খবরাখবর

ফটিকছড়িতে বন্যা পরবর্তী সড়ক সেতুর বেহাল দশা

সড়ক সেতু সংস্কারে বিভিন্ন সংগঠন ও এলাকাবাসী

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ফটিকছড়ি: ফটিকছড়িতে ভয়াবহ বন্যায় সড়ক সেতুর ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক সেতু দিয়ে চলাচলে দুর্ভোহ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী। বেশ কিছু সড়কে যোগোযোগ বিচ্ছিন্নও রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গ্রামীণ সড়ক সেতু সংস্কারে এগিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন,সেচ্ছাসেবক ও এলাকাবাসী।

বাগানবাজার,দাঁতমারা,নারায়নহাট,হারুয়ালছড়ি,সুন্দরপুর,পাইন্দং,সুয়াবিল,ভুজপুর ইউনিয়নসহ উপজালার সব কটি ইউনিয়নে বন্যায় সড়ক সেতুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি কমার সাথে সাথে ফুটে উঠেছে এসব ক্ষতির চিত্র।

চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক,গহিরা-হেঁয়াকো সড়ক,কাজিরহাট-নাজিরহাট সড়কসহ বিভিন্ন প্রধান সড়কের বিভিন্নস্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। হালদার উপর নির্মিত নারায়নহাটের কাঠের ব্রীজটি পানির স্রোতে ভেসে গেছে।

এছাড়া বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বিভিন্ন সড়কের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এতে চলাচলে বেড়েছে জনদুর্ভোগ।

উপজেলার দাঁতমারায় ইউনিয়নের স্থানীয় ৩ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোঃ পারভেজ বলেন, আমার ওয়ার্ড নিচিন্তায় কয়েকটি সড়কে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যেহেতু পানির স্রোতও ছিল বেশি। তার কারণে দাঁতমারা ইউপির বেতুয়া, হাসনাবাদ, সাদিনগর, বাংলাপাড়া, বালুটিলায় সড়কে বেহাল অবস্থা হয়েছে।

উপজেলা এলজিইডির প্রাথমিক তথ্য বিবরনীতে মতে, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার ১৪৩টি সড়ক, ৩০টি ব্রিজ, ১২০টি বক্স কালভার্ট, ৭৪ টি স্লাব কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের প্রায় ২২ কি.মি. উপজেলা সড়ক, ৩৭ কি.মি. ইউনিয়ন সড়ক, ২৬৮ কি.মি. গ্রামীণ সড়ক রয়েছে।

এছাড়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন ৪টি সড়ক ও ১০টি কালভার্টসহ সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ব্রিজ, কালভার্ট, ছোট-বড় কার্পেটিং ও ব্রিক সলিংসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী তন্ময় নাথ বলেন, এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা প্রাথমিক হিসাব। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হবে।

গ্রামীণ বিভিন্ন সড়ক সেতু সংস্কারে এগিয়ে এসেছি বিভিন্ন সংগঠন,এছাড়া সেচ্ছাশ্রমেও সড়ক সেতু সংস্কারে কাজ করছেন এলাকাবাসী।

মাইজভাণ্ডার শরিফ গাউসিয়া হক মনজিল প্রতিষ্ঠিত ‘ত্রাণ ও দুর্যোগ মোকাবেলা সেল’র সেবককগণ উপজেলার হারুয়ালছড়ি ও ধর্মপুর এলাকায়সহ বিভিন্ন স্থানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও সেতু সংষ্কার করেন। বন্যা দুর্গত এলাকায় এসব মানবিক পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান ট্রাষ্টের প্রশাসনিক ও সমন্বয় কর্মকর্তা তানভীর হোসাইন।

দাঁতমারা ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়কটি ভাঙনের কারনে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ওই গ্রামের হাজার হাজার মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ফলে সড়কটি মেরামতে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। স্বেচ্ছাশ্রমে তারা সড়কটি মেরামত করেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, এলাকায় সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব পূর্ণ পরিবেশে উৎসবের আমেজে এটি মেরামত কাজ চলে। যে যেভাবে পেরেছে সেভাবেই কল্যাণমূলক এই কাজে অংশ নিয়েছেন। কেউ বাঁশ, কেউ গাছ, কেউ বালির বস্তা আবার কেউ দিয়েছেন স্বেচ্ছাশ্রম। এভাবেই সবাই এগিয়ে আসেন। বহু লোক এতে অংশ নেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক জীবন মুছা বলেন ইসলামপুর গ্রামে এলাকাবাসীর উদ্যেগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করা হয়েছে। এভাবে সকলেই যদি নিজ নিজ এলাকার ছোট ছোট ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক গুলো নিজেদের উদ্যেগে মেরামত করতে পারে তাহলে আপাতত অন্তত জনদুর্ভোগ কিছুটা হলেও নিরসন হবে।

ভুজপুর ইউনিয়নের বারমাসিয়া চৌমুহনী থেকে নালিরকুল, নন্দী পাড়া, নোয়াপাড়া সড়ক ও দাইয়া পাড়া সিদ্দিক বাপের বাড়ির সড়কটিও গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে চলাচলের উপযোগী করেছেন।

এছাড়া,গাউছিয়া কমিটিসহ আরো বিভিন্ন সংগঠন ও এলাকাবাসীর উদ্যেগে বিভিন্ন সড়ক সেতু সংস্কারের মাধ্যমে চলাচলের উপযোগী করেছেন।

উল্লেখ্য,অতি বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে গত সপ্তাহে মারাত্মক বন্যায় উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা প্লাবিত হয়ে পানি বন্দি হয়ে পড়ে ৩ লাখের অধিক মানুষ। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় শতশত মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলী জমি, সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট, বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ মানুষের জান-মালের।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button