খবরাখবর

দুই যুগের বেশি সময় পর কারাগার থেকে বের হলেন শিবির নেতা নাছির উদ্দিন

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি: দুই যুগের বেশি সময় পর মুক্তি পেলেন শিবির ক্যাডার নাছির উদ্দিন। ১১ আগষ্ট সন্ধ্যায় তিনি চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তিপান।

শিবির ক্যাডার নাছির নাজিরহাট মন্দাকিনী এলাকার মৃত এলাহী বক্সের পুত্র। ১৯৯৮ সালের ৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন নাছির। ডাবল, ট্রিপল খুনসহ ৩৬টি মামলার আসামি ছিলেন তিনি।

জানা যায়, শিবির ক্যাডার নাছিরের রাজত্ব ছিল পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে। এলাকা ভিক্তিক নিয়ন্ত্রনে ছিল তার কর্মী বাহিণী। শত শত যুবক ছিল তাঁর বাহিণীর সদস্য।

১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে শুরু হয় তাঁকে গ্রেফতার অভিযান।
১৯৯৭ সালের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম কলেজসংলগ্ন এলাকায় নাছিরকে ধরতে একবার বড় অভিযান চালানো হয়। সে সময় নাছিরের লোকজন ভারী অস্ত্র দিয়ে কাউন্টার অ্যাটাক করেছিল। নাছির বাহিণী তখন প্রায় দেড় হাজার গুলি ছোড়ে।

পুলিশের দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরও তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। একই বছরের শেষের দিকে আবারও সেখানে অভিযান চলে।

ওই অভিযানে ৭/৮টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। সে সময় বিডিআর সেলিমসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলে আবারও ফসকে যান নাছির। এভাবে আরো বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েও তাঁকে গ্রেফতার সম্ভব হয়নি।

শেষে ১৯৯৮ সালের ৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন নাছির। তখন তিনি টগবগে এক যুবক। ১৯৯৮ সালের ৬ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশ সংবাদ পায় চট্টগ্রাম কলেজের শেরে বাংলা ছাত্রাবাসের সামনে শিক্ষকদের পরিত্যক্ত ভবনে তৎকালীন অভিযুক্ত নাছির আত্মগোপন করে আছে। কক্ষের বাইরে তালা লাগিয়ে ভেতরে নাছিরকে নিরাপদে রাখতো তার অনুসারীরা।

এ তথ্যের সত্যতা পেয়ে সাদা পোশাকে ভবনের চারপাশে অবস্থান নেন গোয়েন্দা পুলিশ। বিকেল সাড়ে ৪টায় কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে নাছির জানালা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে।

এসময় তাকে ঝাপটে ধরেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার আতিকুর রহমান চৌধুরী। পুলিশ তাকে আটক করতে সক্ষম হয়।

নাছিরকে আটকের ঘটনা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে তার অনুসারীদের কাছে। চট্টগ্রাম কলেজের শেরে বাংলা ছাত্রাবাস থেকে শিবির ক্যাডাররা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশও পাল্টাগুলি ছুঁড়ে।

পুলিশের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনায় একাধিক পুলিশ আহত হন। এরপর নাছিরের অনুসারীরা চকবাজারের আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর করে।

গ্রেপ্তারের পর প্রথমে চট্টগ্রাম কারাগারে ও পরে নোয়াখালী কারাগারে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে।

নাছিরের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী, হাটহাজারী ট্রিপল মার্ডার, চট্টগ্রাম পলিটেকনিকে জমির উদ্দিন হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন সময় ৩৬টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে বেশির ভাগ মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হয়নি।

প্রায় ২৬ বছর পর মুক্তি মিলল নাছিরের। চট্টগ্রাম কারা ফটক থেকে তাঁকে বরণ করতে পরিবারের সদস্যসহ শতাধিক কর্মী সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।

নাছিরের ছোট ভাই জিয়া উদ্দিন বলেন, অনেক বছর পর আমার ভাই আমাদের মাঝে এসেছেন। আমরা অনেক আনন্দিত।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button