নিঃশব্দ
মিশকাত মিশু::
গভীর নিঃশব্দতায়
খানিকক্ষণ চুপ করে থাকি।
বুক চিড়ে যে দীর্ঘশ্বাস
বের হয়ে আসে, একটু পরই
মিলিয়ে যায় হাওয়ায়।
গভীর নিঃশব্দতায় খানিকক্ষণ
চুপ করে থেকে বুঝতে পারি,
আমার দীর্ঘশ্বাসের কোনো চিহ্নই
রাখেনি আকাশ।
কারো হাহাকার কিংবা আর্তনাদের
কোনো ধ্বনি আটকে থাকেনি কখনো হাওয়া জালে।
চারিদিকে কি নিঃশব্দ হাহাকার!
নিমিষেই মিলিয়ে যায় হাওয়ায়।
ভিসুভিয়াসের লাভায় তলিয়ে
যেতে যেতে পম্পেই যখন
দীর্ঘশ্বাস তুলেছিলো; কি বিষাক্ত
কালো সে শ্বাস ধোঁয়া হয়ে
মিলিয়েছিল হাওয়ায়।
মাইলের পর মাইল সেই দীর্ঘশ্বাসে ছাই হয়ে যাওয়া নগরীর এতটুকু চিহ্ন থাকেনি বাতাসে।
জ্বলন্ত সূর্যের নিচে বিবস্ত্র
আর্মেনীয়দের ওপর গুলির
বিকট শব্দ খানিক বাদেই
বাতাসে মিলিয়ে গিয়ে সূর্যরেখা
তপ্ত বালিতে ঢেউ খেলেছিল।
কাতিনের জঙ্গলে কিংবা
হলোকাস্টের সময়গুলোতে
ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া হৃদপিণ্ড থেকে রক্তধারা হেলতে হেলতে
মিলিয়েছিল ভূমধ্যসাগরে।
নিমিষেই ধুলোয় মিলিয়ে যাওয়া
হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকির
আর্তচিৎকারের কোনো শব্দই
বাতাসে ভাসতে দেখিনি কখনো।
দারফুর, নানচিং কিংবা বসনিয়ার নৃশংসতার কিংবা দীর্ঘশ্বাসের কোনো চিহ্নই
কি আশ্চর্য দেখিনি
হাওয়ার বুকে আটকে যেতে।
কি পাষন্ড! বিশ্বাসঘাতক!
সব মুছে দিয়ে
নির্মল হয়ে ওঠে সহজেই।
নির্মমতার কোন দীর্ঘশ্বাস
দেখতে পাইনি কখনোই বাতাসে।
অনেকক্ষণ আকাশের দিকে
নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে যখন
চোখ দুটো নিচে নামিয়ে নেই,
চোখে যেন অন্ধকার দেখি।
শ্মশান কিংবা কবরস্থান থেকে
আগরবাতির ধোঁয়া উঠে এসে
চোখে জ্বালা ধরিয়ে দেয়।
চারিদিকে কি নিঃশব্দ মৃত্যুর হাহাকার!
চারিদিকে কি সকরুণ চাহনির আর্তনাদ!
একটু পরই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।।
মিশকাত মিশুঃ শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক।