রাঙ্গুনিয়া বরই চাষে ভাগ্য বদলে গেছে বিদেশ ফেরত রশিদের
চলতি বছরে তিনি ১০ লাখ টাকার বরই বিক্রির আশা
আমির হামজা, রাউজান:: ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় গিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। প্রায় ১৩ বছর প্রবাস জীবনে তাঁর ভাগ্য পরিবর্তনে বড় বাধা হয়ে পড়ে করোনা। করোনার সময়ে কাজ হারিয়ে তিনি দেশে চলে আসেন। দেশে এসে মিজানুর রশিদ সিদ্ধান্ত নেন, নিজের খালি জমিতে বরই চাষ করার। বরই চাষ করে তিনি আবারও বিদেশ চলে যান। সেখানে তাঁর ভাগ্যর চাকা পরিবর্তনা হচ্ছেনা। তিনি আবারও সিদ্ধান্ত নেন দেশে চলে আসবেন। দেশে এসে আরও বড় পরিসরে বরই চাষের পরিকল্পনা করেন তিনি। বর্তমানে রশিদের সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রমে তিনি এখন সফল একজন বরই চাষি। তিনি গত ১৩ বছরে প্রবাসে যেটি করতে পারেননি, বর্তমানে দেশে এসে গত দুইবছরে বরই চাষ করে ব্যাপক সফলতার মুখ দেখছেন।
এ ব্যাপারে সফল বরই চাষি ও তরুণ উদ্যোক্তা মিজানুর রশিদ বলেন, ‘রোপণের প্রথম বছর এই বাগানের প্রায় চারশতাধিক বরই গাছ হতে প্রায় ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বরই বিক্রি হয়। চলতি বছরে তিনি ১০ লাখ টাকার বরই বিক্রির আশা করছেন। এই বাগানে তাঁর প্রায় ৬ লাখ টাকা মতো খরচ হয়েছে বলে তিনি জানান।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা সত্যপীর মাজার সংলগ্ন কাপ্তাই সড়কের দক্ষিণ পাশে বর্তমানে তাঁর এ.এস.এগ্রো বাংলাদেশ নামের বরই বাগানটি মানুষের নজর কাড়ছে। প্রায় ৪ কানি জমিতে দুই’টি বরই বাগান করা হয়েছে, সেখানে রোপণ করা হয়েছে বল সুন্দরী ও ভারত সুন্দরী জাতের বরই গাছের চারা। এই বরই যেমন রসালো, তেমনি মিষ্টি।
সরেজমিনে মিজানুর রশিদের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানজুড়ে চলছে বরই সংগ্রহের কারে। সংগ্রহ করা পরিপক্ব বরই নির্দিষ্ট স্থানে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। পরে আশাপাশের বাজারে বিক্রির উদেশ্য চলে যাচ্ছে। স্থানীয় পাইকাররা বাগানে এসে বরই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বাগানে বরইয়ের ভারে প্রতিটি গাছ মাটিতে নুয়ে পড়ছে। অবস্থা এমন যে, গাছের পাতার চেয়ে গাছে বরই বেশি দেখা যাচ্ছে। বরই গুলো খেতে যেমন মিষ্টি দেখতে আপলের মতো মনে হবে।
বাগানের চারপাশে বেড়া দেওয়া রয়েছে। পাখি ঠেকাতে সারা ক্ষেতের ওপর দিয়ে নেট জাল দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। এতে করে কোনো পাখি আর ক্ষেতের বরই নষ্ট করতে পারছে না। মিজানুর রশিদের বরই বাগান দেখতে নানা স্থান থেকে লোকজনের প্রতিদিন আসছেন। যাওয়ার সময় কেউ কেউ হাতে করে গাছপাকা বরই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আবার বরই খেয়ে সখিন চাষি রশিদের ব্যাপক প্রশংসা করছেন।
তিনি আরও বলেন, জীবিকার তাগিদে প্রবাসে ১৩ বছর কঠোর পরিশ্রম করেও ভাগ্য বদলাতে পারেনি। কিন্তু আমি কখনো হতাশ হয়নি, আমি মনে করি এই যুদ্ধে আমি সফল হয়েছি। তিনি বলেন বল সুন্দরী ও ভারত সুন্দরী জাতের বরই চাষে দ্রুত ফলন মিলে। বর্তমানে আমার এ বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪ নারীর। এখানে কাজের টাকায় চলছে তাদের সংসার। আগামীতে আমার এই বাগানের পাশে আরও বড়কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি সেখানে মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বর্তমানে বেকার যুবকদের মাঝে মিজানুর রশিদ এক অনন্য উদাহরণ বলে বনে করছেন এলাকার মানুষ।