সিরাজগঞ্জে মাজারে ভাংচুর-লুটপাট-করব খুঁড়ে দেহাবশেষ নিয়ে গেল তৌহিদি জনতার
আজিজুর রহমান মুন্না, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের একটি মাজারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট করে তিনটি কবর খুঁড়ে দেহাবশেষ নিয়ে গেছে “তৌহিদি জনতার” নামে সংগঠনের মাদ্রাসার ছাত্র ও মৌলভীরা।
সোমবার (৯ সেপেটম্বর) শিয়ালকোল ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের ‘হযরত বড়পীর গাউসুল আজম দরবার শরীফে’ এ ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মাইকিং করে এবং শত শত লোক জমায়েত করে এমন তাণ্ডব চালালেও কেউ তাতে বাধা দেয়নি।
এর আগে ২৯ আগস্ট কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চল মনসুর নগর ইউনিয়নের বামনজানি বাজারের আলী পাগলার মাজার এবং ৩ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর গ্রামের ইসমাইল পাগলার মাজার ভাঙচুর করা হয়।
মঙ্গলবার সরজমিনে দেখা যায়, মাজারের ৩টি কবর খুঁড়ে হাড়, মাথার খুলি নিয়ে গেছে। দুইটি খানকা ঘর ও একটি রান্না ঘর ভাংচুর করা হয়েছে। আগুণ দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে মাজারের কাগজপত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জাম। মাজারের দানবাক্স ও ট্যাংক ভেঙে নগদ টাকাও নিয়ে গেছে তারা।
মাজারের খাদেম শিলন্দা গ্রামের হাফিজুল ইসলাম বলেন, রবিবার সকাল ১০টার দিকে শিয়ালকোল বাজারে মাদ্রাসার ছাত্র ও মৌলভীরা জমায়েত হয়ে মাইকে মাজার ভাঙচুরের ঘোষণা দেয়। এরপর তারা মিছিল করে মাজারে এসে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাণ্ডব চালায়। তারা শাবল, দুরমুজ, লোহার রড ও লাঠিসোটা দিয়ে মাজারের বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে। ৩টি পাকা কবর ভেঙে দেহাবশেষ বস্তায় ভরে নিয়ে যায়। আগত লোকজনকে তারা ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে নিষেধ করে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক থানায় জানানো হলেও পুলিশ সেখানে যায়নি। ওসি হুমায়ুন কবির লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।
মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিয়ালকোল ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি সিলন্দা গ্রামের হযরত আলী বলেন, দীর্ঘ দিন এখানে মাজারের কার্যক্রম চললেও কেউ কখনও বাধা দেয়নি। অথচ আজ প্রকাশ্যে ‘তৌহিদি জনতার’ নামে মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হচ্ছে। কবর থেকে দেহাবশেষ তুলে নেওয়া হয়েছে।
মাজারের ভূমিদাতা শাহ সুফি ফকির শহিদ শাহের বৃদ্ধা মা ওমিছা বেগম বলেন, মানুষের সাথে মানুষের শক্রতা সাথে থাকতে পারে। কিন্তু মৃতদেহের সাথে কোন শক্রতা থাকার কথা না। অথচ মাজারে হামলা চালিয়ে তারা আমার ছেলের কবর খুঁড়ে দেহাবশেষ নিয়ে গেছে। এটা কেমন শক্রতা।
মাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব কালু বলেন, স্থানীয় বহুলী ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি গ্রামের শাহ সুফি ফকির শহিদ শাহ ১৫ শতক এবং শিয়ালকোল ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের খাজা সফুরা পাগলী ৫ শতক মিলে মোট ২০ শতক জায়গা ২০০৫ সালে হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ) দরবার শরিফের নামে ওয়াকফ্ করে দিয়েছেন। এরপর থেকে এখানে দরবার শরীফের কার্যক্রম চলতে থাকে। ২০০৭ সালে রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা তরিকায়ে কাদরিয়ার অনুসারী দরবেশ আলতাফ শাহ, ২০১৪ সালে মাজারের ভূমিদাতা শাহ সুফি ফকির শহিদ শাহ এবং ২০১৬ সালে ভূমিদাতা খাজা সফুরা পাগলী মারা গেলে দরবার শরীফেই তাদের আলাদা কবর দেওয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার এবং প্রতি মাসের পূর্ণিমায় দরবার শরীফে জিকির, মিলাদ মাহফিল ও মুর্শিদী গানের আয়োজন শেষে তবারক বিতরণ করা হয়ে থাকে। প্রতি বছর ৮ সেপ্টেম্বর এখানে বাৎসরিক অনুষ্ঠান হয়। বড় বড় শিল্পীরা এখানে গান-বাজনা করতে আসেন। এখানে হাজার হাজার ভক্তের আগমন ঘটে। এতদিন এসব কাজে কেউ বিরোধিতা করেনি। কিন্তু এখন মাজারগুলোতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির বলেন, মাজার ভাংচুরের কথা শুনেছি। উনারা (খাদেম) থানায় এসেছিল, লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।