ঘরে তৈরি কেক বিক্রি করে লক্ষ টাকা আয় সাথীর
অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই প্রতিনিধি:: উম্মে হাবিবা সাথী এক প্রকার শখের বসে কেক বানানো শুরু করেন। কিন্তু বর্তমানে ঘরে বসে নিজের হাতের তৈরি কেক বিক্রয় করে অনেকটা স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজের হাতের বানানো এই কেক বিক্রয় করে ইতিমধ্যে লক্ষ টাকা আয় করে ফেলেছেন সাথী।
সফল নারী উদ্যোক্তা উম্মে হাবিবা সাথীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, গত ২০২০ সালে তিনি যখন অবসর সময় অতিবাহিত করছেন তখন চিন্তা এলো নিজ থেকে কিছু একটা করার। এসময় তিনি অনেকটা শখের বসে মনের মাধুরী মিশিয়ে কেক বানিয়ে ফেলেন। পরে পরিবার যখন তার বানানো কেকের প্রশংসা করলো, তখন কেক বানানোর প্রতি তার উৎসাহ আরো বেড়ে গেলো। পরবর্তীতে যখন হঠাৎ একদিন এক প্রতিবেশীর নিকট থেকে কেক বানানোর অর্ডার পেলো। এক প্রকার ভয়ে ভয়ের মধ্যেও চমৎকার ভাবে কেক তৈরি করে চমক লাগিয়ে দিলো। এতে তিনি তার জমানো কিছু টাকা দিয়ে কেক তৈরির সরঞ্জাম ক্রয় করে ছিলো। এদিকে তার বানানো প্রথম অর্ডারের কেকটি এতোটাই সুস্বাদু হয়েছিলো যে যারা খেয়েছে তারা সকলেই এর প্রশংসা করেছে। এক পর্যায়ে তার বানানো কেক এর সুনাম ছড়িয়ে পরার পর একে একে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে কেক বানানোর জন্য আরো অর্ডার আসতে লাগলো। ২০২১ সালে পুরোদমে অনলাইন
এবং অফলাইনে হারেক রকমের কেকের অর্ডার পেয়ে এবং সফল ভাবে তা তৈরি করে আস্তে আস্তে স্বাবলম্বী হতে লাগলো উম্মে হাবিবা সাথী।
তার সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, একসময় তিনি মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ করে কেক বানানো শুরু করলেও বর্তমানে কেক বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় করে ফেলেছেন সাথী। শুধু কেক তৈরিতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি তিনি। সম্প্রতি কাপ্তাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহানের অনুপ্রেরণায় তিনি একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নিয়েছেন। যেখানে কাপ্তাই ইউনিয়নের অনেক নারী প্রশিক্ষনার্থীকে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে কেক বানানোর কাজ শিখিয়েছেন তিনি। এছাড়া প্রশিক্ষন কর্মশালা ছাড়াও তিনি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন নারীকে কেক তৈরিতে পারদর্শী করে তুলেছেন। বর্তমানে তার ছাত্রীরাও কেক বানিয়ে বিক্রয় করে আয় করছেন বলে জানান তিনি।
কোন ধরণের কেক বানাতে পারদর্শী এই বিষয়ে জানতে চাইলে উম্মে হাবিবা সাথী বলেন, তিনি বিভিন্ন প্রকারের কেক তৈরি করে ফেলতে পারেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য চকলেট, ভেনিলা, স্ট্রবেরি, লেমন, অরেঞ্জ, বাটার কচ, পানদান ফ্রেভারের বিভিন্ন ডিজাইনের কেক। তাছাড়া ছোট বাচ্ছাদের জন্মদিনের ডল কেক, ডোরিমন, কারকেক সহ বিভিন্ন কার্টুনের কেক বানাতে পারদর্শী তিনি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো তিনি কাস্টোমারের পছন্দ অনুযায়ী হুবহু ডিজাইন সম্বলিত কেক তৈরি করে চমক লাগিয়ে দিতে পারেন।
এদিকে বর্তমানে উম্মে হাবিবা সাথীর একটি নিজস্ব অনলাইন ব্যবসার ফেসবুজ পেইজ রয়েছে। যার নাম Sathi’s vlog। যেখানে তিনি কেক বিক্রয়ের জন্য ভালো সাড়া পেয়েছেন। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, তিনি নিজ হাতের কেক বিক্রি করে যে আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন, তার ধারবাহিকতা তিনি আজীবন ধরে রাখবেন। এবং ভবিষ্যতে এই কেক বানানো নিয়ে তিনি আরো ভালো কিছু করার চেস্টা করবেন। তাছাড়া তিনি নিজের পাশাপাশি সমাজে পিছিয়ে পরা নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন কাজ করার আশা জানিয়েছেন। এদিকে তার এতটুকু স্বাবলম্বী হওয়ার পিছনে যাদের অবদান অনেক বেশী, বিশেষ করে তার স্বামী, পরিবার সহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।