খবরাখবর

ফটিকছড়িতে হালদা নদী পারাপারে ২০ হাজার মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ফটিকছড়ি: চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে হালদা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবী দীর্ঘদিনের। কাঠ এবং বাঁশ দিয়ে বানানো সাঁকোটিও বন্যায় ভেঙে যায়। ফলে ১২ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে।

উপজেলার নারায়ণহাট ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে গেছে হালদা নদী। নদীর উত্তর পাশে নারায়ণহাট বাজার এবং দক্ষিণ পাশে ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের ১০-১২ টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস।

কালের বিবর্তনে সবকিছুই পরিবর্তন হলেও উভয় পাশের মানুষের নদী পাড়াপাড়ের জন্য এখনো গড়ে উঠেনি কোন ব্রীজ। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদী পার হয়ে এ পার থেকে ওপারে যেতে যেন তাদের হিমশিম খেতে হয়।

বিশেষত: বর্ষায় হালদা নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে পানি বৃদ্ধি পেলে স্কুল, কলেজে যাতায়াতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা প্রায় বন্ধ করে দিতে হয়। ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি হালদা নদীর নারায়ণহাট বাজার এলাকায় একটি পাকা সেতু নির্মাণের।

এতদিন কাঠ এবং বাঁশ দিয়ে বানানো সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হওয়া গেলেও সম্প্রতি বন্যায় ভেঙে যায় সেটি। তারপর নদীর পানি কমার পর ছোট একটি বাঁশের সাঁকো বানানোর পর উজানের পানিতে ভেসে যায় ওই সাকোটিও। বর্তমানে নদীর দু’পাশে রশি বেঁধে নারায়ণহাট ইউনিয়নের দু’পাড়ের মূল ভূখণ্ড যাতায়াতে এখন একমাত্র ভরসা প্লাস্টিকের একটি বোট। প্রতি মুহুর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এ নদী পাড় হচ্ছেন প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। আবার এ বোট দিয়ে পাড় হতেও দিতে হয় প্রতিজনকে ৫ টাকা করে টোল। তবে এতে বেশি সমস্যা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফটিকছড়ি উপজেলা হতে প্রায় ১৬ কি.মি. উত্তরে ৩নং নারায়ণহাট ইউনিয়নকে দ্বিখন্ডিত করেছে উত্তাল প্রমত্তা হালদা নদী। নদীর দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে জমিদার পাড়া, সুন্দরপুর, হাপানিয়া, রাজারটিলা, আনিচার খিল, খালাছি পাড়া, সন্দ্বীপ পাড়া সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম।

নারায়ণহাট ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, হাপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শামসুনাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এ গণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারায়ণহাট ফরেষ্ট রেঞ্জ অফিস অন্যতম।

নদীর উত্তর পাড়ে রয়েছে- নারায়ণহাট বাজার, নারায়ণহাট ইউনিয়ন পরিষদ, নারায়ণহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস, নারায়ণহাট ডিগ্রি কলেজ, কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহিলা মাদ্রাসা, বাস স্টেশন সহ বেশ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। দৈনিক কয়েক হাজার মানুষ পারাপার হতে হয় এ পথে।

শিক্ষার্থী, বাজারের ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড় হতে হচ্ছে হালদা নদীটি। বোটে করে একসাথে ১৫-২০ জন নদী পাড় হয় অন্যরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে জীবন ঝুঁকির পাশাপাশি সময় নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থী সহ অন্যান্যদের।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিপ্লব বড়ুয়া স্কুল থেকে ফেরার পথে বলেন- সকালে আমরা ঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছাতে পারিনা ফলে পুরো ক্লাস পায়না। এখানে এসে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নদীতে পানি কমে গেলে বোটের তলাটি নিচের বালির সাথে লেগে অনেক সময় দূর্ঘটনা ঘটে। ব্রীজটা হয়ে গেলে আমাদের এত কষ্ট হতোনা।

৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিলি বলেন- আমরা বোটের জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সকাল ৯টায় আসলে পাড় হতে হতে ১০টা বেজে যায়। সবাই লাইন ধরে জমাট বেঁধে থাকে। আমাদের পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটছে। অনেক কষ্ট হয় আমাদের। অনেক সময় কোচিং এ যেতে পারিনা।

সুমাইয়া নামের এক স্থানীয় বলেন- বন্যার সাকোঁটি ভেঙে গেছে। আমাদের সবার অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেকে বোটে উঠতে নামতে পানিতে পড়ে যায়। ছোট বাচ্চা আর বৃদ্ধরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে পাড় হয়।

ইয়াকুব নামের একজন বলেন-এ দূর্ভোগ থেকে কবে মুক্তি পাব আমরা জানিনা, এখানে অনেক বিত্তবান আছেন তারা যদি একটু বিষয়টি দেখেন হয়তো ব্রিজটা আলোর মুখ দেখবে। ছাত্রছাত্রীদের দূর্ভোগ নিজের চোখে না দেখলে বুঝা যাবেনা। এ কষ্ট থেকে রেহাই চাই!

বোট দিয়ে লোক পাড় করানোর দায়িত্বে থাকা মো: ইউনুস বলেন- প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষকে সে নদী পারাপার করায়। তার সাথে আরো ২জন এ কাজে শ্রম দিচ্ছে। বিনিময়ে প্রতিজন থেকে ৫ টাকা করে নিচ্ছে তারা। তবে পার করার সময় ঝুঁকি থাকে। অনেকে বোট এ উঠা বা নামার সময় পড়ে যায়, ব্যাথাও পায়। এ এলাকায় ব্রিজ হলে তারাও খুশি।

নারায়ণহাট কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহের বলেন- এ সেতুটির জন্য আমরা অনেক তদবির করেছিলাম। প্রায় টেন্ডার হওয়ার কাছাকাছিও গিয়েছিল। তবে এখন কি অবস্থা জানিনা। চেষ্টা করছি আমরা। শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে আসা যাওয়া সহ সকল শ্রেণীর মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। রয়েছে প্রতি মুহুর্তে দূর্ঘটনার ঝুঁকিও।

হালদা নদীর উপর উক্ত স্থানে এক’শ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী। সেতুটি নির্মিত হলে যাতায়াত ভোগান্তি লাঘবের পাশাপাশি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নতি হবে বলেও মনে করেন সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী তন্ময় নাথ বলেন, নারায়ণহাট বাজারের পাশে হালদা নদীতে একটি বেইলী ব্রীজের জন্য প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এখন কি অবস্থা জানিনা। কোন প্রকল্পে এখনো এটি দেয়া হয়নাই। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে ওই এলাকায় আপাতত অস্থায়ী একটি সাঁকো করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের সাথে আলোচনা করবো।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button