনিই কৃতজ্ঞতা অনুভব করবে।’
জীবন মানে মৃতের বিপরীত, মানে জীবিত অবস্থা। জীবিত মানে শ্বাস নেয়া। আর ‘বেঁচে থাকা’ মানে শুধুই নিশ্বাস নেয়া নয়। শুধু অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ছেড়ে দেয়া নয়। তারও বেশি অর্থে এটি বিরাজমান। ‘বেঁচে থাকা’-কে বলা যায়, চেতনার উচ্চতর স্তরে জীবনযাপন করা। একটি জীবনকে কেবল মৃত্যুর অর্থহীনতায় না ভাসানোর নামই হয়তো বেঁচে থাকা ।এজন্য বলা হয়, জীবিত থাকার চেয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। জীবিত মানুষ অনেক সময় ভিতর থেকে মারা যায়। আর বেঁচে থাকা মানুষ জীবনভর ‘জীবিত’ থাকে।
জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে অনেক উপায় দেখা যায় মহানদের জীবনে, সফলদের জীবনযাত্রায়। সেসব থেকে পাঠ নেয়া যায়। এছাড়া এখানে ৭টি উপায় প্রকাশ করেছে সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। আসুন, খতিয়ে দেখি তা…
১. প্রথমে ভালোভাবে চিন্তা করুন
নিজের করণীয় সম্পর্কে তালিকা করার আগে আপনাকে ভাবতে হবে কি করা উচিত আর কি করা উচিত না। সব লিখে তারপর দেখুন কোনটিকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া দরকার। চিন্তাগুলোকে একটি কাঠামোতে সাজিয়ে ফেলুন। দেখুন কোন সময়ে কোনটি করলে ভালো ফল আসবে। এভাবে ভেবে চিন্তে এগুতে থাকুন এবং তালিকাটি করেই ফেলুন। এতে করে আপনি যাই করবেন তাতে একটি মানসিক সন্তুষ্টি থাকবে আপনার। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন আমরা একই সময়ে আমাদের মাথায় চারটি বিষয়কে রাখতে পারি।
২. নিজেকে আরও সফল করে তুলুন
তালিকাটি আক্ষরিক অর্থেই আপনাকে সফল করে তুলতে পারে এবং এটিই হতে পারে বেশি কার্যকর। মনোবিজ্ঞানী জর্ডান পিটারসন দেখিয়েছেন যে, শিক্ষার্থীরা একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে তাদের পারফরমেন্স ভালো হয়। তাই একটি কলম নিন, সাথে এক টুকরো কাগজ। নিজের লক্ষ্যগুলো লিখতে শুরু করে দিন।
৩. অর্থ সঞ্চয় করুন
নিজের অর্থ সঞ্চয়ের বিষয়ে ভাবতে হবে। অর্থাৎ কোথায় গেলে আপনার জন্য সাশ্রয় হবে সেটিও জানা থাকা উচিত।
তাই ধরুন শপিংয়ে যাবেন, তাহলে লিখে ফেলুন কি কি কিনবেন। তারপর দেখুন, কোথায় সেটা আপনার জন্য সাশ্রয়ী হবে। এটি আপনাকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় থেকে রক্ষা করবে।
৪. আত্ম-সন্দেহ থেকে মুক্ত থাকুন ও আত্মবিশ্বাসকে আরও জাগ্রত করুন
ধরুন, হঠাৎ যদি মনে হয় যে জীবন আপনি পার করছেন তা যথেষ্ট ভালো নয়, তাহলো একটি সঠিক তালিকাই আপনাকে সে পরিস্থিতি থেকে বের করে নিয়ে আসতে পারে। আপনি আপনার ছোট বড় সব অর্জনগুলো তালিকায় তুলে ফেলুন। দেখবেন সত্যিই কি দারুণ সময় গেছে আপনার। মানুষ এ আত্মবিশ্বাস নিয়েই সমস্যায় ভোগে। তাই এ তালিকাটি করুন সেটি যে ধরণের সাফল্যই হোকনা কেন। এরপর দেখুন নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস আরও কিভাবে বাড়ে।
৫. নিশ্চিত করুন যে কোনো ভুল করছেন না
এটি আপনাকে কোনো বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে। এ ধরণের একটি চেক লিস্ট তাই জরুরি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করুন। এ সময় লিখে ফেলুন কি কি দরকার। দেখবেন দারুণ পরিকল্পনা হয়ে যাচ্ছে।
৬. সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় স্থির থাকতে নিজেকে সহায়তা করুন আমাদের মস্তিষ্ক অনেক সময় মনে করিয়ে দেয় যে কোন কাজগুলো শুরু করেও আমরা শেষ করিনি। আর এ কারণে যখন আপনি মনোযোগ দিয়ে কোনো কাজ করছেন তখন দেখবেন আরেকটি বিষয় মনে এসে আপনার কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে দিচ্ছে। এজন্য মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, কোনটা করবেন তা লিখে ফেলুন এবং সে অনুযায়ী কাজ করুন।
৭. যে জিনিসগুলো আপনাকে দমিয়ে রেখেছে সেগুলোর মুখোমুখি হোন যেসব বিষয় আপনাকে এগুতে দিচ্ছেনা বা দমিয়ে রাখছে সেগুলোর মুখোমুখি হোন। হয়তো মনে হবে, বিষয়টি সুখকর নাও হতে পারে। তারপরেও মোকাবেলা করুন। দেখবেন, শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্টিই আসবে ।
লেখক, রচনা সাহিত্যিক এবং উপ-পরিচালক (জনসংযোগ), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।