রাউজানে পিতার কাঁধে প্রবাসী সন্তানের লাশ
আমির হামজা, রাউজান:: ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় চট্টগ্রামের রাউজান থেকে পাড়ি জমান ওমানে। স্বপ্ন ছিল অভাবের সংসারে আনবেন স্বচছলতা। দরিদ্রকে হার মানিয়ে একবুক আশা নিয়ে প্রবাসে যান মো.কাউসার।
ওমান থেকে আসার সময়ে অসুস্থ বাবা নুরুল আলম মা নাহিদা আকতারের জন্য ব্যাগ ভর্তি করে কোন উপহার, আদরের ৩ বোনের জন্য শখের কোন বিদেশি ক্রিম মোবাইল চকলেট আর স্ত্রীর জন্য এক টুকরো সোনার হার নিয়ে আসেনি রাউজানের প্রবাসী কাউসার। প্রিয়জনদের জন্য কিছুই আনতে পারলোও এই অভাগা প্রবাসী যুবক।
কিন্তু কফিন বন্দি হয়ে সাদা পোশাকে খালি হাতে ঘরে ফিরেছে তার নিথর দেহে। সকলের স্বপ্ন পূরণের আশার প্রদীপ নিভে গেল সদূর ওমানে। বলছি মধ্যপ্রাচের দেশ ওমানে মৃত্যুবরণকারী চট্টগ্রামের রাউজানের দরিদ্র পরিবারের সন্তান প্রবাসী যুবক মো.কাউসারের কথা।
৬ অক্টোবর শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্বজনদের আর্তনাদে কেঁপে উঠে আকাশ বাতাস। তার চেহেরাটি একটিবারের মত দেখতে বাড়িতে ভিড় করে শতশত আত্নীয় স্বজন ও এলাকাবাসী। অশ্রসিক্ত নয়নে বিদায় বলতে চেয়েও যেন বলতে পারছিলনা স্বজনেরা।
অসুস্থ বাবা নুরুল আলমের কাঁধে সন্তানের লাশ এযেন দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি বোঝার ভার। পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ বাবার কান্নায় যেন গোটা বাড়িতে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে পড়েছে। হাউমাউ করে সবাই প্রবাসী কাউসারের জন্য কান্নাকাটি করেছে।
কাউসারের জানাজার নামাজ পড়তে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন তার এলাকার মানুষেরা অসংখ্য আত্মীয় স্বজনরা এই ঘটনায় শোকাভিভূত সবাই। রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রবাসী কাউসারকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে কর্মস্থলে রহস্যজনক ভাবে রাউজানের যুবক মো.কাউসারের (২৬)রে মৃত্যুর খবর পান তার পরিবার।
ওমানের কিছু প্রবাসী সূত্রে মৃত্যুটিতে গাড়ি চাপা বলা হলেও তার কর্মরত গ্যারেজ কর্তপক্ষের দাবী ছিল স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে।
তবে নিহতের জেঠাতো ভাই জাহাঙ্গীর আলমসহ তার আত্মীয় স্বজনরা তার মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে দাবী করেছেন। নিহতের মাথা ও বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নিহতের বাবা নুরুল আলম অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলেকে সেখানে কেউ ষড়যন্ত্র করে হত্যা করে স্ট্রোক বলে চালিয়ে দিচ্ছে। ঘটনার সিসি টিভির সঠিক চিত্র না দেখানো, লাশ উল্টে পড়ে থাকা, কাজের সময় নির্দিষ্ট পোষাক না থাকা সহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেন স্বজনেরা।
তার বাবা ও এলাকাবাসী অভিযোগ তুলে বলছেন, কোনো প্রবাসী কাজে থাকার সময় তার গায়ে সেই দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী কাজের পোশাক থাকার কথা কিন্তু ঘটনার সময় তার পরনে পোশাক ছিলনা। শুধু মাত্র লুঙ্গি পড়া অবস্থায় দেখা যাই। সবাই মনে করছেন এই ঘটনায় কোনো রকম রহস্য রয়েছে। তারা দাবি করেন যেন এই ঘটনার সঠিক বিচার চেয়েছে এলাকাবাসী।
নিহত কাউসার রাউজান উপজেলার রাউজান সদর ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল আলমের একমাত্র পুত্র সন্তান।
অভাবের সংসারে আলো ফোটাতে ২বছর আগে এবং সর্বশেষ ১৪মাস আগে ওমান যান তিনি। উপযুক্ত ৩ বোন এখনো ঘরে। ভাইয়ের উপর্জানের টাকায় আদরের বোনদের বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন। অসুস্থ বাবা মাকে চিকিৎসা করা কিছুই করে যেতে পারেনি রাউজানের ওমান প্রবাসী কাউসার। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।