ফিচার

রাউজানের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা তানিয়ার গল্প

নিজের তৈরি তেল ও সাবান বিক্রি করে স্বাবলম্বী তানিয়া হোসেন

আমির হামজা, রাউজান: নিজের চুল পড়া সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছিলেন তানিয়া। মায়ের কাছে এ কথা বলতেই নারকেল তেলের সঙ্গে ভেষজ কিছু উপাদান মিশিয়ে বানিয়ে দিলেন চমৎকার এক দাওয়াই। সেই তেল চুলে মাখতেই কয়দিনের মধ্যে বন্ধ হলো চুলপড়া, মাথার তালুতে দেখা মিলল নতুন চুলেরও। মায়ের কাছে থেকে শিখে গেন তেল নিজেও তৈরি করলেন। ব্যবহার কওে দেখলেন একই ফল মেলে কি না।

শেষমেশ পরিচিত নারীদের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করতেই আগ্রহী হয়ে উঠলেন তারা। চেনা অনেকেই তাদেও জন্য এই ভেষজ তেল তৈরি করে দিতে বললেন। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ তখন তানিয়াকে উদ্বেল করে তুলেছে। বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত নারীদের জন্য তৈরি করে দিলেন ভেষজ তেল। ওই তেল ব্যবহার করে পরিচিতরাও উপকার পেলে তানিয়ার আনন্দের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

  • বোনের পরামর্শে শুরু করেন ভেষজ তেলের ব্যবসা। পড়াশোনার পাশাপাশি তেলসহ আরও কয়েকটি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন এই সফল তরুণ নারী উদ্যোক্তা। সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তানিয়া বিভিন্ন প্রতিষ্টান থেকে একাদিক বার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে তিনি।

বর্তমানে তানিয়ার লাখের উপরে কাস্টমার রয়েছে। ২০১৮ সালে মাত্র ৩হাজার টাকা নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। তখন পরিচিত মানুষের কাছে তার তৈরি করা তেল বিক্রি করতেন। ২০১৯ সালে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করলেও, সেই সময়ে তানিয়ার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন পরিবারের হাল ধরার মতো কেউ ছিলোনা।

একদিকে পড়াশোনা, টিউশনি আর অললাইনে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কষ্ট হতো তার। এরপরও থেমে যায়নি তিনি। একদিকে পরিবারের হালধরার মানুষটি অসুস্থ হয়ে ঘরবন্ধী। আবার শুরু হয় করোনা সেইসময় কলেজ টিউশনি বন্ধ। তখন তানিয়ার পরিবারে আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়ে পড়েন। আবারও তেল নিয়ে ব্যাপক হারে ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে সময় দিয়ে তার তেলের পোস্ট দিতে শরু করেন।

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সফলতার মুখ দেখেন তানিয়া। কাস্টমার আর কাস্টমার মাসে তার তেল অনলাইনে বিক্রির ধুম পড়ে। ছড়িয়ে পড়ে তার তেলের ব্যাপক সুনাম। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি তানিয়াকে। মাসে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি ঘরে বসে।

তানিয়ার সাথে কথা হয় আপনি কিভাবে শুরু করেন এই ব্যবসা, তিনি বলেন নিজের চুল পড়া নিয়ে সমস্যায় ভুগছিলাম। মনে ছিলো আমার মা ছোটবেলায় আমাদের এইভাবে তেল বানিয়ে আমাদের ব্যবহার করতে দিতেন। মূলত আমার মায়ের থেকে আমিও শিখি, তবে কখনো ভাবিনি এই শিখার মাধ্যমে আর বাবার অসুস্থার পর নতুন এক পথচলা শুরু হবে।

প্রথমে আমার জন্য তৈরি করি একটি তেল, আমার এতো পরিমাণ চুল পড়তো বলার মতোনা। মাত্র নিজের হাতে তৈরি তরা করা তেল কয়েকদিন ব্যবহার করার পর আমার চুল পড়াব বন্ধ হয়। একমাস ব্যবহার কারার পর মাথায় ছোট ছোট নতুন চুল গর্জাতে শুরু করে। এই সফলতা দেখেই আমি অবাক হয়ে পড়ি। পরে বিষয়টি আমার পরিচিত সবার সাথে শেয়ার করি। তারাও আমার তৈরি এই তেল ব্যবহার করে বেশ উপকার পান। তাদের কাছ থেকে রিভিউ পেয়ে আমার অনলাইনে ব্যবসা করার উৎসাহ জাগে। আমার বড় বোনের সাথে এই নিয়ে আলোচনা করি কিভাবে এই ব্যবসা শুরু করা যাই।

বোনের সাথে আলোচনা করে আমার নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে সেখানে ‘তানিয়া অর্গানিক হেয়ার অয়েল’ নিয়ে পোস্টে দেওয়া শুরু করি। প্রথম পোস্টে দেওয়ার সাথে সাথে এতোবেশি সারা ফেলে যা বলার কোন ভাষা ছিলোনা। ফেসবুকে এই কাজে তার বড় বোনের সহযোগিতার পাশাপাশি ছোট ভাইও ব্যাপক সহযোগিতা করেন তাকে। তার ছোট ভাই ও বোনের সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট থাকায় তিনি বলে আজ আমার ব্যাপক সফলতা। ৬ বছর ধরে সফলতার সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি অনলাইনে এই ব্যবসা।

তিনি বলেন, প্রায় ৪২টি প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে তার তেল তৈরি হয়। উপাদানগুলো হল মেথি, কালোজিরা, এলোভেরা, নিমপাতা, নারিকেলের তেল, ক্যাস্টর অয়েলসহ আরও বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে তৈরি করেন। তার তৈরি তেলটি ছোট বড় সবাই ব্যবহার করতে পারেন। তার তেল ব্যবহারে ফলে অতিরিক্ত চুল পড়া রোধ করে পাশাপাশি নতুন চুল গজাতে ব্যাপক সাহায্য করে। চুলের খুশকি মাথার এলার্জি দূর করে। চুলের গোড়া মজুবত করে, চুল কালো ঘন লম্বা করতে সাহায্য করেন বলে তিনি জানান।

সফল নারী উদ্যোক্তা তানিয়ার সফলতার কথা জানতে চাই তিনি বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি আমার এই কাজটি করতে কষ্ট হলেও আমি আমার কাজকে কখনো অবহেলা করিনি। আজ আমি একমাত্র সফল হওয়ার কারণ আমার পরিশ্রম আর পণ্যের মান ধরে রাখার কারণে। বাজারে তেলে ক্যামিকেল দিয়ে তৈরি কার হয়। যেটা আমাদের তেলে নেই। ফেইসবুকে আমার তানিয়া ফ্যাশন হাউজ নামে একটি পেইজ রয়েছে যেখানে প্রায় আমার ৫০হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে। বেশি কাস্টার আসে আমার ফেইসবুক পেইজ থেকে। বর্তমানে তেলের পাশাপাশি ছেলেদের শার্ট, পাঞ্জাবি, অর্গানিক শ্যাম্পু, হেয়ার প্যাক, স্কিন মশ্চারাইজার, নিম সাবান। আমার তেল আর নিম সাবানের প্রচুর কাস্টমার রয়েছে।

বর্তমানে সমাজে পিছিয়ে পড়া তরুণ নারীদের আইডল তানিয়া হোসেন। তানিয়ার সহযোগিতায় অনেকেই স্বাবলম্বী। তরুণ এ নারী উদ্যোক্তা মনে করেন, একজন পরিশ্রমী নারীদের জন্য বর্তমান সময়ের ব্যবসার জন্য বিশাল একটি প্লাটফর্ম অনলাইন মাধ্যম। এখানে রয়েছে একজন নারীর আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ। ভালো মানের পণ্য সরবরাহ করতে পারলে তানিয়া বলেন সফরতা আসবেই। পণ্যের মান ধরে রাখতে পারলে সুনামের সঙ্গে পণ্যের প্রসারও বাড়বে।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button