নায়িকা শাবানার শৈশবের কাটানো গ্রামের বাড়িতে একদিন
আমির হামজা:: চট্টগ্রামের রাউজানের মেয়ে নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়িকা শাবানা। ছোটবেলায় পরিবারের সঙ্গে উপজেলার পশ্চিম ডাবুয়ায় নায়কা শাবানার শৈশব কেটেছিল নিজ গ্রামে। তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যাই অনেক বছর আগের পুরাতন সাদা রঙের একটি বাড়ি। সেই সময়ের ইটের তৈরি একটি টিনের ঘর। ঘরের দেয়াল-দরজা আর লাগানো তালায় ঝং ধরে আছে যেন বহু বছর ধরে।
শাবনার সেই সাদা রঙের বাড়ি পাশে রয়েছে অনেক পুরাতন চন্দ্রীমা নামে একটি পাকা এক রুমের ঘর সেখানেও বড় হওয়ার পর থাকতো তিনি। এখনো যেন ঘরে বাহিরে শাবনার সব স্মৃতি হেঁটে বেড়েছে।
জানা যায় গত জুন মাসের কোন একসময় নায়কা শাবনার আপন দুই বোন রিজভি ও রনজিনা তারা গ্রামে আসেন। কয়েকটি দিন গ্রামে সময় কাটিয়ে আবারও চলে যান।
নায়কা শাবানকে গ্রামে আফরোজা সুলতানা (রত্না) নামে তাঁর পরিচিতি ছিলেন। ঢাকায় চলে যাওয়ার পর আফরোজা সুলতানা (রত্না) পরিবতে তাঁর শাবানা নামটি রাখা হয়। ছোটবেলায় তার শৈশবের দিনগুলো রাউজানের ঐ গ্রামে খেলাধুলা পড়াশোনার মধ্যে সময় কেটেছিল প্রকৃতির সঙ্গে। এখনো যেন সেই গ্রামে তাঁর শৈশবের সব স্মৃতি গ্রামের বাড়িতে রয়েছে।
তাঁরা ঢাকায় চলে যাওয়া পর কয়েক বার নিজের শৈশব কাটানো জন্মস্থানে আসা হলেও, নিজ গ্রামে এখন শাবানর পদচারণা পড়ে না বললেই চলে। তাকে একবার দেখার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে গ্রামের অসংখ্য মানুষ।
শাবানার গ্রামের মানুষেরা জানান, গত ১৬ বছর আগে শাবানা গ্রামে এসেছিলেন, তারপর আর সেই গ্রামে তার পদচারণা এখনো পড়েনি। শাবানা গ্রামের বাড়িতে না আসলেও ২০১০ সালের দিকে শেষ একবার শাবানার মা ফজিলাতুন্নেসা এই বাড়িটিতে আসেন। তখন তিনি সেখানে ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।
নায়কা শাবানা ৫ ভাই-বোনের মধ্যে সেই সবার বড়, তাঁর ভাইয়ের নাম রিপন, শাহীন, বোন রিজভী ও রনজিনা। শাবানাদের বাড়ির সঙ্গে লাগানো হয়েছে তাঁর দুই চাচার বাড়ি।
শাবানা গ্রামে থাকা অবস্থায় স্থানীয় রামসেবক প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হয় রাউজান আর.এস.সসি সরকারি হাই স্কুলে পড়া অবস্থায় পরবর্তীতে বাবার চাকরির সুবাদে তাঁকে ঢাকার গেন্ডারিয়ার মনিরা রহমান গার্লস হাই স্কুলে ভর্তি হন তিনি। সেখা মেটিক পাস করেন। জানা যায়
রাউজানের ঐতিহ্যবাহী ঘটনার মলকা বানু ইতিহাস নিয়ে জনপ্রিয় ছবি মলকা বানু’র শুটিং করেছিলেন শাবানা রাউজানের কয়েকটি এলাকায়।
শাবানার চলচ্চিত্রে ইতিহাস টেনে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে (চকোরী) চলচ্চিত্রে নাদিমের বিপরীতে নায়িকা হয় শাবানা, ছবির পরিচালক ছিলেন এহতেশাম। পরে একে একে ৫০০ টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। তবে জুটি হিসেবে নায়ক আলমগীর-শাবানা জুটি ছিল বাংলাদেশের সিনামা জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয়। সেই সঙ্গে এই জুটির রেকর্ড গড়েন শাবানা। নায়ক রাজ্জাক, ওয়াসিম, জসিমসহ অসংখ্য ছবিতে তার অভিনয় ছিল দেখার মতো।
পরে ১৯৯০ কাছাকাছি সময়ে তিনি বেশির ভাগ ছবিতে ভাবি বা মায়ের অভিনয় করতেন। সেখানেও তার অভিনয় দর্শকের মনে জায়গা করে নেন। ২০০০ সালে হঠাৎ রূপালী জগৎ থেকে তিনি আড়ালে চলে যান। এরপর আর কোন ছবিতে তাকে দেখা যাইনি।
ষাট দশকের শেষ থেকে নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রামের রাউজানের মেয়ে নায়কা শাবানার অভিনয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে বসবাস করছেন শাবানার পরিবার। মাঝে মাঝে ঢাকায় আসতে দেখা গেলেও কিন্তু নিজের গ্রামের বাড়ি যেখানে তাঁর জন্ম রাউজানে এক যুগের বেশি সময় ধরে তাঁরা আসা হয়নি। তার নিজ গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চারা বলেন শাবানা দাদুকে দেখার অনেক স্বপ্ন। আর গ্রামের মানুষরা প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখেন গ্রামের সবার প্রিয় রত্না। হয়তো কোন একদিন সবাইকে দেখতে আসবেন।
আমির হামজা, লেখক ও সাংবাদিক