মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে তারা
মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ফটিকছড়ি: নিজের ঘর ছেড়ে যেতে চাইনি। প্রশাসনের সতর্কবাণী, জনপ্রতিনিধি ও সেচ্ছাসেবকদের পীড়াপিড়িতে শেষমেশ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জীবনের কথা ভেবে ঘর ছড়ে বাগানবাজার ইউপির বাংলা বাজারের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহ আলম উঠেন আশ্রয়কেন্দ্রে। বাড়ি ফিরে দেখে তার চিরচেনা সে মায়া জড়ানো ঘর ভেঙ্গে মাঠিতে পড়ে আছে। অজান্তেই ঝড়ে পড়ছে দু চোখের পানি। স্ত্রী সন্তানদের এখন যাবে কোথায়?
এভাবে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফটিকছড়িতে অসংখ্য মানুষের ঘর ধ্বসে পড়ে। আত্মীয় স্বজন পাড়া পড়শির ঘরে অনেকের সাময়িক আশ্রয় মিললেও অনেক পরিবারের আশ্রয় খোলা আকাশের নিচে। তারা জানেননা তাদের সে ঘরটি আর নির্মাণ করতে পারবেন কিনা।
উপজেলার বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়নহাট,সুয়াবিল, সুন্দরপুর,ভূজপুর, হারুয়ালছড়িতে বন্যা পরবর্তীতে ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়ণ সংকটে পড়েছে হাজারো মানুষ। বেশিরভাগ মানুষের শেষ সম্বল মাথা গোঁজার ঘর টুকুও শেষ হয়ে গেছে। কেউ খাওয়ার কষ্ট করছে,কেউ আবার ঘর বাড়ি হারিয়ে অনাহারে দিন পার করছে। বন্যা পরবর্তী বড় সমস্যা এখন অনেকেই গৃহহীন।
সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর ঘেষা বাগান বাজার ইউনিয়নের ৭ নং ও ৮নং ওয়ার্ডের হলুদিয়া, মাস্টার পাড়া, পূর্ব হলুদিয়া , ২৫ নং চা বাগান, আধার মানিক চা বাগান, হাবিবুল্লা চর, নলুয়াটিলা,রহমতপুর সহ এসব এলাকার অন্তত প্রায় ১২ হাজার পরিবার কম বেশি বন্যার পানিবন্দি ছিলো এবং এসব এলাকার অধিকাংশ মাটির ঘর হওয়াতে কয়েক শতাধিক মাটির ঘর বন্যার পানিতে ধ্বসে হয়েছে। এ সমস্ত পরিবারগুলার মাথা গোঁজার ঠাই হারিয়ে এখন তারা দিশেহারা।
একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে দাঁতমারা ইউপির হাসনাবাদ এবং মুজাহিদপুর এলাকায়, নারায়ণহাট ইউপির সুন্দরপুর, ভুজপুরের পূর্বভুজপুর, খৈয়া, সিংহরিয়া, সন্দ্বীপ নগর এবং হারুয়ালছড়ি, সুয়াবিল এবং সুন্দরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
বাগানবাজার ইউনিয়নের আন্ধারমানিক কটুরাম টিলার বাসিন্দা রেজিয়া আক্তারের অবস্থা আরও খারাপ। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভেঙে পড়া ঘরের সামনে একটি টিন পেতে বসে দুই সন্তানকে খাবার খাওয়াচ্ছিলেন তিনি।
কথা বলে জানা গেল, বছর দেড়েক আগে একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঘরটি দিয়েছিলেন তিনি। ঋণ শোধ না হতেই বন্যার পানিতে তার সেই ঘর ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, গত চার দিন ধরে অন্যের ঘরে থাকছি। কোনো মতে। জ্বালানোর অবস্থা নেই। শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছি।
বাগানবাজার ইউপির ৭ নং ওয়ার্ড বাংলা বাজারের বাসিন্দা শাহা আলম বলেন, ঘর বাড়ি হারিয়ে আমরা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি,ঘরবাড়ি যে করবো সে সম্বল টুকু এখন আর নেই।
একই এলাকার ইউপি সদস্য জসীম উদ্দিন বলেন, বন্যায় ফটিকছড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগানবাজার ইউপির ৭ নং ওয়ার্ড, যে গুলো সংস্কার করতে অনেকদিন সময় লাগবে।
উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ৬০০ ঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজারের মতো । তবে পুরোপুরি ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনও করা সম্ভব হয়নি।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ সচিবগণকে ২ দিনের মধ্যে নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিয়নে যাদের ঘর বাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের ঘরের ছবিসহ তালিকা প্রদান করতে বলা হয়েছে। তালিকা হাতে পেলেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে ঘর মেরামত ও পুনর্বাসনের জন্য সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে প্রাপ্ত অর্থ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী/সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে চাইলে তারা উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণ তহবিলে প্রদান করতে পারেন।