খবরাখবর

খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষে নিহত ৩ আহত-২০, ১৪৪ ধারা জারি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালায় ও জেলা সদরে সংঘাতের জেরে ৩জন নিহত ও ২০জন আহতের ঘটনায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি পৌর শহর ও জেলা সদরে শুক্রবার দুপুর ২ টা থেকে রাত ৯ পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো.সহিদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের সহিংসতা রোধে এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চন্দ্র রায় স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকবিলায় ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ সালের ১৪৪ ধারা মতে নিষেধেজ্ঞা আরোপ করলাম।

জানা যায়, বুধবার সদর উপজেলার বাসিন্দা মামুন(৩০) নামের এক ব্যক্তিকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মারধরে মারা যাওয়ার ঘটনার জের ধরে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় দীঘিনালায় বাঙালিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় পাহাড়িরা মিছিলে বাঁধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। একপর্যায়ে পাহাড়ি ও বাঙালিদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে শতাধিক দোকান পুড়ে যায়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে শহরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। রাতভর সেখানে আতঙ্ক বিরাজ করে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের নারানখখাইয়া, স্বনির্ভর এলাকায় ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ধনঞ্জয় চাকমা দীঘিনালায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংঘর্ষে মারা যান। অপর দুজনকে আহত অবস্থায় রাতে খাগড়াছড়ি সদর থেকে হাসপাতালে আনা হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, রাতে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ১৬জনকে আনা হয়। তারা বেশিরভাগই সদর উপজেলা থেকে রাতে এসেছেন।

এর মধ্যে জুনান চাকমা(২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০) নামে ৩জন মারা যায়। নিহত ব্যক্তিদের মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্ত শেষে বলা যাবে। বর্তমানে হাসপাতালে আরও ৯জন চিকিৎসাধীন আছেন।

রিপল বাপ্পি চাকমা আরও জানান, রাতেই ৪জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে একজন বাঙালি রয়েছেন। আহত বাকি ৯পাহাড়িকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিন জনের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান বলেন, রাতে গোলাগুলি হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩জনের লাশ পাওয়া গেছে। মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। আহত হয়েছেন ১০থেকে ১২ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ সুপারসহ ঘটনাস্থল দীঘিনালায় যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালছে।

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, আগুনে দীঘিনালা বাসস্টেশন ও লারমা স্কয়ার এলাকায় ১০২টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে চাকমা সম্প্রদায়ের ৭৮টি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের ২৪টি দোকান রয়েছে। ভাঙচুর হয় ৪টি দোকান।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মিলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন।

বর্তমানে পুরো জেলায় জনমনে আতঙ্ক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজিত পাহাড়ি লোকজন রাস্তায় গাছ কেটে এবং চেঙ্গী নদীর জন্য নির্মিত ব্লক ফেলে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। ফলে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পানছড়ি ফায়ার সার্ভিসের অফিস ভাংচুর ও সেনাবাহিনীর টহল গাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখতে দেখা গেছে।

খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা ও পানছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীকে টহল দিতে দেখা যাচ্ছে।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button