সাত সাগর তের নদী পেরিয়ে রাউজানে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা
আমির হামজা, রাউজান:: সাত সাগর তের নদী পেরিয়ে রাউজানে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা। প্রতিবছর শীত এলে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাজার হাজার অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হয়ে উঠে রাউজানের প্রতিটি জনপদ।
সকালে সূর্য় উঠার সাথে সাথে দীঘিতে দলে দলে আসতে শুরু করে শীত প্রধান দেশ থেকে আসা অতিথি পাখিরা। সারাদিন সকাল হতে সূর্য় ঘুমিয়ে পড়ার আগপযন্ত এসব অজনা পাখিগুলো লস্কর দীঘিতে দাপিয়ে বেড়ান। মনের আনন্দে সারাদিন দীঘির জলরাশিতে মনের সুখে তাদের কিচির-মিচির ডাকে মুগ্ধ করছেন দীঘির পরিবেশ।
চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলায় হাজার হাজার অতিথি পাখির এখন মিলন মেলা বসেছে ঐতিহাসিক কদলপুর গ্রামের লস্কর উজির দিঘিতে। শীতের আমেজ যতই বাড়ছে সাথে সাথে বেড়ে চলছে অতিখি পাখির আগমন। সারাদিনই উপজেলার কদলপুর গ্রামের ও পাহাড়তলী এলাকা জুড়ে কিচির মিচির ডাকে মুখরিত হয়ে ওঠেছে ঐ এলাকাসহ স্থানীয় গ্রামের চারিদিক।
সারাদিন পাখিগুলো দীঘিতে খেলাধূলা করার পর সূয ডুবার পরেই দীঘি থেকে চলে গিয়ে গ্রামের বিভিন্ন গাছপালায় রাত কাটান। সকালে হলে আবারও দলবেঁধে দীঘিতে অবস্থান করেন। এই দিঘী গিরে যেন পরিণত হয়েছে পাখিদের এক মিলন মেলা।
সরেজমিনে দেখাযায়, অপরূপ সৌর্ন্দযের লীলাভূমি কদলপুর গ্রামের ঐতিহাসিক লস্কর উজির দিঘী। এই দীঘি নিয়ে রয়েছে এক বাদ শাহের ইতিহাস। আজ থেকে কয়েকশত বছর আগে লস্কর নাম সেই বাদশা এই দেশের শাসক ছিলেন। মোগল ও ব্রিটিশ আমলে রাউজানের প্রভাবলালী উজির নাজির ছিল এই নাম করা লস্কর জমিদার।
জানা গিয়েছে ৬০ একর আয়তনের এই বিশাল দীঘির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে এক নাম করা অলির মাজার। এছাড়াও ঐ দিঘীর পূর্ব পাড়ে হয়েছে সুন্দর একটি মসজিদ। দিঘীল পাড়ের রয়েছে দেখারমত অসংখ্যা সবুজ গাছের বাগান।
এদিকে শীতের মৌসুম আসার পর থেকেই প্রতিদিন হাজারো অতিথি পাখি দল বেঁধে আসতে শুরু করেছে এখানে। সূর্যদয়ের সাথে সাথে শুরু হয় নাম জানা অজানা পাখির কিচির-মিচির ডাক। চলতে থাকে সারাদিন রাতেও দল বেঁধে ছুটে বেড়ান স্থানীয় এলাকা জুড়ে। দেখা যায় মাজে মধ্য আকাশের বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে থাকা অতিথি পাখির দল। এসব পাখির কিচির-মিচির ডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে স্থানীয় এলাকার চারিদিক। আবার কখনো দল বেঁধে উড়ে বেড়ান দীঘির পানির ওপর দিয়ে। হাজার হাজার অতিথি পাখির কোলাহলে পুরো এলাকা এখন মুখরিত।
এবিষয়ে চুয়েট বার্ড ক্লাবের পরিচালক ও উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো: ফজলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অতিথি পরায়ণ। সবকিছুর বেলায় এটি প্রযোজ্য। পাখিরা যখন অতিথি হয়ে আসে তখন আমাদের দায়িত্ব বেড়ে যায়। তারা যে আশায় আসে সে আশা পূরণে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা অতিথি পাখি বান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবো। বাংলাদেশকে নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে ধরে নিয়ে সৌন্দর্যের পসরা বসাতে আসবে পাখিরা।
জানা যায়, শীতপ্রধান দেশগুলোতে এই সময় ব্যাপক পরিমাণে শীতের মাত্রা ও তুষারফাত হয়। যার ফলে পাখিগুলোর খাদ্য সংকটে পড়ে। তাদের জীবন বাঁচাতে খাদ্যের সন্ধানে এসব অতিথি পাখি গুলো আমাদের দেশে চলে আসে। স্থানীয়রা জানান, “শীতের শুরুতেই সবুজ ও গোলাপি রাউজান নামে খ্যাত কদলপুরে প্রতি বছরের মত এবারও আসতে শুরু করেছে নানা দেশ থেকে অতিথি পাখিরা। ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসতে শুরু করেছে আমাদের গ্রামে। এসব ভিনদেশী অতিথি পাখি গুলো হয়ে উঠেছে রাউজানসহ স্থানীয় এলাকার মানুষের কাছে বিনোদনের অন্যতম এক মাধ্যম।”
স্থানীয় লোকজন আরও জানান, গতকয়েক বছর ধরে আমাদের এই গ্রামে এসব পাখি এই দীঘিতে আসেন। এসব পাখির দৃশ্য আমাদের মনে আনন্দ দেন। আমার আনন্দ পাইয় কারণ এইরকম দেশি-বিদেশি পাখির দৃশ্য আর কোথাও দেখা পাওয়া যাইনা। এরা এখানে অনেক নিরাপদে আছেন। এমন মনোরম দৃশ্য আমাদেরকে মনোমুগ্ধকর করে তুলে।।বিশেষ করে এই দিঘীতে পাখির একটি অন্যতম নিরাপদ আবাসস্থল হিসবে গড়ে উঠেছে তা না দেখলে বিশ্বাসই করা যাবেনা। এ দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লস্কর উজির দিঘীতে ছুটে আসে শত শত মানুষ।