খবরাখবর

ফটিকছড়িতে সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বন্যা পরিস্থিতি অবনতি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ফটিকছড়ি: ভারত সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকাসহ ফটিকছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

পানি বন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। স্মরণকালের এ ভয়াবহ বন্যার সম্মূখীন ফটিকছড়িবাসী।

ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গত কয়েকদিন ধরে উপজেলায় বন্যার সৃষ্টি হয়। গতকাল থেকে বন্যা ভয়াবহ রুপ নেয়।

হালদা, সর্তা খাল, ধুরুং খাল,ফটিকছড়ি খাল,মন্দাকিনী খাল,গজারিয়া খাল,তেলপারি খাল,কুতুবছড়ি খাল,লেলাং খাল সহ বিভিন্ন খালের বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করছে এলাকায়।

বিভিন্নস্থানে ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে।

বিশেষ করে উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাগানবাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড প্লাবিত হয়। এলাকার শত শত বাসিন্দা পানি বন্দী হয়ে পড়ে। অনেক পরিবারকে সেনাবাহিনী,বিজিবি ও সেচ্ছাসেবক কর্মীরা উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসে।

বিভিন্ন স্থানে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাগণ। শত শত বাড়ি ঘর এখন পানির নিচে। খাবার,ঔষদ ও পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে এসব এলাকায়।

উপজেলার ফটিকছড়ি পৌরসভা,নাজিরহাট পৌরসভা,সুন্দরপুর,পাইন্দং,হারুয়ালছড়ি,সুয়াবিল দাঁতমারা,বাগানবাজার,নারায়ণহাট, ভূজপুর,লেলাং,সমিতিরহাট,রোসাংগিরী,জাপতনগর,বক্তপুর,নানুপুর,ধর্মপুরসহ উপজেলার সব ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

এশিয়া মহাদেশের অন্যতম আধ্যাত্বিক কেন্দ্র মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফসহ আশে পাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম-খাগগছড়ি সড়ক, গহিরা-হেয়াকো সড়ক, নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক, কাটিরহাট-সমিতিরহাট-আজাদীবাজার, সমিতিরহাট-নানুপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানিতে ডুবে আছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এসব সড়কের বিভিন্ন স্থানে।

এছাড়া বিভিন্ন গ্রামীন সড়ক পানিতে ডুবে এবং পানির স্রোতে ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

হালদার উপর নির্মিত নারায়নহাটের কাঠের ব্রীজটি পানির স্রোতে ভেসে গেছে বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন হাটবাজারে বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ব্যবসা বাণিজ্য।

নারায়ন হাট ইউনিয়নের বাসিন্দা দিদারুল আলম জানান,নারায়ণহাটের বন্যা পরিস্হিতি খুবই খারাপ।আশে পাশের গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি-ঘরে পানি।হাপানিয়া-নারায়ণহাট কাঠের ব্রীজ ভেঙ্গে গেছে।পানির পরিমাণ আরও বাড়ছে।পুরো ইউনিয়ন বিদ্যুৎ ও যোগাযোগবিহীন।

সুয়াবিল এলাকার মোহাম্মদ আরমান উদ্দিন জানান,সুয়াবিলে বন্যা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ।বিশেষ করে বৈদ্দ্যরহাট কাঁচা বাজার সহ বারমাসিয়া অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।অবস্থা আরো অবনতি হওয়ার আশংকা রয়েছে।

রোসাংগরি এলাকার নাজিম উদ্দিন জানান,নির্ঘুম রাত কাঠিয়েছি। আমাদের ঘরসহ এলাকার অনেক ঘরে পানি ডুকেছে।
ধর্মপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রেজাউল করিম লিটন বলেন সর্তা নদীর বাঁধ উপচে এলাকায় পানি আসছে। বিভিন্ন বাড়ি ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।

নাজিরহাট এলাকার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন,আমাদের এলাকায় হালদা নদীর বাঁধ উপচে পানি আসে।শত শত ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করে।

পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত একর চাষের জমি,পুকুর,মাছের প্রজেক্ট,পোল্ট্রী ফার্ম।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন,উপজেলা চাষাবাদদের ব্যপক ক্ষতি হয়েছ। পানি সরে গেলে ক্ষতির পরিমান নিরুপণ সম্ভব হবে।

এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকায় উদ্ধার অভিযান ও সহযোগীতা করে চলছেন উপজেলা প্রশাসন,সেনাবাহিনী,বিজিবি,
মাইজভান্ডারি গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ,ফটিকছড়ি ব্লাড ডোনার্স ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন।

উপজেলায় দুই পৌরসভাসহ প্রায় ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১৯ হাজার ৫৮০ পরিবারের প্রায় ১ লাখ ২ হাজার জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নিয়ন্ত্রন কক্ষে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প অফিস কর্মকর্তা ফরমান হোসেন।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে বন্যা, জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধ্বস পরিস্থিতির জন্য খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।বন্যা কবলিত এলাকাবাসীর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক গঠিত হয়েছে ২০ টি ইউনিয়ন মেডিকেল টীম ও ৫ টি সদর মেডিকেল টিম। নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃক টীম গঠন করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,ফটিকছড়ি উপজেলার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন। ইতিমধ্যে উত্তর ফটিকছড়ির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়কেরও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। অনুগ্রহ করে প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকার বন্যার্তদের পাশে মানবিক সাহায্য নিয়ে পাশে দাড়ানোর অনুরোধ করছি।

তিনি আরো বলেন,বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শন করেছি। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খবরাখবর রাখছি। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃক টীম গঠিত হয়েছে।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button