মধ্যনগরে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের লিখে দিলেন শিক্ষিকা, ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ
ফারুক আহমেদ, ধর্মপাশা: সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক বিথী রানীর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়টির ইংরেজি বিষয়ের বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে অবৈধভাবে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার (১ডিসেম্বর) সকালে ওই বিদ্যালয়টির ২নং হলে এই ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ২নং হলের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়ের ওই বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদ রবিবার (১ডিসেম্বর) বিকেলে মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযেগ করেছেন।
মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই বিদ্যালয়টিতে প্রায় ৩০০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। রবিবার (১ডিসেম্বর) সকাল ১১টা থেকে বিদ্যালয়টির চারটি কক্ষে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়।
বিদ্যালয়টির ২নং হলে রবিবার সকাল ১১টার দিকে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেনির ৩৩জন ছাত্রী ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নেয়। ওই কক্ষে দায়িত্বে ছিলেন বিদ্যালয়টির স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদ। কারও কোনোরকম অনুমতি না নিয়ে ২নং কক্ষে সকাল ১১টা বেজে ২০মিনিটের সময় আকস্মিকভাবে ঢুকে পড়েন ওইক বিদ্যালয়টির ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক বিথী রানী।
তিনি এ সময় তার পরিচিত কয়েকজন ছাত্রীকে ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্নপত্রে উত্তর লিখে ও বলে দেন। দায়িত্বপালনরত সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদ এতে প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে বিথী রানী কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
কয়েকজন ছাত্রীকে অবৈধভাবে সহায়তা করায় ২নং হলে অন্যান্য পরীক্ষার্থীরা হট্রগুল ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদ দুইজন পরীক্ষার্থীর খাতা কিছু সময়ের জন্য টেবিলের ওপর রেখে দেন এবং বলেন তোমরা হট্রগুল ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ থামাও, নইলে খাতা দেব না।
কয়েকজন ছাত্রীকে অবৈধভাবে সহায়তা করার কাজে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম সেখানে ছুটে আসেন এবং অনৈতিকভাবে কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে সহায়তা করার কাজে নিয়োজিত সহকারী শিক্ষক বিথী রানীকে এ নিয়ে কিছু না বলে ছাত্রীদের সামনে প্রতিবাদ করা সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদকে অপমানজনক কথা বলে তাকে ২নং কক্ষ থেকে চলে যেতে বললে তিনি অফিসকক্ষ চলে যান। পরে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক হলরুমে ঢুকে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্ঠা করেন।
সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদ বলেন, বিথী ম্যাডাম অবৈধভাবে কয়েকজন ছাত্রীকে ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষায় সহায়তা করেছেন। অনৈতিকভাবে সহায়তা করার প্রতিবাদ করায় আমাকে প্রধান শিক্ষক নানা কটু কথা বলেছেন। আমি এ নিয়ে ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।
সহকারী শিক্ষক বিথী রানী বলেন, আমি সপ্তম শ্রেণিতে ইংরেজি পড়াই। এই হলে কয়ে*কজন ছাত্রীর প্রশ্নে আসা টেবিলটি পূরণ করতে সমস্যা হচ্ছিল। আমি তার উত্তর বলে দিয়েছি। লিখে দেইনি। যদিও কাজটি আমার ঠিক হয়নি, তারপরও নতুন সিলে*বাসে পরীক্ষা হওয়ায় এই কাজটি করেছি। তবে সেখানে থাকা সপ্তম শ্রেণির সকল ছাত্রীকে এই প্রশ্নের উত্তর দেখানোর জন্য বলে আমি কক্ষ থেকে চলে এসেছি।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, আমি সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করিনি। বিথি ম্যাডাম ২নং কক্ষে গিয়ে কয়েকজন ছাত্রীকে অবৈধভাবে ইংরেজি পরীক্ষায় সহায়তা করে কাজটি তিনি ঠিক করেননি। আমি ভবিষ্যতের জন্য তাকে সতর্ক করে দিয়েছি। এ ছাড়া দুইজন ছাত্রীর খাতা টেবিলের ওপর রাখায় তারা কান্না করছিল। আমি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি। তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।