পোশাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা
মারিয়াফ রাখী:: ব্যক্তি স্বাধীনতা বা পোশাক নিয়ে কিছু নারী নিজেকে জনসম্মুখে যেভাবে উপস্থাপন করছে, এটা কখনোই একজন নারীর কাম্য হতে পারে না, অন্তত আমাদের দেশ ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে।
ধ্রুপদী কাহিনীর চরিত্র বা নৃত্যের কলাকুশলীদের মতো সাজ পোশাক নৃত্যনাট্য ও ভারতীয় ইতিহাসেই শোভা পায়।
আদিবাসীদের কথা ভিন্ন, এটাই তাদের সংস্কৃতিতে ধারাবাহিক ভাবে চলে আসছে এবং আমি তাদের সম্মান করি।
আমাদের বর্তমান সমাজে নারীর অনাবৃত সুডৌল বক্ষ কখনোই গ্রহনযোগ্য হবে না।
তাছাড়া আমি নিজেই নিজেকে সবার ভোগের বস্তু বানাতেও তো পারি না! অবশ্যই আমি নারীদের ব্যক্তি স্বাধীনতার বিপক্ষে নই। তাই বলে নিজেকে অর্ধউলঙ্গ করে সবার চোখের লিপ্সা মেটাতেও রাজি নই।
কিছু বিষয় একান্ত নিজের মানুষটির কাছে প্রকাশ করায় যে মাধুর্য ও সৌন্দর্য আছে সেটা সার্বজনীন হয়ে গেলে ম্লান হয়ে যায়।
প্রকৃতিগত ভাবেই বিপরীত লিঙ্গের সাথে স্বভাব ও আচরনে তফাৎ তো আছেই। পুরুষ যতটা খোলামেলা হতে পারে সহজেই, একজন নারী সেভাবে পারে না, সৃষ্টির রহস্যই এখানে।
যেমন কথার কথা… আমি আমার ভালবাসার পুরুষটির খুশির জন্য তার সামনে নিজেকে অনেক রূপে সাজাতে পারি, সিগারেট, মদও শেয়ার করতে পারি এতে আমার ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটায় শুধু মাত্র কাঙ্খিত মানুষটির জন্যই।
কিন্তু তা যদি পথে ঘাটে হাজার দর্শকের চোখের খোরাক মেটানোর মতো হয়ে যায় সেটা আমি ব্যক্তিগত ভাবে অন্তত সাপোর্ট করতে পারছি না।
আমাদের নানী দাদীরা সবাই কিন্তু ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পড়তেন না। আর আমার জানামতে তারা বর্তমান নারীদের মতো প্রয়োজনের তাগিদে এভাবে কোনদিন রাস্তায় বেরও হতেন না।
কিছু মানুষদের ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রচলিত ছিল, সে সময় তাদের সামাজিক অবস্থান, পরিবেশ ও পরিস্থিতি তেমনই ছিল।
আমার কথার সারমর্ম হচ্ছে, আমাকে যে পোশাকে মানাবে, সেটা আমি পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিধান করবো, কিন্তু নিজেকে উলঙ্গ করে নয়, সবার চোখে সস্তা ভোগের পন্য হিসেবেও নয়। অন্যের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই, আমি আমার সংস্কৃতি, সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে চলবো।
যে সময়ের নারীদের উদাহরন টেনে এনে আজ তারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে, ঠিক সে সময়ের ঠাকুর বাড়ির বউ ঝিদের পোশাক, কিংবা বনেদী বাড়ি, বা সাধারন ঘরের মেয়েদের পোশাক সম্পর্কে ধারণা নিয়ে কথা বলতে হতো, তাহলে এতো মতবিরোধ হতো না।
সেসময় একটা শ্রেনী একরকম উপায়হীন ও বাধ্য হয়েই ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পড়তেন। ইতিহাস পুরোপুরি জেনে উদাহরণ দিতে হবে। পোশাকের স্বাধীনতা মানে কিন্তু নিজের শরীরকে এক্সপোজ করা নয়।
অনেকেই হয়তো আমার কথা শুনে বলতে পারেন তাহলে আমি নিজে কেনো পর্দা করি না, বা হিজাব পরি না….! হিজাব আর বোরখা পড়লেই নিজেকে আবৃত করা যাবে তা মনে করি না আমি।
আমি আমার পছন্দ মতো পোশাকে এমনভাবে নিজেকে সাজাবো যা অন্যের চোখের লিপ্সা মেটাবে না এবং অবশ্যই তা পরিবেশ পরিস্থিতি উপযোগী হবে।
আমাদের দেশের বহু সংস্কৃতি ও ধর্মের মানুষের বসবাস। আমি সবার রীতিরেওয়াজ ও পোশাকের প্রতি সম্মান রেখেই কথাগুলো বলছি। যেমন আদিবাসিদের পোশাক নিয়ে কিন্তু কোনো অভিযোগ নেই কারন এটাই ওদের কালচার, এভাবে দেখেই অভ্যস্ত পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও সমতলবাসী।
আমি শাড়ি, প্যান্ট, টপস, টিপ, সিঁদুর যাই পড়ি সেটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দ তা নিয়ে কারও মন্তব্য গ্রহনযোগ্য নয়। সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা।
শুধু অর্ধউলঙ্গ হয়ে কি দরকার অন্যের চোখের লালসা মেটানোর? কারন এদেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি জোর করে বদলানো সহজ না। তবুও আমি মন থেকে চাই, একটি নারীকে কামুক দৃষ্টিতে না দেখে একজন মানুষ হিসেবে দেখতে শিখুক। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাক।
আমি জিন্স পড়ি কিন্তু কখনোই তা আমার বডি পার্টসকে এক্সপোজ করে না। হাফ স্লিভ পোশাকে কখনো পাবলিকলি আসিনি তার বড় কারন আমাদের এই নোংরা দৃষ্টিভঙ্গির কারনে , আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবো না বলেই।
আসলে বিষয়টি ঠিক তাও না, শর্ট টপস, স্লিভলেস পড়তেই পারে, যার যার বয়স ও রুচি অনুযায়ী, কিন্তু নিজের বডি পার্টস এক্সপোজ করে অর্ধউলঙ্গ হয়ে নয়, বিশেষ করে যেদেশের সংস্কৃতিতে এধরনের লেবাসে নারীদের দেখে পুরুষরা অভ্যস্ত নয়…জোর করে আর যাই হোক মানসিকতা বদলানো যায় না, সেখানে সমস্যার সৃষ্টি তো হবেই!
কথায় আছে না… ‘য্যায়সা দেশ অ্যায়সা ভেস ‘!
আমার জীবন যাপন ও পোশাক নিয়ে যেমন কোনো পুরুষের মন্তব্য সহ্য করবো না, তেমনি নিজেও সেধে পুরুষের মনোরঞ্জনের পণ্য হবো না, দ্যাটস ইট।
মারিয়াফ রাখীঃ লেখক, সংগঠক ও অধিকারকর্মী।