বন্ধুর স্ত্রীকে হত্যার সহযোগিতা করেন পুলিশ বন্ধু, আসামী গ্রেপ্তার
আমির হামজা, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের আনোয়ার থানায় অজ্ঞাতনামা মহিলা টিকটকার আমেনা বেগম (৩৩) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে চট্টগ্রাম পিবিআই।
ওই হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামী মোঃ জাহেদ নাবিদ (৩০)কে আটক করেছে। এছাড়াও অপর আসামী সহযোগী পুলিশ কনস্টেবল মোঃ ইরফান হোসেন ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় তাকেও আটক করা হয়।
আজ শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম পুলিশ পিবিআই কার্যালয়ের কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
জানা যায়, ৩ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার সময় চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানাধীন বৈরাগ চায়না ইকোমিক জোন অফিসের পূর্ব পাশের একটি পাহাড় ঘেরা পরিত্যক্ত ইট ভাটায় অজ্ঞাতনামা মহিলার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।
উক্ত ঘটনায় বৈরাগ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাদ্দাম হোসেন (৩৫) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় মামলা দায়ের করেন।
আনোয়ারা থানা পুলিশ পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলাকে অজ্ঞাতনামা মহিলার পরিচয় উদ্ঘাটনের জন্য পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার সহযোগিতা চাইলে পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলার ক্রাইমসীন টিম (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) এর মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা মহিলার পরিচয় শনাক্ত করেন।
নিহত আমেনা কুমিল্লার মুরাদনগর থানার নাগেরকান্দি কামাল সওদাগর এর বাড়ির কামাল উদ্দিনের মেয়ে। এবং বর্তমানে চট্টগ্রাাম নগরীর কোতোয়ালী থানার বলুয়ার দিঘীর পাড় আবুল কালাম সওদাগর এর কলোনীর বসিন্দা।
এটি চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত হত্যাকান্ড বিধায় পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলা হত্যাকান্ডটির রহস্য উদ্ঘাটনে ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে এবং মামলাটি পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা অধিগ্রহণ পূর্বক এসআই (নিঃ) মোঃ শাহাদাত হোসেনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
মামলাটি তদন্তকালে পিবিআই এর চৌকস টিম আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিগত সাক্ষ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি (চলতি দায়িত্বে) মোঃ মোস্তফা কামাল এর সার্বিক দিক নির্দেশনায়, পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার, শেখ জয়নুদ্দীন, পিপিএম-সেবা এঁর তত্ত্বাবধানে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মোঃ শাহাদাত হোসেন সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স সহ অভিযান পরিচালনা করে গত ১৮ অক্টোবর বিকালে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামী মোঃ জাহেদ নাবিদ (৩০) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। জাবেদ চট্টগ্রামের ডাবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ হাজীপাড়া নাদের বাপের বাড়ির সুলতান আহমেদের ছেলে।
আসামীর স্বাকারোক্তীতে মতে, চট্টগ্রাম শহরের কালামিয়ার বাজার থেকে ভিকটিম আমেনা বেগমকে প্রাইভেট কারযোগে বহন করে আসামী মোঃ ইরফান হোসেনের বাড়ীতে নিয়ে যায়। পরে প্রাইভেট কারের ড্রাইভার মোঃ সোহেল (৩৫) এর প্রাইভেট কারযোগে আসামী মোঃ ইরফান হোসেন ও ইয়াছিন আরাফাত সহ ভিকটিম আমেনা বেগমকে ইরফান হোসেনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া এবং ভিকটিমের স্বামী ইয়াছিন আরাফাত, গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ ইরফান হোসেন ও মোঃ জাহেদ নাবিদ গণ সহ গভীর রাতে ইরফান হোসেনের বাড়ির নিকটবর্তী চায়না ইকোনোমিক জোন সংলগ্ন পাহাড়ের দিকে যেতে দেখে মর্মে জানায়।
উক্ত ঘটনার ২ (দুই) দিন পরে পাহাড় সংলগ্ন ব্রিক ফিল্ডে ভিকটিমের মৃত দেহ পাওয়া যায় মর্মে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ জাহেদ নাবিদ (৩০) ও জিজ্ঞাসিত প্রাইভেট কার ড্রাইভার সোহেল’দ্বয়ের তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ অক্টোবর অপর আসামী পুলিশ কনস্টেবল মোঃ ইরফান হোসেন (২৯) কে তার কর্মস্থল রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার গুলশাখালী পুলিশ ফাঁড়ি হতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের নিমিত্তে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে এনে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদকালে সে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করায় তাকে একই দিন রাত সাড়ে ১১ টার সময় গ্রেফতার দেখানো হয়। সে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার বৈরাগ মোহাম্মদপুরের আবু ছৈয়দের ছেলে । বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর ডাবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট মিয়ারবাড়ির বসিন্দা।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ জাহেদ নাবিদ ও মোঃ ইরফান হোসেন’দ্বয়কে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে জানায় যে, ভিকটিমের স্বামী পলাতক আসামী ইয়াছিন আরাফাত (২৭) এবং গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ ইরফান হোসেন (২৯) ও মোঃ জাহেদ নাবিদ তারা তিনজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ভিকটিম আমেনা বেগমের স্বামী ইয়াছিন আরাফাত আমেনা বেগমের অগোচরে পুনরায় বিয়ে করলে আমেনা বেগম তা জানতে পারে এবং নতুন সংসারে ভিকটিমকে কেন্দ্র করে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হতে পারে মর্মে অনুমান করে তারা আমেনা বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নিমিত্তে ভিকটিম আমেনা বেগম (৩৩) কে বেড়ানোর কথা বলে ড্রাইভার সোহেলের প্রাইভেট কারযোগে চট্টগ্রাম শহরের বাকলিয়া থানাধীন কালামিয়া বাজার হতে আনোয়ারা থানাধীন মোহাম্মদপুর গ্রামস্থ মোঃ ইরফান হোসেনের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেখান থেকে ভিকটিমকে সুকৌশলে উক্ত বাড়ির নিকটবর্তী চায়না ইকোমিক জোন সংলগ্ন পাহাড়ে নিয়ে ঘাতক স্বামী ইয়াছিন আরাফাত সহ তার সহযোগীরা ভিকটিমের পেটে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পাশর্^বর্তী একটি পরিত্যক্ত ব্রিক ফিল্ডে লুকিয়ে রাখে। ঘটনার পর পর ভিকটিমের স্বামী ইয়াছিন আরাফাত বিদেশে পালিয়ে যায় বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ জাহেদ নাবিদ এর স্বীকারোক্তি, দেখানো ও সনাক্তমতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছুরি ঘটনাস্থলের পার্শ্বে জঙ্গলের ভিতর থেকে এবং ভিকটিমকে বহনকারী প্রাইভেটকার পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ জাহেদ নাবিদ (৩০) বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারদিন মুস্তাকিম তাসিন এর আদালতে এবং অপর আসামী পুলিশ কনস্টেবল মোঃ ইরফান হোসেন বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হারুন এর আদালতে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।