ছন্দাক্ষর । উম্মে হাবিবা চৌধুরী
উম্মে হাবিবা চৌধুরী::
আমার মায়ের প্রসব বেদনা
ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মুখখানা
নারিকেল ডালে শুকনো খড়ে
বসত বোনা বাবুই পাখিটি।
লাউয়ের ডগায়
তৃণলতায় কুটুম পাখির মঞ্জুরী,
কুমড়ো পাতায় তেল ভাজা মাছ
নোনতা ইলিশ পাতুরী,
চাউল ভুনা গুড়ের নাড়ু
গন্ধ সুরভী।
ক্লান্ত দুপুর
পুকুর পাড়
বঁড়শীর ছিপ
মাছের টোপ।
অফিস ফেরত স্নেহপ্রবণ বাবা
প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন,
পড়ার টেবিল সন্ধ্যাবেলা
খুনসুটি করা ভাইবোন
তটস্থ থাকা
মায়ের অনুশাসন।
কৈশোরের চপলতা
স্মৃতির মালঞ্চ
গাঁথামালা।
সদ্য ফুটানো মুরগীর বাচ্চা,
ডিমপাড়া হাঁসের ঝাঁক
পাখনা ঝাড়া
খালের পানি জলতরঙ্গ।
মসজিদের মিনার
ভেসে আসা
সুললিত সুর
আযান সুমধুর।
একাত্তর দেশ স্বাধীনের রক্ত
বিভীষিকাময় যুদ্ধদিনের
বর্ণিল পান্ডুলিপি
দুঃসহ চিত্র।
নতুন ফসল কাটার ধুম
আমোদিত বাড়ির আঙ্গিনা
কিষাণীর কর্মযজ্ঞতা
দৈনন্দিন রোজনামচা।
মুখরিত চর আলো ঝলমল
রোদের হাসি
রুপালী মাছ
পারিযায়ী পাখি,
পুলকিত হাসিখুশী মুখ বউটান
মা গরুটির আশ-পাশ করা
সদ্য জন্ম নেওয়া বাছুরটি।
মানুষ টানা রিক্সার হেনডেল ধরা
ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত ঘাম ঝরা
জয়নাল মিয়া।
বেঁচে থাকা জীবন জীবিকা
অতি প্রত্যুষে
বিরামহীন পথ চলা
রোজিনা নাজমা।
রাস্তার ধারে ফুলমালা বিক্রি করা
মলিন বসন শিশু পরিমল
জীর্ণ শীর্ণ কায়া।
সূর্য উদয় লগ্ন
অনিন্দিত ভোর
কুয়াশা ঢাকা মেঠোপথ
বনফুলে শিশির কণা।
জ্যোৎস্নাস্নাত প্লাবিত মেঘ
পূর্ণিমার আলো
স্বপ্নজাগা রাত।
সূর্যাস্তের আবীর মাখা
গোধূলির নান্দনিকতা,
মনের সুখে নীল আকাশে
ডানা মেলে ঘুরে বেড়ানো
গাঙচিলটি,
গহীন রাতে বনের কুঞ্জে
করুণ সুরে কান্না ভেজা
ডাহুকপাখিটি,
আমার কবিতার ছন্দমালা
আনন্দিত সমাহার
ছন্দাক্ষর।