দুর্গম পাহাড়ের চুড়ায় গিয়ে কেন আত্মহত্যা?
আমির হামজা, রাউজান:: ১১ ডিসেম্বর সোমবার সকালে ব্যাংকে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী(৬০)।
গতকাল ১২ ডিসেম্বর মঙ্গালবার তার লাশ পাওয়া গেল বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দুরে দুর্গম পাহাড় চড়ায় একটি রাবার গাছের ঢালে ঝুলন্ত অবস্থায়।
পুলিশ এই ঘটনাটিকে প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা দাবি করলেও প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকার মানুষের কাছে এই নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। তারা প্রশ্ন তুলেছে আত্মহত্যা হলে বয়ষ্ক ব্যক্তি বাড়ি থেকে বহুদুরের দুর্গম পাহাড়ের চুড়ায় গিয়ে কেন আত্মহত্যা করবেন? তাছাড়া যে গাছের ডালে লাশ ঝুলন্ত ছিল, সেই ঝুলন্ত লাশটির পা মাটির সাথে কেনই বা লাগানো ছিল?।
খবর নিয়ে জানা যায় হাসান চৌধুরী উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নে এক নম্বর ওয়ার্ডের আলম বাড়ির মৃত আবুল খায়ের চৌধুরীর ছেলে। দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক হাসান বহু বছর যাবত প্রবাস জীবনে কাটিয়েছিলেন। প্রবাস থেকে ফিরে তিনি কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়া এলাকার সত্যপীর মাজারের কাছে এক ওয়ার্কশপ খুলেছিলেন। অজ্ঞাত কারণে বছরখানেক থেকে সেই ওয়ার্ক শপ বন্ধ করে দিয়ে বাড়িতে চলে এসেছেন।
ইউপি সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ হাসেম বলেছেন গত তিন মাস আগেও হাসান চৌধুরী অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীদের হাতে তিন দিন জিম্মী অবস্থায় ছিলেন। ফিরে এসেছিলেন মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়া অবস্থায়। অত্যান্ত ধর্য্যশীল ও গম্ভির স্বভাবে এই লোকটির নিজের মধ্যে সবকিছু চাপা রাখতেন। কোনো সমস্যার কথা কারো সাথে শেয়ার করতেন না। একারণে ফাঁসীতে ঝুলে তার মৃত্যু নিয়ে সকলের কাছে রহস্যাবৃত।
পুলিশ ও এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত সোমবার সকালের দিকে হাসান ব্যাংকে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন, দুপুরের দিকে বাড়িতে না পৌঁছলে পরিবারের সদস্যরা তার মোবাইলে ফোন করে। ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেলে তার সন্ধান পেতে সম্ভাব্য সব জায়গা খুঁজেও সন্ধান পায়নি। সিদ্ধান্ত ছিল মঙ্গলবার সকালে থানায় নিঁেখাজ জিডি করবেন।
এরমধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাবার বাগানের এক শ্রমিক বাগানে কষ আহরণ করতে গিয়ে দেখে রাবার বাগানের একাশিয়ার ব্লক এর মুক্তির আলো প্রজেক্টের একটি রাবার গাছের সাথে তার এক ব্যক্তির মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।
বিষয়টি ওই শ্রমিক বাগানের এক সুপারভাইজারকে জানালে তিনি রাউজান থানাকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে নিহতের পরিবার ছুটে গিয়ে হাসান চৌধুরীর লাশ সনাক্ত করে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঝুলন্ত মরদেহটি উদ্ধার করে। নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে আত্মহত্যা। এই পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে এই পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা লাশ ময়নাতদন্তর ছাড়া নিয়ে যেতে চেয়েছিল। পুলিশ আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।