খবরাখবর

ফটিকছড়ি বন্যা পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন ফুটে উঠছে

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাস, ফটিকছড়ি: ফটিকছড়িতে স্মরণ কালের ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নামার সাথে সাথে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠছে। বাড়িঘর,রাস্তাঘাট,নদীর বাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই ক্ষতির চিহ্ন। এছাড়া পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে মারা গেছে চারজন।

উপজেলার বাগানবাজর, দাঁতমারা, নারায়নহাট,ভুজপুর,হারুয়ালছড়ি,নাজিরহাট, সুয়াবিল, সুন্দরপুর ও পাইন্দং সহ প্লাবিত নিচু এলাকার ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্ষতগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। কারও থাকার ঘর, কারও আবার রান্না ঘর। কারও কারও পুরো ঘর বিলীন হয়ে গেছে বন্যায়।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাত থেকে দ্রুতগতিতে পানি কমতে শুরু করেছে। সূর্যের আলো দিয়ে শনিবার সকাল শুরু। বন্যা প্লাবিত এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট থেকে সরে যাচ্ছে পানি। আজ কালের মধ্যে বেশিরভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সরজেমিনে দেখা যায়, বন্যা কবলিত গ্রামগুলো থেকে পানি নেমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র বা নিরাপদ স্থান থেকে মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। অনেকে ঘরে ঢুকে আসবাবপত্র পরিষ্কার ও শুকানোর কাজ করছে। বিশেষ করে মাঠির ঘর ও কাঁচা ঘরের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ঘর বাড়ির আঙ্গিনা কাঁদাযুক্ত হয়ে বসবসাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বাগানবাজর এলাকার মুহি উদ্দিন বলেন, বাগান বাজার ইউনিয়নস্থ আমাদের এলাকার অধিকাংশ মাটির ঘর থাকার কারণে প্রায় ৫ শতের অধিক ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে ধ্বসে পড়ে। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।

সুন্দরপুর এলাকায় বাসিন্দা দেলোয়ার বলেন, দুইদিন ধরে ঘর থেকে বের হতে পারিনি। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। ঘরের চারপাশে ছিল পানি আর পানি। অনেকে বুক সমান পানিতে এসে খাবার দিয়ে গেছে, এসব খেয়েই ছিলাম। রান্না হয়নি ঘরে। আজকে পানি কমে যাওয়ায় ঘরের জিনিসপত্র বের করে রোদে শুকাতে দিচ্ছি।

বন্যাকবলিত এলাকার হাটবাজারের বিভিন্ন দোকানেও পানি প্রবেশ করে ক্ষতি হয়েছে অনেক। কয়েকদিন ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকার পর আবারো স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

নাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী মো. নাজিম উদ্দিন বলেন,বন্যার পানিতে আমাদের বাজারের অনেকের দোকানের সব জিনিসপত্র ভিজে গেছে। দোকান পরিস্কার করার মধ্যে দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য শুরু হচ্ছে।

চট্টগ্রাম-খাগগছড়ি সড়ক,
গহিরা-হেয়াকো সড়ক, নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক, কাটিরহাট-সমিতিরহাট-আজাদীবাজার,সমিতিরহাট-নানুপুর সড়কসহ বিভিন্ন গ্রামীন সড়ক পানিতে ডুবে এবং পানির স্রোতে ভেঙ্গে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

চট্টগ্রাম-খাগগছড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি ছোট বড় গর্তের। ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

এদিকে পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত একর চাষের জমি,পোল্ট্রী ফার্ম ডেইরি ফার্ম।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, উপজেলা চাষাবাদদের ব্যপক ক্ষতি হয়েছ। পানি সরে গেলে ক্ষতির পরিমান নিরুপণ সম্ভব হবে।

এদিকে কতটি পুকুর ও মাছ চাষের প্রজেক্ট ভেসে গিয়ে কতজন মৎস্য চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এটার সঠিক পরিমাণ বন্যার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বুঝা যাবে বলে জানান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম। তবে তিনি জানান এ বন্যায় অসংখ্য পুকুর ও মাছের প্রজেক্ট পানিতে ভেসে যায়। অনেক মৎস্য চাষি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

হালদা,ধুরুং,ফেনী,সর্তাসহ বিভিন্ন খাল নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে পড়েছে।
এতে হালদার বাঁধের ২২ টির অধিক স্থানে
ভেঙ্গেছে।

এদিকে দাঁতমারা এলাকার শাহাদাত হোসেন সামি(১০),নারায়নহাট এলাকার ইমরান(২২),ভুজপুর এলাকার রজি আহমদ(৫৫) পানিতে ডুবে ও সুন্দরপুর এলাকার রমজান আলী নামে (২১) এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রী বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে নিহত হয়েছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন,আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তথ্য সংগ্রহ করছি। তবে প্রাথমিক ভাবে ২০হাজারের অধিক পরিবারের লক্ষাধিক জনসাধারন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৬০০ ঘর পুরোপুরি বিদ্ধস্ত,সাড়ে ৭ হাজার আংশিক ক্ষতিগ্রস্তের তথ্য আমাদের কাছে এসেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,পানি বেশ দ্রুত নেমে যাচ্ছে, বাগানবাজার, নারায়াণহাট, হারুয়ালছড়ি, সুয়াবিল ইউনিয়নে অনেক কাঁচা ঘর ও মাটির ঘর ভেংগে পড়েছে। উপজেলা জুড়ে রাস্তাঘাটসহ কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটি পুরোপুরি তালিকা না করে বলা যাবেনা।

তিনি আরো বলেন,দুর্গতদের জন্য দুই হাত ভরে সাহায্য এক অভাবনীয় মানবিক দেশের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। পুনর্গঠনে সহযোগিতা করার যাদের ইচ্ছা তারা এই বিষয়ে কাজ করতে পারেন তবে অবশ্যই অভারল্যাপিং পরিহার করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ করছি।

উল্লেখ্য,ফটিকছড়িতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার থেকে শুরু হওয়া বন্যায় উপজেলার ২ পৌরসভাসহ সবকটি ইউনিয়নের কমবেশি প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা জুড়ে বন্যা দুর্গত মানুষের বাঁচার আকুতি,হাহাকার,আতংকে নির্ঘুম ভয়াল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে স্থানীয় ও উপজেলার বাহিরের সেচ্ছাসেবী ও মানবিক সংগঠন গুলোর ঝাঁপিয়ে পরা ছিল চোখে পড়ার মতো। এখনো সে ধারা অব্যাহত রয়েছে।

উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ উপজেলা প্রশাসন, আইন শৃংঙ্কলা বাহিণীর পাশাপাশি এসব সংগঠন ও সেচ্ছাসেবীদের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট। যার কারনে মানুষের জান মালের অনেক ক্ষতি রোধ করা গেছে বলে সচেতন মহল মন্তব্য প্রকাশ করেন।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button