হালদায় দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দাবি
আমির হামজা, রাউজান: দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় প্রতিনিয়ত ভেসে উঠছে মৃত মা মাছ ও ডলফিন।
গত এক সাপ্তাহে হালদা নদীতে পাঁচটি মা মাছ ও একটি অতিবিপন্ন প্রজাতির একটি মিঠাপানির ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। এতো কমসময়ে মা মাছের এতো মৃত্যু উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ রয়েছে, শাখা খাল দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ও হাটহাজারীর বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে এতে দূষণ ও মৎস্য শিকারীদের অপতৎপরতায় মা মাছের মৃত্যু ঘটছে। এসব শিল্প কলকারখানার বর্জ্য হালদার জীববৈচিত্র্য ব্যাপক হুমকির মুখে পড়ছে।
তাছাড়া নদীর ফটিকছড়ির ভূজপুর ও হারুয়ালছড়ি এলাকার দুই রাবার ড্যামে ৬ মাস ধরে জমে থাকা রাসায়নিক ও কেমিক্যাল নদীর পানির সাথে মিশে হালদার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। ফলে মরছে মা মাছ ও ডলফিন। সর্বশেষ গত রবিবার নদীর রাউজান অংশের আজিমের ঘাটে একটি মৃত কাতলা ভেসে উঠে।
শুধু এটি নয়, গত এক সপ্তাহে নদীর রাউজান ও হাটহাজারী অংশে বড় আকৃতির বেশ কয়েকটি কাতলা মা মাছ ও একটি অতিবিপন্ন প্রজাতির একটি মিঠাপানির ডলফিন ভেসে উঠেছে বলে জানিয়েছেন ডিম আহরণকারীরা।
তাদের দাবি আরও অনেক মৃত মা মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। নদীর কিনারায় যেসব মৃত মা মাছ দেখা যাচ্ছে সেসব উদ্ধার করা হচ্ছে।
এদিকে হলদা ও কর্ণফুলী নদী দূষণের উৎসসমসূহ চিহ্নিতকরণে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ২৩ জুন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর দপ্তর কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ২৩ জুন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পরিদর্শন প্রতিবেদন, হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানি দূষণের উৎসসমূহ চিহ্নিতকরণ ও মতামত অত্র কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত আর জোয়ার-ভাটায় দূষিত পানি নেমে গেলে নদী কিছুটা দূষণমুক্ত হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে হালদা নদীর ভয়াবহ দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, রবিবার হালদা নদীর আজিমারঘাটে একটি মৃত কাতলা মা মাছ ভেসে ওঠে। মাছটির দৈর্ঘ্য ১১৮ সেমি. ও ওজন প্রায় ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম। উল্লেখ্য গত ২৮শে জুন শুক্রবার হালদা নদীর উত্তর মাদার্শার কুমারখালী ঘাটে একটি মৃত কাতলা মা মাছ ও এর কিছুটা সামনে সুলতানা বাপের ঘাটে আরেকটি মৃত কাতলা মা মাছ ভেসে ওঠে। বিগত এক সপ্তাহে হালদা নদী থেকে ৫টি মৃত মা মাছ ও ১ টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়েছে। যা হালদা নদীর জলজ বাস্তুতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। হালদায় বর্তমানে মনুষ্যসৃষ্ঠ ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড যেমন: শাখাখালের মাধ্যমে হালদা সরাসরি ফেলা হচ্ছে ট্যানারীর বিষাক্ত বর্জ্য, ও অন্যান্য শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, পোল্ট্রি বর্জ্য, গৃহস্থালী ও মানববর্জ্য, হালদা ও শাখাখালে অবৈধভাবে জাল, বঁড়শি ও বিষ ব্যবহার করে মাছ নিধন, অবৈধ বালু উত্তোলন ইত্যাদি) বেড়ে চলছে যার সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে হালদা জলজ বাস্তুতন্ত্রে। এমতাবস্থায় হালদা নদীকে মা মাছ, ডলফিন ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল করতে জরুরি ভিত্তিতে হালদায় দূষণ উৎসগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে তদন্ত কমিটিতে শীর্ষস্থানে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের রিসার্চ অফিসার আশরাফ উদ্দিন বলেন, তদন্ত সম্পন্ন হয়নি, ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ বা তার পরের সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদী।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আনোয়ার ফেরদৌস বলেন, হালদা ও কর্ণফুলী দূষণের উৎস খুঁজে বের করতে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।