রাউজানে চলছে আমন ধানের ফসল তোলার উৎসব
আমির হামজা, রাউজান:: চট্টগ্রামের রাউজানে আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি ও রোগবালাই কম হওয়ায় পাকা আমন ধানের শীষে যেন দোল খাচ্ছে উপজেলার কৃষকের স্বপ্ন।
ইতিমধ্যে মাঠে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তবে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সৃষ্ট দমকা হাওয়া আর বৃষ্টির কারণে দুই দিন বন্ধ থেকে আবারো শুরু হয়েছে কৃষকদের ধান ঘরে তোলার কাজ।
কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। আমনের নতুন ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত এক করে নিরলস ভাবে কাজ করছেন কৃষক কৃষাণীরা।
এবছর শুরুর দিকে বৃষ্টির অভাবে মলিন মুখে চাষ শুরু করলেও ধান ঘরে তোলার সময়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। এবার বর্ষা দেরিতে শুরু হওয়ায় চাষের প্রথমের ধাপগুলো পাড় করতে বেগ পেতে হয়েছে কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, এবার ১২হাজার ১০হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়। যার ৬০০ হেক্টরের মত ইত্যেমধ্যে কর্তন শেষ হয়েছে। চলতি সপ্তাহে মোট চাষের ১০ শতাংশ কর্তন সম্পন্ন হবে।
উপজেলার উঁচু এলাকায় বিশেষ করে হলদিয়া, ডাবুয়া, রাউজান সদর, কদলপুর, পাহাড়তলী, বাগোয়ান ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার কিছু অংশে ইতিমধ্যে প্রায় ধান পরিপক্ক হয়েছে। বাকি এলাকায় খানিকটা দেরিতে রোপন এবং ধানের জাতের ভিন্নতার কারণে ১৫দিন থেকে ১মাস সময় লাগবে ধান পাকতে।
এবার ১১হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে উফশী, ২৮০ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড ও ১৯০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান চাষ করা হয়েছে।
যারমধ্যে পাজাম, ব্রিধান ৮৭, ব্রিধান ৪৯ জাতের ধানের কর্তন শুরু হয়েছে। এবার প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিকটন ফসল (শুকনো ধান) উৎপাদন আশা করা যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা খুশিমনে ঘরে তুলছে নতুন শস্য। কিছু কৃষক একই জমিতে শীতকালিন শাকসবজি চাষের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। উপজেলার মোট ৩৪হাজার ৫শ ৪০ কৃষি পরিবারের প্রায় ১৮হাজার কৃষক আমন চাষের সাথে জড়িত।
কথা হয় বাগোয়ান ইউনিয়নের সৌখিন কৃষক নেজাম উদ্দিনের সঙ্গে তিনি বলেন, ৫০কানি জমিতে চাষ করেছেন তিনি। গতবারের চেয়ে ফলন বেশি হয়েছে, শ্রমিকের মুজুরিও কম আছে। ভাল দামে বিক্রি করতে পারলে লাভবান হওয়ার আশা করেছেন তিনি।
“তবে মঙ্গলবার রাত থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও গুরি গুরি বৃষ্টি হওয়া কিছুটা বিপাকে পড়েছে কৃষক।”
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.মাসুম কবির বলেন, উপজেলা জুড়েই আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা উৎসবমুখর পরিবেশে নিজ নিজ জমি হতে ধান কেটে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন। চলতি রোপা আমন মৌসুমে উপজেলায় আমন চাষে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হতে চলেছে। কৃষকদের সব সময় বিভিন্ন পরামর্শ এবং সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ২০০ হেক্টর জমির ধান নুয়ে পড়েছে। তবে এতে তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যেসব ধান কাঁচা রয়েছে সেগুলো গুচ্ছ আকারে তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। সূর্যের আলো পেলে এসব ধানগাছ দাঁড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন এবার আমনে বাম্পার ফলন আশা করা যাচ্ছে।