দেশের প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণার শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ চুয়েট
আজ চুয়েটের ২১তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস
মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম:: দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণার একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। ২০০৩ সালে স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করা চুয়েট আজ ১লা সেপ্টেম্বর তাঁর গৌরবময় পথচলার ২১তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। মাত্র দুই দশকের পথচলায় চুয়েট আজকে দেশের প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। যার প্রমাণস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত কিউএস র্যাংকিংয়ে পরপর দুইবার পেয়েছে ঈর্ষনীয় সফলতা।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের জন্য প্রকাশিত কিউএস র্যাংকিংয়ে এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৪০১-৪৫০ এর মধ্যে এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৯২তম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থান অর্জন করেছে।
এছাড়া সারাদেশের মধ্যে শীর্ষ ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫ম, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২য় সেরা এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ৩য় সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে র্যাংকিংয়ে স্থান পেয়েছে চুয়েট।
চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার পাহাড়তলি ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের পাশে উনসত্তরপাড়া মৌজায় অবস্থিত।
চট্টগ্রাম শহরের উত্তর-পূর্বে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে এবং কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে প্রায় ২০ কিলোমটার দূরে এক মনোরম প্রাকৃতিক পাহাড়ি ভূমিতে প্রায় ১৭১ একর জায়গাজুড়ে চুয়েট ক্যাম্পাসের অবস্থান। মনোরম এই ক্যাম্পাসে একইসাথে পাহাড়, সমতলভূমি ও লেকের অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ৫ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যেই দেশের একমাত্র খরস্রোতা কর্ণফুলী নদী বহমান। আর ঘন্টাখানেকের দূরত্বে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মনুষ্যসৃষ্ট স্বাদু পানির কাপ্তাই হ্রদ। কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলীর তীরবর্তী সমভূমি/অঞ্চল হওয়ার সুবাদে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পুরোটাই আঁচড়ে পড়েছে এই ক্যাম্পাসে।
ছোট্ট পরিসরেই এখানে মিলবে সবুজ প্রকৃতি, সারি-সারি গাছের সমারোহ, বাহারি ফুলের সমাহার, পাখিদের কিচির-মিচির কলতান, পাহাড়-সমতল মিশ্রিত প্রাকৃতিক লেইক, পাহাড়ি উঁচু-নিচু মেঠো পথ, বণ্য প্রাণীর অবাধ বিচরণ, প্রকৌশলবিদ্যার অনুকরণে দৃষ্টিনন্দন সব অবকাঠামো ও স্থাপনা।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, স্বাধীনতা ভাস্কর্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, মুক্ত মঞ্চ, পাহাড়ি মেঠোপথে ঝুলন্ত সেতু ও ছোট-ছোট লেইকের সম্মিলন চুয়েট ক্যাম্পাসের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যকে অনন্য মুগ্ধতা দিয়েছে। এ যেন ১৭১ একরজুড়ে পুরো ব-দ্বীপের বাংলাদেশেরই চিত্রায়ন।
মূলশহর থেকে বেশ দূরে গ্রামীণ জনপদে অবস্থান ও নানাবিধ সীমাবদ্ধতার সত্ত্বেও সীমিত বাজেটের মধ্যে চুয়েট উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় নানা সাফল্য অর্জন করে ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
প্রতিবছর নিয়মিতভাবে একাধিক আর্ন্তজাতিক কনফারেন্স-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন, বিশ্বমানের ল্যাব ও যন্ত্রপাতি সংযোজন, রোবট গবেষণায় যুগান্তকারী উদ্ভাবন, কর্ণফুলী ও হালদা নদী সম্পর্কিত গবেষণা, বহুবিধ শিল্পসমস্যার সমাধান ও কারিগরি সহায়তা প্রদান এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের ভূমিকম্প, পরিবহণ-যানজট, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ সমস্যা বিষয়ক জনগুরুত্বপূর্ণ গবেষণা, শক্তিশালী ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময় ও যৌথ গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ, বিভিন্ন খ্যাতনামা জার্নালে নিয়মিত গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ, বহিঃর্বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে উচ্চশিক্ষা-গবেষণায় সমঝোতা চুক্তি গড়ে তোলা এবং সরকারের রূপকল্প অনুসরণে স্মার্ট বাংলাদেশ ও ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের নিত্যনতুন কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ চুয়েটের উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জাতীয় উন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পেশাদার প্রকৌশলীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণাকে জনকল্যাণে বিস্তৃত করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে চুয়েট। পাশাপাশি বিশ্ববাজারের চাহিদার সাথে সমন্বয় ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত মানব সম্পদ তৈরিতে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চুয়েট কাজ করে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৮ সালে “চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ” হিসেবে মাত্র ৩টি বিভাগ এবং ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে “বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি), চট্টগ্রাম” হিসেবে উন্নীত হয়। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে ২০০৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর “চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়” নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি নবরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
বর্তমানে ১৮টি বিভাগে ৯২০ আসনের (উপজাতি কোটাসহ মোট ৯৩১ আসন) বিপরীতে স্নাতক পর্যায়ে ৪ হাজার ৫০০ জন এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আরও ১২০০ জন সবমিলিয়ে মোট ৬ হাজার ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত রয়েছেন। একইসাথে ১০১জন পিএইচডি ডিগ্রীধারীসহ ৩৩৩ জন শিক্ষক, ১৭১ জন কর্মকর্তা এবং ৪৫৯ জন কর্মচারী মিলে প্রায় ১ হাজার জনের একটি সুখী পরিবার হিসেবে চুয়েটকে এগিয়ে নেওয়ার ব্রতে নিযুক্ত রয়েছেন।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা তৈরি, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশনকে আরও সম্মৃদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রায় ১১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নির্মিত সর্বপ্রথম “চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর” গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জননেত্রী শেখ হাসিনা’র হাত ধরে শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে দৃশ্যমান অগ্রগতি ও চুয়েটের সাফল্যের ধারায় নতুন পালক যুক্ত করেছে। প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা-গবেষণার অন্যতম সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘‘Center of Excellence’’ হিসেবে গড়ার বহুমুখী প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম।
দুই দফায় ৩২০ কোটি টাকা এবং ৬৯ কোটি ব্যয়ে দুটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ল্যাবরেটরি যন্তপাতি সংযোজনের মাধ্যমে চুয়েটের দৃশ্যমান উন্নয়ন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশ এগিয়ে।
দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর চুয়েটে
দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রায় ১১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা সৃষ্টি, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশনকে আরও সম্মৃদ্ধ করার পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণা এবং এই খাতে বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সর্বপ্রথম “শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর” স্থাপন চুয়েটের দৃশ্যমান অগ্রগতি সাফল্যের ধারায় নতুন পালক যুক্ত করেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৬ই জুলাই ২০২২ খ্রি. ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে এর শুভ উদ্বোধন করেন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে “স্মার্ট বাংলাদেশ” বিনির্মাণে এই ইনকিউবেটর ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ইনকিউবেটর নিয়ে চুয়েট শিক্ষার্থীদের মাঝেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। চুয়েটের নির্মাণাধীন আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রজেক্ট তরুণদের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। যেখানে যে কেউ যেকোনো ধরণের সৃজনশীল আইডিয়া নিয়ে আসতে পারবে এবং সেটাকে একটি প্রোডাক্টিভ পণ্য হিসেবে তৈরি করে বাজারজাত করার দায়িত্ব ইনকিউবেটর সংশ্লিষ্টদের। আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে তরুণরা দেশের প্রযুক্তি বিল্পবে নেতৃত্ব দেবেন বলে বিশ্বাস চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। ইতোমধ্যে এই ইনকিউবেটরে বাটারফ্লাই ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, চালডাল ডটকম, মিস্ত্রি বাজার, ডিলিজিট, ক্লিগ টেক, সিম্স ইন্টারঅ্যাকটিভ-সহ অন্তত ৭টি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সম্প্রতি মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি ইনকিউবেটরে আরও ১৭টি স্টার্টআপ ও প্রযুক্তি কোম্পানির মাঝে বরাদ্দপত্র হস্তান্তর করেন। মূলত তাঁরা গবেষণা ও উন্নয়ন (Research and Development) সেক্টর নিয়ে ইনকিউবেটরে কাজ করছেন। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশন, যৌথ গবেষণা প্রকল্প, স্কিলস ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং, অন-ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্ট প্রভৃতি কার্যক্রম চালাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, প্রায় ৫ একর আয়তনজুড়ে স্থাপিত শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ইনকিউবেশন ভবন এবং ৬ তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবন রয়েছে। যেখানে থাকছে স্টার্টআপ জোন, আইডিয়া/ইনোভেশন জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন, ব্রেইনস্ট্রর্মিং জোন, এক্সিবিশন সেন্টার, ই-লাইব্রেরি জোন, ডাটা সেন্টার, রিসার্চ ল্যাব, ভিডিও কনফারেন্সিং কক্ষ, সম্মেলন কক্ষ প্রভৃতি।
চুয়েট যেখানে অনন্য
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫টি অনুষদের অধীনে ১৮টি বিভাগের পাশাপাশি ৩টি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ৩টি গবেষণা সেন্টার এবং একটি কেন্দ্রীয় ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেন্সি (BRTC) রয়েছে। সেন্টারটির মাধ্যমে সারাদেশে বিবিধ শিল্প এবং প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তি সংক্রান্ত সেবা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। চুয়েটে রয়েছে ‘ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ’ নামে দেশের একমাত্র ভূমিকম্প প্রকৌশল গবেষণা ইনস্টিটিউট। এছাড়া ‘সেন্টার ফর রিভার, হারবার অ্যান্ড ল্যান্ড-স্লাইড রিসার্চ’ নামে দেশের একমাত্র পোতাশ্রয় ও ভূমিধ্বস বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। অন্যদিকে চুয়েটে বছরজুড়েই বিভিন্ন বিভাগের আয়োজনে আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কনফারেন্স আয়োজন করে। এরমধ্যে দেশের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক কনফারেন্স ‘International Conference on Advance Civil Engineering (ICACE)’ চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের আয়োজনেই হয়ে থাকে। এছাড়া যন্ত্রকৌশল অনুষদের আয়োজনে ‘ICMERE’, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের আয়োজনে ‘ECCE’, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে ‘ICPSDT)’, পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের আয়োজনে ‘NCWRE’, ইনস্টিটিউট অব এনার্জি টেকনোলজি (আইটিই)-এর আয়োজনে ‘NCETMIA’, ‘জাতীয় গবেষণা মেলা (National Research Fair)’ শীর্ষক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন উল্লেখযোগ্য।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে চুয়েট
প্রকৌশল শিক্ষা অন্যান্য শিক্ষা পদ্ধতির চেয়ে ব্যতিক্রম হওয়ায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সারাবছরই আঁটসাঁট একাডেমিক শিউিউলের মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু তাই বলে চুয়েটিয়ানরা সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দমে থাকতে পারে না। শুনে অবাক হতেও পারেন যে, চুয়েটের ১৭১ একরের ভূমিতে নিবন্ধনকৃত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা অন্তত ২৫টি। সংগঠনগুলো হলো- সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জয়ধ্বনি’, পরিবেশ সচেতনতামূলক সংগঠন ‘গ্রীন ফর পিস’, চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি, চুয়েট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, চুয়েট চলচ্চিত্র সংসদ, ভাষা ও সাহিত্য সংসদ চুয়েট, রোবটিক চর্চা ও গবেষণামূলক সংগঠন ‘রোবো মেকাট্রনিক্স অ্যাসোসিয়েশন’ (আরএমএ), মহাকাশ ও রোবটিক গবেষণা সংস্থা ‘অ্যান্ড্রোমেডা স্পেস অ্যান্ড রোবটিক্স রিসার্চ অরগ্যানাইজেশন’ (আ্যসরো), চুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব, চুয়েট কম্পিউটার ক্লাব , চুয়েট স্পোর্টস ক্লাব, বিশ্বের সর্ববৃহৎ পেশাজীবীদের সংগঠন ‘ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রনিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স’ (আইইইই) স্টুডেন্টস ব্রাঞ্চ, আমেরিকান কনক্রিট ইনস্টিটিউট (এসিআই) স্টুডেন্টস ব্রাঞ্চ প্রভৃতি। এরমধ্যে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক উৎসবে ‘জয়ধ্বনি’ ২০১২, ২০১৪, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন ও ২০১০ রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটিও সম্প্রতি জাতীয় বিতর্ক উৎসব PCDF-2019 এর চ্যাম্পিয়ন, বাংলাদেশ টেলিভিশন আঞ্চলিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০১৯ এর চ্যাম্পিয়নসহ বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ৭বার চ্যাম্পিয়ন ও তিনবার রানাস-আপ হয়। এছাড়া গ্রীন ফর পিস’র বছরজুড়েই পরিবেশ সচেতনতামূলক কার্যক্রম তো আছেই। পাশাপাশি বহিঃর্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে রোবটিক চর্চা এবং মহাকাশ ও রোবটিক গবেষণার সাথে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে আরএমএ এবং অ্যাসরো’র শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে, রোবট গবেষণায় চুয়েট শিক্ষার্থীরা প্রতিবছরই দেশ-বিদেশ হতে কোন না কোন সাফল্য নিয়ে আসছেন।
চুয়েটের সাম্প্রতিক সময়ের অর্জনসমূহ:-
কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে চুয়েট দক্ষিণ এশিয়ায় ৯২তম, দেশের তৃতীয় সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং দ্বিতীয় সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ২০২৪ সালের জন্য প্রকাশিত তালিকায় এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৪০১-৪৫০ এর মধ্যে এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৯২তম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থান অর্জন করেছে। এছাড়া সারাদেশের মধ্যে শীর্ষ ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫ম, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২য় সেরা এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ৩য় সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে র্যাংকিংয়ে স্থান পেয়েছে চুয়েট। পাশাপাশি বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে ১২০১-১৪০০ এর মধ্যে এবং বিষয়ভিত্তিক পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাটাগরিতে ১০১-১৫০ এর মধ্যে অবস্থান করেছে চুয়েট। গত ২৭শে জুন ২০২৩ খ্রি. এই র্যাংকিং প্রকাশিত হয়েছে। বিস্তারিত এই লিংকে (https://tinyurl.com/486z58m5) পাওয়া যাবে। প্রসঙ্গত, কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং সিস্টেম, যা প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, আন্তর্জাতিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা, কর্মসংস্থান এবং গবেষণামূলক কাজের ভিত্তিতে প্রকাশিত হয়ে থাকে।
আমেরিকান কংক্রিট ইন্সটিটিউটের এসিআই ‘এক্সিলেন্ট’ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় চুয়েট
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (চুয়েট) আবারও ‘এক্সিলেন্ট ইউনিভার্সিটি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে পুরকৌশলীদের আন্তর্জাতিক পেশাজীবী সংগঠন আমেরিকান কংক্রিট ইনস্টিটিউট (এসিআই)। গত ১০ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রি. যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানভিত্তিক এই সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে চুয়েট কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানায়। তালিকায় স্থান পাওয়া ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে চুয়েট ছাড়াও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) আছে। এছাড়াও ৫৩টি বিশ্ববিদ্যালয়কে আউটস্ট্যান্ডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দিয়েছে সংগঠনটি। এ তালিকায় বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) স্থান পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক সাফল্যের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এক্সিলেন্ট ইউনিভার্সিটির তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়।
৩৫০ শিক্ষক-গবেষক নিয়ে চুয়েটে প্রথম “জাতীয় গবেষণা মেলা” আয়োজন
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) “স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জ্ঞান অন্বেষণ” (Knowledge Exploration for Smart Bangladesh) স্লোগানে প্রথমবারের মতো “গবেষণা মেলা-২০২৩” অনুষ্ঠিত হয়েছে। চুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে গত ২৮শে আগস্ট ২০২৩ খ্রি. দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এই গবেষণা মেলার অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় দেশের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী, উদ্যোক্তা, প্রফেশনাল ও শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা বসবে। যেখানে চূড়ান্তভাবে বাছাইকৃত মোট ১৩১টি গবেষণা প্রবন্ধ (৯৪টি পোস্টার ও ৩৭টি প্রজেক্ট) উপস্থাপন করা হয়।
লেখক-
মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম
সহকারী রেজিস্ট্রার (সমন্বয়)
উপাচার্য মহোদয়ের দপ্তর
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়