ফিচার

যাদুকাটা নদীর অপরূপ জাদু

শেখ বিবি কাউছার:: সকালের নাস্তাটা করেই আমরা বেড়িয়ে পড়ি সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে। সুনামগঞ্জ বাসে করে যেতে হয়। এসি, নন এসি বাস দুটোই পাওয়া যায়। আমরা টিকেট কাটলাম এসি বাসের। জনপ্রতি ভাড়া ১৯০ টাকা করে। সার্ভিস ভালোই।

যেতে যেতে দেখা হলো অপরূপ প্রকৃতির সাথে। সিলেট বিভাগ পুরোটাই মনে হল মেঘালয় পাহাড় দিয়ে মোড়ানো। পাহাড়টি দেখলেই মনে হয় এইতো একটু গেলে ছোঁয়া যাবে। আসলে কিন্তু তা নয়! প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় স্পর্শ করা যায় খুব কম। হাওড়ের শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য্য আপনাকে অবাক করবেই। আর আপনি যদি কবি হোন তাহলে আর কথাই নেই। আনমনে মনের মাঝে উকি দিবে অনেক কবিতা।

সুনামগঞ্জে এসে বুঝতে পারলাম নিজের দেশ সম্পর্কে কতই না কম জানি। যাদুকাটা নামে এত সুন্দর একটা নদী আছে তা জানতে পারলাম এখানে এসে। যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। মহান আল্লাহ তায়া’লার কি অপূর্ব সৃষ্টি! প্রকৃতির কাছে গেলেই মনে হয় তিনি নিজ হাতে তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য এসব সৃষ্টি করে রেখেছেন।

এই যাদুকাটা নদী সম্পর্কে যা জানলাম,দেখলাম তা পাঠকদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করছি।
নদীমাতৃক দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য জানা-অজানা নদী। ঠিক তেমন একটি নদী হলো যাদুকাটা বা জাদুকাটা নদী। দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে নেমে এসেছে এই নদী। যেমন অদ্ভুত তার সৌন্দর্য, তেমন অদ্ভুত তার নাম। মুগ্ধ করার মতো।এই মায়াবী নদীটির নাম ‘জাদুকাটা’। জাদুকাটা নদী মুহূর্তের মধ্যেই জাদু দিয়ে আমাদের সবাইকে কাবু ফেলেছে।

জাদুকাটা নদীর গভীরতা কম। আর এর পানি এতটাই স্বচ্ছ যে নিচের বালুকণা পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়। নদীর একপাশে বিস্তীর্ণ বালুচর, অন্যপাশে সবুজ পাহাড়ের হাতছানি। কে না চায় এমন এক পরিবেশে নিজেকে একটু হারিয়ে ফেলতে!

উৎপত্তিঃ
যাদুকাটা নদী ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় হতে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুরে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে তাহিরপুরের মধ্যে নদীটি প্রবেশ করে ঈষৎ দক্ষিণ-পূর্বমুখী হয়ে একেবেকে পুনরায় বিশ্বম্ভরপুরে প্রবেশ করেছে। বিশ্বম্ভরপুর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে জামালগঞ্জ উপজেলা শহরের নিকট নয়া সুরমা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।

নদীর এক পাড়ে দেখা যায় সবুজ বৃক্ষরাজিময় বারেক টিলা ও অন্য দিকে খাসিয়া পাহাড়। রেণুকা হচ্ছে যাদুকাটা নদীর আদি নাম। অনেকই হয়তো ভাবছেন নদীর নাম যাদুকাটা/ জাদুকাটা কেন? আসলে নদীর নামকরণ নিয়ে প্রচুর গল্প রয়েছে। কথিত আছে যে, নদী তীরবর্তী কোন এক গাঁয়ের বধু তার শিশুপুত্র যাদুকে কো‌লে নি‌য়ে এই নদীর মাছ কাট‌ছি‌লেন এক পর্যায়ে অন্যমনষ্ক হ‌য়ে মা‌ছের জায়গায় তার কোলের শিশুকে কেটে ফেলেন। বাচ্চাটির নাম ছিলো যাদু। পরবর্তীতে সেই প্রচলিত কাহিনী থেকেই নদীটির নাম হয় যাদুকাটা নদী।

এখানে যাওয়ার ব্যবস্থাটা খুব কষ্টসাধ্য। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে এটি হতে পারে অন্যরকম এক পর্যটন কেন্দ্র। এবে যেতে দুঃখ কষ্ট যাই লাগুক না কেন যাদুকাটা নদী তা নিমিষেই আপনাকে ভুলিয়ে দিবে। তাইতো ভাবছি নামটা কেন যাদুকাটা!
আমাদের জীবন্ত ভ্রমণ গাইড হাবিব স্যারকে( সুনামগঞ্জ বাড়ি) অসংখ্য ধন্যবাদ তার জন্যই এত সুন্দর জায়গাগুলো দেখতে পারলাম। আর আমাদের প্রায় সব ছবি তোলার ক্রেডিটও কিন্তু স্যারের।

শেখ বিবি কাউছার প্রভাষক
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ
রাউজান, চট্টগ্রাম

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button