বসন্ত এসে গেছে । রেহেনা আফরোজ
রেহেনা আফরোজ:: “মধুর বসন্ত এসেছে, মধুর মিলন ঘটাতে/ মধুর মলয়-সমীরে, মধুর মিলন রটাতে।” আহ! মধু মধু!! কি সুন্দর লিখে গেছেন কবিগুরু। কি সুন্দর রূপ পাচ্ছে চারপাশ!
আমার রাউজান সরকারি কলেজ। চারপাশে পিংক আভার আস্তরণ। ভিতরে দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে সবুজ শোভা। সুশোভিত ক্যাম্পাস আরো রূপ-মনোহরা এই বসন্তে। পুষ্প-পল্লবে বলীয়ান বিদ্যাপীঠ। মাঠে ঘাসের বুকে শিশিরের ¯েœহের ছাপ। তাই বসন্তটা আমাদের আরো বেশি ছুঁয়ে যায়। এবারো সেই বসন্ত দাঁড়িয়ে দুয়ারে।
আসলে বসন্ত এমনই। নিজ দ্বায়িত্বে চলে আসে। আমরা ধন্য হই। তাই কবিতা-গানে আমরা বসন্ত বন্দনা করি। গ্রামের বাউল যেমন গেয়ে উঠেন যখন গাইছেন, ‘বসন্ত বাতাসে সইগো, বসন্ত বাতাসে ,বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে, সইগো বসন্ত বাতাসে…’, তেমনি নাগরিক কবির হাতেও ফুটে উঠে- ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত।’
অনুপম রায়ও সুন্দর ছন্দে বলেছেন,‘ বাতাসে বহিছে প্রেম/নয়নে লাগিলো নেশা/ কারা যে ডাকিলো পিছে,/ বসন্ত এসে গেছে..।’ কবিগুরুর সুর বলে যায়, ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়।” প্রেম ও দ্রোহে কাজী নজরুল লিখেছেন – ‘বসন্ত আজ আসলো ধরায়, ফুল ফুটেছে বনে বনে, শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায় ফাল্গুনী মোর মন বনে।’ অথবা ‘বসন্ত এলো এলো এলোরে, পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহুরে।’
শীতের উত্তরে বায়ুপ্রবাহের পর দখিনা হাওয়া আর স্বস্তিকর নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া সঙ্গে নিয়ে আগমন ঘটে বসন্তকালের। যদিও বসন্তের বাতাস স্থির থাকতে চায় না- তার মধ্যে কাজ করে দুরন্তপনা! আসলে বসন্তের বাতাস হলো আউলা বাতাস।
বাংলাদেশের ঋতুচক্রে বসন্তকালই সম্ভবত সবচেয়ে স্বল্পকালীন। বর্ষপঞ্জির পাতায় বসন্তকে ফাল্গুন ও চৈত্র মাসের অধীনে রাখা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ ঋতুর স্থায়িত্বকাল এক বা অর্ধ মাসের বেশি নয়। তবে ক্ষণকালের এই পটপরিবর্তনই প্রকৃতিতে এনে দেয় স্নিগ্ধতা ও সজীবতার এক নতুন মাত্রা।
বসন্তের মনকাড়া প্রকৃতি- পুষ্পপল্লবে ভরা গাছগাছালি কোকিলের সুমধুর কণ্ঠে যেন জোয়ার এনে দেয়। কুহু তানের সুরলহরিতে সে মাতিয়ে রাখে সারা পাড়া। বৃক্ষ থেকে বৃক্ষে- এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে উড়ে গেয়ে বেড়ায় সুখের গান। ভ্রমরের গুঞ্জন-পাপিয়ার পিউ পিউ ডাক যেন কোকিলের কুহুতানে একাত্ম হয়ে মুখরিত করে তোলে চার পাশ। আম বাগানে-তরুলতা বনে পাখির কলরবে সৃজিত হয় ‘মন কেমন করা’ সুরের মূর্ছনা।
বসন্তকালে পরিবেশ থাকে স্বস্তিকর ও আনন্দদায়ক। প্রচন্ড গরমে হাঁপিয়ে উঠতে হয় না আবার ঠান্ডার তীব্রতায় লেপ-কাঁথা মুড়ি দিতে হয় না। নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়া যায় খোলা আকাশের নিচে। রাত নামলে তারার মেলা বসে। ঝলমল করে জ্বলতে থাকে আকাশের বুকে। দলে দলে জোনাকি বের হয়- যেন শত শত প্রদীপ্ত মশাল। আকাশের স্থির তারকারাজি আর জোনাকির রঙিন মশাল এক মুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা করে! মনোরম এই প্রকৃতির কারণে বসন্তকালকে ‘ঋতুরাজ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
আসুন স্বাগত জানাই ঋতুরাজ মহাশয়কে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে বলি- ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত।’
লেখক: রেহেনা আফরোজ, প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাউজান সরকারি কলেজ এবং লেখক, সংগঠক।