হতে পারে সবার জন্য অনুপ্রেরণা
শেখ বিবি কাউছার::
মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তৈরি করে পাঠিয়েছেন সৃষ্টির সেরা জীব অর্থাৎ আশরাফুল মাখলুকাত করে। মানুষকে তিনি এমন কিছু বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছেন যা অন্য প্রাণীকে দেননি। তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্রেইন বা মস্তিষ্ক আর প্রচুর পরিশ্রম করার সক্ষমতা।
আজ এমন একজনের কথা তরুণদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি যিনি মস্তিষ্ক ও কঠোর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক সাফল্যের চূড়ায় উপনীত হয়েছেন। যে ব্যক্তি “Paypal থেকে চাকুরি ছেড়ে চলে আসার সময় ভেবেছিলাম আর কি কি সমস্যা আছে, যেটা এই মানবসভ্যতাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করতে পারে বা করছে। তিনি কখনোই এমন ভাবিনি যে, পয়সা কামানোর সবচেয়ে ভালো উপায় কি হতে পারে।”
তাঁর উক্তি “আমার সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে আমি মানুষের ব্যক্তিত্ত্ব দেখার বদলে তার প্রতিভাকে বেশি গুরুত্ব দিই।” ছোটবেলা থেকেই ইলন মাস্ক ছিলেন পরিশ্রমী ও মিতব্যয়ী। মাত্র ১২ বছর বয়সে জীবনের প্রথম গেমটি বানিয়ে ৫০০ ডলারে বিক্রি করে দিয়েছেন।
বাংলাদেশের ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের তৈরি ‘ ফ্যালকন-৯’ রকেটে চড়ে মহাকাশে পৌঁছে। যেটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী হলেন ইলন মাস্ক।
পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত আবিষ্কার যেমন হচ্ছে ঠিক তেমনি নানান সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে। জীবন যুদ্ধে নামলেই নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রেই কমবেশি সমস্যা থাকে। এক্ষেত্রে ইলন মাস্কের কথা হলো, একজন সফল উদ্যোক্তা ও নেতা হিসেবে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে আপনার কর্মীরা যেন তাদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। নিজেদের সত্যিকার ব্যক্তিত্ত্ব আর সৃষ্টিশীলতা যেন তারা (কর্মীরা) তুলে ধরতে পারে। সেটা নিশ্চিত করা একজন প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব। বলা হয় বর্তমান বিশ্বে তাঁর মতো দূরদর্শী মানুষ কমই আছেন। কি করেননি মানুষের জীবনকে সহজ থেকে সহজতর করার জন্য- অনলাইন পেমেন্ট থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক গাড়ি তৈরি, মহাকাশে অভিযান, সোলার সিটিসহ আরো অনেক কিছু।
আসুন এবার জেনে আসি তাঁর এতসব বড় কোম্পানিগুলোতে তিনি কী দেখে লোক নিয়োগ দেন? বড় বড় ডিগ্রি নাকি মেধা ও দক্ষতা? তিনি তাঁর কোম্পানির জন্য প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়ার সময় আগে যাচাই করেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর একজন চাকরি প্রাপ্তির দক্ষতা কতটুকু। এক্ষেত্রে কোডিং, প্রোগ্রামিং বিষয়ে গুরুত্ব দেন বেশি। তাঁর মতে, “এ কাজের জন্য কোন বড় ডিগ্রি কিংবা পিএইচডির প্রয়োজন নেই। বিখ্যাত কোনো ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করেছে মানেই সে সব জানে, তা নয়।” ইন্টারভিউ বোর্ডে দক্ষ কর্মীর খোঁজে কয়েকটি কমন প্রশ্ন করে থাকেন তিনি।
যেমনঃ
১) কাজ করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হলে সমাধানের উপায় কী হতে পারে?
২) কোম্পানি আপনাকে কেন নিয়োগ দেবে?
৩) আমি কেন আপনার ওপর আস্তা রাখবো?
তিনি এমনভাবে প্রশ্ন করেন যাতে চাকরি প্রত্যাশীরা নিজের সম্পর্কে জানানোর সুযোগ পান। তবে আরেকটি অবাক করা ব্যাপার হলো, তাঁর কোম্পানিতে কাজ করতে হলে শুধু দক্ষতাই শেষ কথা তা কিন্তু নয়। তাঁর মতে, আচরণও হতে হবে ভালো। যত বড় রকেট বিজ্ঞানীই হোক না কেন, আচরণ খুব রূঢ় – এটা বুঝতে পারলে ইলন তাকে চাকরি দেন না। তিনি মনে করেন সহকর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া ও পছন্দ করা জরুরি। নয়তো চাকরিতে এসে, মাত্র একজন ব্যক্তির কারণেই জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে। এমনকি যাদের সঙ্গে কাজ করা কঠিন, তাদের চাকরিচ্যুত করারও নজির রেখেছেন তিনি।
এই সফল মানুষটার জীবনে যে ব্যর্থতা আসেনি তা কিন্তু নয়। তবে ব্যর্থতা থেকে শিখেছেন অনেক কিছুই। তাই তরুণদের জন্য তিনি দিয়েছেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ।
(ক) যতটুকু সম্ভব পড়াশোনার মধ্যে থাকা। জীবনের স্বপ্নটা হতে হবে বড়। গোল বা লক্ষ্য সেট করুন। সবার মতামত গুরুত্বপূর্ণ হবে-তা মনে না করা।
(খ) আমার অনেক কাজ নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করতো কিন্তু আমি কখনই সেটাকে গুরুত্ব দেয়নি। শিডিউল বা সময় অনুসরণ করা। টাইম ম্যানেজমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটিতে যদি আপনি অনভিজ্ঞ হোন জীবনে উন্নতি করা একেবারে অসম্ভব। বড় বড় মিটিং আর পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন কোন কাজেই আসবে না যদি না সময় গুরুত্ব দেয়া না হয়।
(গ) ক্রিয়েটিভ চিন্তা করুন। আপনি যদি অন্য আর দশ মানুষের মতো চিন্তা করেন তাহলে জীবনে খুব বেশি পরিবর্তন আপনি লক্ষ্য করবেন না। তাই ছাত্র কিংবা তরুণ অবস্থায় ক্রিয়েটিভ বা ইনোভেটিভ চিন্তা করুন।
(ঘ) মোবাইল ফোনে আপনি এমন সময় ব্যয় করা থেকে বিরত থাকুন যেনো পরবর্তী জীবন ধাপে সময়ের জন্য আপনাকে আফসোস করতে না হয়। যে কাজটা ভালো লাগে সেটাই করুন। তেমন না হলে কাজে সফল হওয়া কঠিন হয়ে যায়।”
আমাদেরও আছে এমন হাজারো মেধাবী তরুণ যাদের হয়তো বড় বড় সার্টিফিকেট বা ডিগ্রি নেই কিন্তু আছে মেধা ও দক্ষতা। যারা একটু পরিশ্রম দিলে, উৎসাহ, অনুপ্রেরণা পেলে আর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে তারাও পারে আমাদের দেশের জন্য ভালো কিছু করে দেখাতে।
লেখক, শেখ বিবি কাউছার
প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ, রাউজান, চট্টগ্রাম।
koucherihc14@gmail.com