রাউজানে ভিয়েতনামি হলুদ মাল্টার বাম্পার ফলন
রাউজানে প্রবাসী হামিদের বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে উন্নত জাতের হলুদ রঙের মাল্টা
আমির হামজা, রাউজান: চট্টগ্রামের রাউজানে ভিয়েতনামি হলুদ মাল্টা চাষে সফল উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের ওমান প্রবাসী মো: হামিদ তালুকদার ও তার বাবা প্রবাস ফেরত মো: হারুন।
৬০ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন মাল্টা বাগান। মাল্টা বাগানের সাথে মিশ্র ফলন হিসেবে লাগানো হয়েছে আম রুপালি ও উন্নত জাতের লেবু। সারি সারি মাল্টা গাছে। থোকায় থোকায় ঝুলছে ভিয়েতনামি হলুদ রঙের মাল্টা। মাল্টার গাছগুলো মাটিতে নুইয়ে পড়েছে মাল্টার ভরে।
রাউজান উপজেলায় এই প্রথম সবুজ মাল্টার পরে হলদু মাল্টা চাষ হয়েছে। শুরুতে ৩০ শতক জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করলেও, লাভের মুখ দেখায় বাগান আরও বড় করে করার পরিকল্পানা রয়েছে তাদের।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কদলপুর গ্রামের নিছু জমিতে এই বাগানটি করা হয়েছে। প্রতিটি গাছে গাছে থোকায় থোকায় হলুদ রঙের মাল্টা ঝুলে আছে।
এলাকার লোকজন মাল্টা বাগান দেখে মুগ্ধ হচ্ছে। ফ্রিতে মাল্টা খাওয়ার পর, অনেকে কেজি দরে মাল্টা কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। বাগানে আসা লোকজন বলছেন, মাল্টাটি খেতে অনেক সুস্বাদু এবং মিষ্টি।
এ ব্যাপারে প্রবাসী মো: হামিদ তালুকদার বলেন, আমি ওমানে থাকি একদিন ইউটিউবে ভিডিও দেখছিলাম। হঠাৎ হলুদ মাল্টা বাগানের একটি ভিডিও সামনে চলে আসে। প্রায় ১০ মিনিটের ভিডিটি মন দিয়ে দেখি। পরে আরও কয়েকটি ভিডিও দেখতে থাকি। সেইদিন সিদ্ধান্ত নেই আমাদের খালি জায়গা মাল্টা বাগান করার। মোট ৬০ শতক জমিতে ৩০ শতক মাল্টা গাছ আর বাকি অংশে আম ও উন্নত জাতের লেবুর গাছ রোপণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২২ সালে শুরু করছি, এখানে প্রায় ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। প্রথম বছর আমরা মাল্টা হারভেস্ট করিনি। এই বছর হতে বাণিজ্য ভাবে মাল্টা উৎপাদান শুরু করছি। ২০০ টাকা কেজি দরে বাগান থেকে সরাসরি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে। কম দামে মাল্টা বিক্রির উদ্দেশ্য এলাকার মানুষ যেন ফরমালিন মুক্ত মাল্টা খেতে পারেন। এইবছর ১ হাজার কেজি মতো বাগান থেকে ফলন বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। প্রায় এই পর্যন্ত ৪০০ কেজি মাল্টা বিক্রি করেছেন। আশা করছি মাল্টা বিক্রি করে এই বছর প্রায় ২ লাখ টাকার বেশি আয় হবে।
এ ব্যাপারে প্রবাস ফেরত মো: হারুণ বলেন, কয়েক বছর আগে দীর্ঘ প্রবাস জীবন ছেড়ে দেশে চলে আসি। ছেলে প্রবাস থেকে বাগান করার উদ্যোগ নেন। আমিও উৎসাহিত হয় মাল্টা ও আম বাগান করার জন্য। দুই বছরে আমরা বাবা ছেলে বাগান করে সফল হয়েছি। আমাদের বাগানে কয়েকজন শ্রমিক রয়েছে তাদের সাথে আমিও বাগান পরিচর্যায় কাজ করি।
তিনি বলেন আমাদের দেশে যদি ব্যাপকভাবে মাল্টা থেকে শুরু করে সবকিছুর চাষ হলে আমদানি কমবে। অতিরিক্ত দামে কোনোকিছু কিনে খেতে হবেনা। বর্তমানে বাজারে বাহিরের দেশ থেকে আসা মাল্টা গুলো ৩ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে আমরা ফরমালিন মুক্ত দেশের মাঠিতে উৎপাদিত মাল্টা ২ টাকা দরে বিক্রি করছি।
এ ব্যাপারে রাউজান কৃষি বিভাগের (কদলপুর দায়িত্ব) উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আহমদ শাহ বলেন, রাউজানে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হারে সবুজ মাল্টা চাষ হয়েছে। কিন্তু সারা রাউজানে এই প্রথম বাণিজ্যক ভাবে ভিয়েতনামি হলুদ রঙের মাল্টার চাষ হয়েছে আমার কদলপুর ইউনিয়নে। এখনো বাগানের বয়স দুই বছর হয়নি। তবে প্রবাসী হামিদের মাল্টা বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। তারা বাবা ও ছেলে অনেক সুন্দর করে তাদের স্বপ্নের মাল্টা বাগান তৈরি করেছেন। এই মাল্টার স্বাদ অনেক মিষ্টি জাতের। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, মাল্টা একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফলন। উৎপাদন বাড়ানো গেলে, আমদানি ততই কমে আসবেই। এবং দেশের মানুষ ফরমালিন মুক্ত ফল খেতে পারবেন।