কেক বানিয়ে জনপ্রিয় রাঙ্গুনিয়ার উদ্যোক্তা শারমিন
অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই প্রতিনিধি: নিজ হাতে বিভিন্ন ডিজাইনের কেক বানিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন শারমিন। তিনি পেশায় একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক।
তার স্বামী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলামের অনুপ্রেরণা নিয়ে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে হরেক রকমের বিভিন্ন ডিজাইনের কেক বানিয়ে কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়াতে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি তিন সন্তানের জননী সংসার, ঘর সামলে ইতিমধ্যে কেক বানিয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন।
বর্তমানে অবসর সময়ে কেক বানানোতেই তাঁর সময় কেটে যায়। প্রতি মাসেই তিনি ৩০/৪০টির বেশী কেকের অর্ডার পেয়ে থাকেন এবং ক্রেতাদের ডিজাইন অনুযায়ী তিনি হুবহু কেক বানিয়ে দিতেও পারদর্শী। তার বানানো অর্ডার করা কেকগুলো সংগ্রহ করতে দুরদুরান্ত থেকে ক্রেতারা ছুটে আসেন।
- তিনি বিভিন্ন ফ্লেভারের কেক যেমন বাটার স্কচ, চকোলেট, ভ্যানিলা, অরেঞ্জ, লেমন, পানদান, ম্যাংগো, স্ট্রবেরী ইত্যাদি তৈরির পাশাপাশি কালোজাম, চমচম, রসমলাইসহ বিভিন্ন ডেজার্ট আইটেমস বানাতেও বেশ পারঙ্গম।
এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে শারমিন আকতার জানান, ২০১৫ সাল থেকে তিনি বাসায় খাওয়ার উদ্দেশ্যে কেক বানানো শুরু করেন। পরে তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিজ হাতে কেক বানিয়ে উপহার দেন। সেই ঘরে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের কেক খাওয়ার পর অনেকেই তার প্রশংসা করেন। ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে যখন তিনি রাংগুনিয়ার লিচুবাগানস্হ নিজ বাসায় অবসর সময় পার করছিলেন তখন Sarmeen’s Kitchen নামে একটি ফেসবুক পেইজ খুলে উনার তৈরিকৃত বিভিন্ন কেকের ছবি তিনি সেখানে প্রকাশ করেন।
পেইজ খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি একটি কেকের অর্ডার পেয়ে যান এবং ওই কেক বিক্রির মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু হয়। মাত্র ২৫০ টাকা আয় দিয়ে ব্যবসা শুরু করে বর্তমানে তিনি প্রতি মাসেই প্রায় ৩০টির বেশী কেকের অর্ডার পেয়ে থাকেন। কেক বানিয়ে প্রতি মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন।
এছাড়া গত ৪ বছরে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার কেক বিক্রি করেন। গত ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ১ মাসেই প্রায় ৭০ হাজার টাকার কেক বিক্রি করেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই উনার বানানো কেক এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাইসহ পাশের সব উপজেলায়।
অনেক নারী শারমিন আকতার কে দেখে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন। তিনি কেবল কেক বানিয়ে সীমাবদ্ধ থাকেননি। গত ২০২১ সালের আগষ্ট মাস থেকে বেকিং কোর্স চালু করেন। যেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭০ জনের অধিক নারীকে কেক বানানোর প্রশিক্ষন দিয়েছেন।
- ইতিমধ্যে তার প্রশিক্ষন নিয়ে অনেক নারী স্বাবলম্বীও হয়েছেন। তার অনেক ছাত্রী কেক বানিয়ে বর্তমানে তারাও বেশ আয় করছে।
শারমিনস কিচেনে বেকিং ট্রেনিং নেয়া সোমাদ্রিতা জানান, আমি ফেসবুকে শারমিন আপুর বেকিং কোর্সের বিজ্ঞাপন পেয়ে যোগাযোগ করি। ৫দিনের ট্রেনিং নিয়ে এখন আমি নিজেও একটি পেইজ খুলে ব্যবসা পরিচালনা করছি। আপুর সকল স্টুডেন্টকে আন্তরিকতার সাথে ক্লাস করান এবং ব্যবসার খুটিনাটি শিখিয়ে দেন। উনার শেখানো পথ ধরে আজ আমি সফলভাবে ব্যবসা করছি।
শারমিন আকতার আরো জানান, সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীরা যেন আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করে। সেই লক্ষেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে জানান, আমার একটা বেকিং ষ্টুডিও এবং বেকারি ও পেসট্রি আউটলেট খোলার পরিকল্পনা আছে।
যেখানে ভবিষ্যতে তিনি আরো অনেক পিছিয়ে পড়া নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে কাজ করে যাবেন। চাকুরির পাশাপাশি তিনি এতো কাজ কিভাবে সামাল দেন জানতে চাইলে তিনি জানান, চাকরী শেষে বাসায় ফেরার পর উনি মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেন, এছাড়া সাপ্তাহিক সরকারী ছুটির দিন ও সরকারী বন্ধের দিনগুলোতে তিনি বেকিং কোর্সটা পরিচালনা করেন।
রান্না ও বেকিং এর প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি টিভি রিয়ালিটি শো- সেরা রাধুনী, মার্কস ডের্জাট কুইনসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন রান্না বিষয়ক প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েছেন। এছাড়া দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আইসিআই কর্তৃক ডে লং মাল্টি কুইজিন প্রশিক্ষণেও অংশ নিয়েছেন।