খবরাখবর

বন্যা দুর্গত ফটিকছড়িবাসীর পাশে বিভিন্ন সংগঠনের অভাবনীয় সাড়া

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ফটিকছড়ি: বন্যা দুর্গত ফটিকছড়িবাসীর পাশে দাড়িয়ে দেশের বিভিন্নসামাজিক,রাজনৈতিক,ধর্মীয় ও মানবিক সংগঠন এবং সেচ্চাসেবক,ব্যক্তিবর্গ নজির সৃষ্টি করেছেন।

বন্যায় পানিবন্দীদের উদ্ধারেরর পর ত্রাণ বিতরণে কার্যক্রম করে চলছেন এসব সংগঠন ও মানবিক কর্মীবৃন্দ।

ব্যন্যা সৃষ্টি হওয়ার দিন থেকে শত শত বিভিন্ন যানবহন যোগে ফটিকছড়িতে আসে এসব সংগঠন। এখনো এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে এসব ত্রাণ বিতরণে উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয়র মানবিক সংগঠন ও সেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। কোন এলাকার মানুষজন বেশি পাচ্ছেন কোন কোন এলাকার মানুষজন পাচ্ছেননা।

অনেক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান,যেসব অঞ্চলে পানির জন্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সেসব এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। সড়কের পাশে যেখানে সুবিধা হচ্ছে সেখানে দিয়ে দিচ্ছে।

সরেজমিনে নাজিরহাট নাজিরহাট এলাকায় দেখা যায় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক দিয়ে অসংখ্য ত্রাণের গাড়ি আসছে। অনেকে বিভ্রান্তিতে পড়ছে কোন দিকে যাবে কোন এলাকায় দেবে তা নিয়ে।

নাজিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র
লায়ন এ কে জাহেদ চৌধুরী বলেন,
উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি টিম নাজিরহাট নতুন ব্রিজে থাকলে সেখান থেকে তাদের ত্রাণ গুলো গ্রহণপূর্বক প্রয়োজনীয় জায়গায় পাঠানো যেতে পারে।

শিক্ষক বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন,
দূর দূরান্ত থেকে আগত ত্রাণবাহী গাড়ি সমূহ বন্যাকবলিত এলাকা সুনির্দিষ্ট কেউ চিনেন’না৷তাই ঘন্টার পর ঘন্টা ফটিকছড়ি হাইওয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকলে অনেকে সিন্ডিকেট করে বন্যাদূর্গত এলাকায় পৌঁছে দিবে বলে ত্রাণ সমূহ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন বা নিয়ে যেতে পারেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ মাননীয় উপজেলা ননির্বাহী কর্মকর্তাসহ সেচ্ছাসেবী ভাইরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্যে বিনীত অনুরোধ রইল।

সাংবাদিক এমরান ফরহাদ বলেন,
বানবাসির খবর শুনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা হতে এত ত্রাণবাহি গাড়ি ফটিকছড়িতে এসেছে সেই জন্য সকল ভাইদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি । কিন্তু দূঃখের সাথে বলতে হয়, ত্রাণ বন্টনে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিয়েছে । তবে বিভিন্ন স্পটে উপস্থিত হয়ে সহযোগিতা করেছেন আমাদের সহকর্মীরা ( ফটিকছড়ির সাংবাদিকরা)।

মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের গাউছিয়া হক কমিট বাংলাদেশ,শাহানশাহ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ট্রাষ্ট,আহমদিয়া মনজিল,মঈনিয়া মনজিল,দপ্তরে মাইজভাণ্ডারী আশেকান সোসাইটি,ইত্তেহাদে ওলামায়ে তরিকায়ে মাইজভান্ডারী সহ বিভিন্ন মনজিলের পক্ষে,বি এন পি,জামায়াত,বি এস পিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন,গাউছিয়া কমিটি,ছাত্র সেনা,এশিয়ার নারী ও শিশু অধিকার ফাউন্ডেশন,হাটহাজারী সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস্ ফোরাম(চবি), পার্বতী ১০১ তম ব্যাচ,আল মানহিল,রাউজান হলদিয়া উত্তর সর্তা লস্কর উজীর বাড়ির শহীদ মন্নান স্মৃতি সংস্থা,এস এম সি পরিবার,ওয়েল ফেয়ার সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের পক্ষে ত্রাণ নিয়ে আসে। এখনো অনেক সংগঠন ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।

গাইছিয়া হক মনজিলের অফিস কর্মকর্তা দিদারুল আলম ও বটন কুমার দে জানান,ফটিকছড়িবাসির জন্য মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ ‘গাউসিয়া হক মনজিল’ প্রতিষ্ঠিত ‘শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক:) ট্রাস্ট’ এবং মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ-কেন্দ্রীয় পর্ষদ ও শাখা কমিটি সমূহের এর ব্যবস্থাপনায় দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফটিকছড়ি অঞ্চলের বন্যায় উপদ্রুত পানিবন্দি মানুষদের মাঝে খাবার বা তবারুক বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

মানবিক সংগঠন আল মানহিলের পক্ষে জানান,চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে গত দুদিন ধরে পানিবন্দি বিপদগ্রস্ত মানুষদের মাঝে আমাদের রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার বিতরণ চলছে। আপনারাও আমাদের সাথে শরিক হতে পারেন এই মহান কর্মযজ্ঞে।

সমাজকর্মী হাসান চৌধুরী বলেন,উত্তর ফটিকছড়ির বাগানবাজার মুসলিম পাড়া, রবারবাগান সংলগ্ন এলাকার ৪/৫ শত পানিবন্দী মানুষের পাশে ঐতিহ্যবাহী সামাজিক সংগঠন এস এম সি পরিবারের সদস্যরা তৃতীয় দিনের কার্যক্রম নিয়ে উপস্থিত হয়ছে।

মানবধিকারকর্মী আরফান উল্লাহ চৌধুরী আপেল বলেন,এশিয়ার নারী ও শিশু অধিকার ফাউন্ডেশনের ত্রাণ নিয়ে এখনো মাঠে আছি। ফটিকছড়ির অলিতে গলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণের গাড়ি নজরে আসলো। আলহামদুলিল্লাহ।

সাংবাদিক মওলানা এম বেলাল উদ্দিন বলেন,রাউজান হলদিয়া উত্তর সর্তা লস্কর উজীর বাড়ির,শহীদ মন্নান স্মৃতি সংস্থা’র উদ্যোগে ফটিকছড়ির বন্যার্তদের ত্রান বিতরণ চলছে।

এদিকে উদ্ধার কাজে সহযোগীতা ও ত্রাণ বিতরণে এসব সংগঠন এবং সেচ্চাসেবকদের প্রতি উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন।

উপজেলা নির্বাহী কমর্কর্তা, মোজাম্মল হক চৌধুরী বলেন,ফটিকছড়ি উপজেলার দূর্গত মানুষের জন্য দেশবাসীর দুই হাত ভরে সাহায্য এক অভাবনীয় মানবিক নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছে। সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

মোহাম্মদ মাসুদ নামের একজন বলেন,ফটিকছড়ির বিভিন্ন ইউনিয়ন মানুষের পাশে বিপদের সময় যেভাবে মানুষরা ত্রাণ দিয়ে সহায়তা করছে সেটা কখনো ভুলিবার নয়। ধন্যবাদ জানাই তাদের সকলকে এভাবে ফটিকছড়ি মানুষদের পাশে দাড়ানোর জন‍্য।

মোহাম্মদ রশিদ উদ্দিন বলেন,মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর কাছে ফটিকছড়ি বাসী ঋণী।

তবে এখনো অনেক স্থানে তেমন ত্রাণ পৌছঁছেনা বলে জানান স্থানীয়রা।

নাজমুল হাসান নামের একজন জানান,
ত্রাণ বিতরনের ক্ষেত্রে যেটা দেখলাম, এক ঘরে ৫ জন লোক আছে তারা সবাই পাচ্ছে। আর আর এক ঘরের কেউ পাচ্ছেনা। বিষয়টি নিয়ে সবাই গুরুত্ব দিবেন।

সুবর্ণ দাস বলেন,যাদের এ সহায়তা দরকার তারা যেন তা নিতে পারে সেটাও নিশ্চিত করা দরকার,দেখা যায় অসহায়, দুস্থ মানুষ সামান্য কিছু পেলেও সব যায় রাঘব বোয়ালদের পকেটে। অনেকে তাও পায় না।

তৌহিদুল আলম চৌধুরী বলেন,দাঁতমারা ইউনিয়ন আয়তনের দিক দিয়ে বড় সে হিসেবে বরাদ্দ কম, যা আসছে বন্টন সুনিশ্চিত করতে হবে।

হেলাল আহমেদ বলেন,আমার জানা মতে, হারুয়ালছড়ির ৯ নং ওয়ার্ড ( পাটিয়ালছড়ি) তেমন কোনো এাণ সহায়তা পৌঁছাতে পারেনি। গতকাল রাতে সেখান অনেক কষ্ট করে গেছি।

মেহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন,
নারায়ণ হাট,জমিদারপাড়াসহ আশেপাশে এলাকাসমূহ ত্রাণ দেওয়া হোক।
ওসমান গণি বলেন,ফটিকছড়িতে যারা ত্রান বিতরন করতেছেন দয়া করে তেলে মাথায় তেল দিয়েন না।

এত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফান্ডিং করেছেন চেষ্টা করেন দুর্গম আর বঞ্চিতদের হাতে আমানতগুলো পৌঁছে যায়। আপনাদের নিজ হাতে কথা বলে ত্রান তুলে দেন তাইলে সুষম বন্টন হবে।

মোহাম্মদ তৌসিফ চৌধুরী রুবেল বলেন,
পানি কমলে ত্রান আরো বেশি দরকার হবে,সবাই সে দিকে খেয়াল করবেন,
বর্তমানে ভূজপুরে বেশি ত্রানের দরকার যারা ত্রাণ নিয়ে আসতেছে তারাই ভূজপুরের দিকে চলে যান।

আব্দুল মুমিন সবুজ বলেন,উত্তর ফটিকছড়ি হাঁপানিয়া, জমিদার পাড়া,ফকিরপাড নারায়ণহাটের কিছু অংশ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ত্রাণ পৌঁছায় নাই।

ত্রাণ বিতরণে উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করার জন্য ও
ত্রাণ বিতরণে চাহিদার সঠিক তথ্যের জন্য
উপজেলা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে
ইঞ্জিনিয়ার মো.ইনামুল হকের সাথে যোগোযোগ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসের কার্যলয় থেকে বলা হচ্ছে। দশ ইঞ্জিনিয়ার মো.ইনামুল হক জানান,বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগীতা সন্তুষ্ট জনক।

উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে ইতোমধ্য প্রায় চার হাজার ত্রাণ প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান,তৃতীয় লিঙ্গের(হিজড়া) দলও বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করছেন।

উপজেলা নির্বাহী কমর্কর্তা, মোজাম্মল হক চৌধুরী বলেন,ত্রাণ বিতরণ এর ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভালো এমন জায়গার মানুষ বারবার পেলেও অনুন্নত যোগাযোগ এর জায়গায় কম যাচ্ছে।

অনুন্নত যোগাযোগ এর জায়গায় পৌঁছুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরাসরি এবং উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছে।

তাই উপজেলা প্রশাসন এর সাথে সমম্বয় করে ত্রান সামগ্রী বিতরণ এর জন্য অনুরোধ করছি।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button