মতামত

পার্বত্য চুক্তির ২৭ বছর: শান্তি চুক্তি পাহাড়ে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ

নির্মল বড়ুয়া মিলন: পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমূন্নত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া তরান্বিত করা এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্ব-স্ব অধিকার সংরক্ষন এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তরফ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অধিবাসীদের পক্ষ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি চারি খন্ড (ক,খ,গ,ঘ) সম্মিলিত ভাবে চুক্তি করা হয়।

১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহবায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ্ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সম্পাদিত এই চুক্তিতে সই করেন।

  • ২রা ডিসেম্বর ২০২৪ সালে পার্বত্য চুক্তির ২৭ বছর পূর্ণ হয়েছে, যাকে বলা যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭তম বর্ষপূর্তি ।

এই ২৭ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কি-কি বৈষম্যের স্বীকার তা নিয়ে একটি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। তাছাড়া পার্বত্য চুক্তি বা শান্তি চুক্তির ফলে ২৭ বছরে পাহাড়ের পাহাড়ি-বাঙ্গালীরা কি পেলেন আর কি হারালেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন।

পার্বত্য চুক্তির আলোকে গঠন করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশন, পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯ (রাঙামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯, বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯) এবং এর বিভিন্ন ধারা সমূহের পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন ও অবলোপন করার মাধ্যমে গঠন করা হয় রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এর আগে থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা প্রশাসন, তিন জেলার গুইমারাসহ ২৬ উপজেলার উপজেলা প্রশাসন, তিন পার্বত্য জেলার পৌরসভা ও তিন পার্বত্য জেলার ইউনিয়ন পরিষদ বিদ্যমান। পার্বত্য চুক্তির মধ্য দিয়ে শক্তিশালী করা হয় চাকমা সার্কেল, বোমাং সার্কেল ও মং সার্কেল চীফদের কার্যক্ষমতা। এর বাইরে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় এর অধিদপ্তর/পরিদপ্তর আওতাধীন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কার্যালয় রয়েছে।

এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মূল্যায়ন কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তাকারী উপদেষ্টা কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটি ইত্যাদি। পার্বত্য চুক্তির প্রারম্ভে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, তন্মধ্যে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমূন্নত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমূন্নত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া তরান্বিত করা এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্ব-স্ব অধিকার সংরক্ষন এবং উন্নয়নের কথা থাকলেও কিন্তু কৌশলগত ভাবে পার্বত্য চুক্তির আগে এবং শতবছর ধরে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী বড়ুয়া, সাঁওতাল, অহমিয়া,চাক ও গুর্খা জনগোষ্ঠীর কথাও চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পার্বত্য চুক্তির পর থেকে প্রতিটি স্থরে এবং রাজনৈতিক ভাবে পার্বত্য অঞ্চল বসবাসরত এ সকল জনগোষ্ঠীর মানুষ প্রতি পদে পদে বৈষম্যের শিকার এবং বাঙ্গালী (মুসলামান), বড়ুয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীকে পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎখাত করার সুদুর প্রসারী ষড়যন্ত্র চলছে।

এ দিকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী ব্যবহার করে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের ভূমি কৌশলে কেড়ে নিয়ে এ অঞ্চল থেকে বিতারিত করার অঘোষিত নিয়ম চালু রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙ্গালী (মুসলমান), বড়ুয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা সংরক্ষণ হাতে গোনা।

পার্বত্য চুক্তির ২৭ বছরেও চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির তুলনায় ইসলাম ধর্মের বাঙ্গালী, বড়ুয়া, তঞ্চঙ্গ্যা,সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন ২৭ বছরে অনেক বেশী পিছিয়ে পড়েছে। কেউ মানুক বা না মানুক এটাই সত্য। পার্বত্য অঞ্চলের বসবাসরত অধিবাসীদের যে রাজনৈতিক অধিকার ছিল চুক্তির পর ২৭ বছরেও আদৌ তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে পারেনি তার মুল কারণ হচ্ছে : উগ্র সম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য ও ক্ষমতার লোভ।

পার্বত্য অঞ্চলে ৯০% রাষ্ট্রিয় সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন তিনটি জনগোষ্ঠীর লোকজন বাকি ১০% বাঙ্গালী, বড়ুয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজনের বিরুদ্ধে বিশাল ধরনের বৈষম্য পার্বত্য অঞ্চলে চলমান। যার কারণে সহজ-সরল জনগোষ্ঠীর লোকজন ছোট-ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে। আগামীতে আরো কয়েকটি জনগোষ্ঠীর লোকজন অস্ত্র হাতে তুলে নিবেনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই।

১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহবায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ্ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সম্পাদিত এই চুক্তিতে সই করেন। তখন পাহাড়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ছিলো মাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল)। অর্থাৎ মাত্র একটি আঞ্চলিক দল। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতি গত ২৭ বছরে অনেকটাই বদলে গেছে।

পার্বত্য চুক্তির এক বছরের মধ্যেই চুক্তি পক্ষের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস-মুল) সঙ্গে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মুল), রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়। ২০০৭ সালে পিসিজেএসএস-মুল ভেঙে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-সংস্কারপন্থি বা এমএন লারমা গ্রুপ), নামের নতুন দল। ২০১৭ সালে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হয়। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর তপন জ্যোতি চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামের নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এই চারটি উপ দল বা গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)। এই দলের সদস্যদের অবস্থান বান্দরবানের গহিনে। ২০১৮ সালে এএলপি ভেঙে গঠিত হয় মগ পার্টি ও কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট ইত্যাদি। তাদের অবস্থানও বান্দরবানে। তবে এই তিন দলের অবস্থান শুধু বান্দরবানে। রাঙামাটি কিংবা খাগড়াছড়িতে এদের কোনো তৎপরতা নেই।

বাংলাদেশ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করলেও সংগঠনটির দাবি তারা বাংলাদেশের কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন নয়। একইসঙ্গে তারা জানিয়েছেন, তাদের ভাষায়, “সুবিধা বঞ্চিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর জন্যে স্বশাসিত বা পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতাসহ একটি ছোট রাজ্য” (চাইলেও তারা কোন স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়নি)।

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা গেছে, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এর অস্ত্রধারী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির ভারতের মিজুরাম প্রদেশে ৩ হাজার অস্ত্রদারী সামরিক প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির সদস্যদের র‌্যাব বাহিনী গ্রেফতার করে রাঙামাটি কারাগারে আটক করে রাখছেন। কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির সদস্যরা জামিনে ছাড়া পাওয়ার তথ্য নাই। এদের নিয়ে একটি মহলের ষড়যন্ত্র চলছে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারনা।

এদিকে চলমান সংলাপ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইউপিডিএফ মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে সরকারের নিকট দলের ৮৭টি দাবিনামা পেশ করেছে।

গত ৯ জুন ২০২২ খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন ২ নং চেঙ্গী ইউনিয়নের বড়কলক এলাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমাসহ স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা মেজর (অবঃ) এমদাদুল ইসলামের কাছে এ দাবিনামা হস্তান্তর করেন।

উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা বলেছেন, গত শতকের ‘৭০, ৮০ দশকের পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে আজকের পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তর ফারাক। কিন্তু তারপরও যেন কোন কোন মহলের দৃষ্টিভঙ্গি সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। তারা ৭০, ৮০ দশকের চোখ দিয়ে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেখতে চাইছেন এবং সেইভাবে মূল্যায়ন করছেন। কিন্তু এটা স্পষ্টতই ভুল। আমাদেরকে অবশ্যই এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। কারণ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এটা বলা যায় প্রথম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।’
মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর এমদাদুল ইসলাম তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, তিনি ‘বাংলাদেশ সরকারের নিকট চুক্তি আকারে পেশকৃত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর দাবিনামা এবং তার যৌক্তিকতা’ সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন বলে জানান।

২৭ আগষ্ট- ২০২৪ তারিখে পার্বত্য চুক্তি সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। পার্বত্য চুক্তির পর পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত স্ব-স্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক উন্নয়ন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু ২৭ বছর পর সামাজিক অধিকারের বিষয়ে বলতে গেলে বরঞ্চ সংঘাত, গুম, খুন হানাহানি আশংকাজনক ভাবে বেড়েছে।

সরকার পার্বত্য অঞ্চলের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে একজন নাগরিকের জন্মগত মৌলিক অধিকার ৫টির মধ্যে অন্যতম শিক্ষার অধিকার স্থানীয়দের হাতে ন্যস্ত করে পার্বত্যঞ্চলের বসবাসরত অধিবাসীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার যে সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে। অথচ ২৭ বছর পর শিক্ষার মেরুদন্ডই ভেঙ্গে পড়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষকদের উপস্থিতি নেই। একটি বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক মিলে একজন বর্গা শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন, আর জেলা পরিষদ সমূহ ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে যাদের শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়ে থাকে তারা কখনো নিজেদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। তা ছাড়া বেশী ভাগ শিক্ষক আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছেলে,মেয়ে,আত্ময়ী-স্বজন।

পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষা খাতে যে বরাদ্ধ রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে ব্যয় করা হয় তা কেবল অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা সামগ্রী ক্রয়, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ইত্যাদি বিষয়ে সীমাবদ্ধ। কিন্তু এসবের সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা পায়না।

এছাড়া রাঙামাটি পার্বত্য জেলার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজক চাকমা স্বৈরাচারের দোসর আওয়ামীলীগের চিহ্নিত দোসর প্রকৌশলীর কারণে রাঙামাটি জেলায় সরকারী প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থাপনা সংস্কার এবং নির্মাণে যে পরিমান দুর্নীতি আর লুট-পাট হয়েছে তা তদারকির কেউ নাই।

পার্বত্য চুক্তির মারপ্যাচে স্থানীয় জনসাধারন অসহায়। শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবিক অবস্থানে ফিরে না গেলে শিক্ষা ক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীরা গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষাখাত চলে যাবে বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে।

পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারীদের অর্থনৈতিক অধিকার একটি গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে আছে। পার্বত্য চুক্তির ২৭ বছরে পার্বত্য অঞ্চলে গড়ে উঠেনি কোন মিল, কারখান ও পর্যটন শিল্পের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

চাঁদাবাজদের হাতে শতভাগ জিম্মি তার পরও কেবলমাত্র কাঠ,বাঁশ, মাছ, পাথর ও মৌসুমৗ ফল ক্রয় বিক্রয় ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামীলীগ-পিসিজেএসএস-মুল উভয়ে উদাসীন, একে অপরের ওপর দায় চাপাতে ব্যস্ত ছিলো। বৈষম্যমূলক পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ের বসবাসরত জনেগণের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এজন্য পিসিজেএসএস-মুল এবং স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ দায়ী।

পার্বত্য চুক্তির পর পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙ্গালী সকলেই আশায় বুক বেঁধেছিলো কিন্তু তাদের সেই আশায় গুড়েবালি। পার্বত্য চুক্তির পর পাহাড়ে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর লোকদের নিয়ে রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে সরকার বা পিসিজেএসএস চুক্তির বিষয়ে আস্তা অর্জন অথবা চুক্তির মৌলিক অবাস্তবায়ীত দিকগুলো সভা,সমাবেশ,সেমিনার ও আলোচনা সভা পর্যন্ত করেনি।

একটি বিষয় পরিস্কার পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের চুক্তি বাস্তবানের সাথে যুক্ত করতে স্বয়ং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-পিসিজেএসএস আন্তরিক নয়। পিসিজেএসএস-মূল যে আঞ্চলিক দল পরিচালনা করেন তাতে বৈষম্যে ভরা। গণমাধ্যমে জানা গেল ২৫ নভেম্বর-২০২৪ তথাকথিত মানবধিকার কর্মীদের পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকারে রাখার দাবিতে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যপক মুহাম্মদ ইউনুসকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন ও আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার জন্য চিঠি দিয়েছে।

তারা পিসিজেএসএস ও চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। এতে ৫টি বিষয় অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সংগঠনটি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন এবং আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরীর সই করা এক খোলা চিঠিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।

অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে উত্থাপিত ৫টি বিষয়ের মধ্যে রয়েছে-পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির পুনর্গঠন; পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে সক্রিয় করা; আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে সংলাপ; পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন; সমতলের আদিবাসীদের ভূমি ও মানবাধিকার রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ করা।

চিঠিতে এসব পদক্ষেপকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রেখে দ্রুত বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য শান্তি, ন্যায়বিচার ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের ৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- চুক্তি বাস্তবায়নে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা; পার্বত্য চট্টগ্রাম সামরিক তত্ত্বাবধান বন্ধ; আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদের ক্ষমতায়ন; ভূমি অধিকার এবং পুনর্বাসন; অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও উন্নয়ন; সমতলের আদিবাসীদের জন্য প্রতিনিধিত্বশীল শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন প্রতিষ্ঠা করা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন এবং আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী তো পার্বত্য চট্টগ্রাম বসবাসকারী নয়। তাদের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নাগরিকদের কোন সম্পর্ক নাই। তাদের সই করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কাছে খোলা চিঠি সহজভাবে মেনে নেয়ার যৌক্তিকতা আদৌ আছে কি ?

মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী পাহাড়ে বসবাসরত একটি জনগোষ্ঠীর কাছে পরিচিত বা একটি আঞ্চলিক দলের বন্ধু হতে পারেন কিন্তু তারা প্রধান উপদেষ্টা কাছে খোলা চিঠি লেখার আগে স্বৈরাচার পতনের পর পাহাড়ের সর্বশেষ অবস্থা জেনে এবং পাহাড়ে বসবাসরত অন্য সকল জনগোষ্ঠী বা অংশিজনদের মতামত গ্রহন করা উচিত ছিলো।

এছাড় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের কো-চেয়ারপার্সন এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সহ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. স্নিন্ধা রেজওয়ানা প্রমূখ তাঁরা বিশিষ্ট্যজন কিন্তু তাঁরা কেউ পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক নয়। এসকল বিশিষ্ট্যজনরা হয়তো পিসিজেএসএস এর বন্ধু কিন্তু তাঁরা আদৌ পার্বত্যবাসীর বন্ধু নয়। বিশিষ্টজনরা পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীও নয়। তাহলে এসব বিশিষ্ট্যজনরা কাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করেন পাহাড়ে বসবাসকারী জনমনে প্রশ্ন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষত্রে গত ৫৩ বছরে স্থানীয় বাঙ্গালী, বড়ুয়া, তঞ্চঙ্গ্যা,সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা প্রধান্য পায়নি। দেশ স্বাধীনের পর থেকে তারা বৈষম্যের শিকার।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সবার আগে পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙ্গালী সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, সকল জাতীয় ও আঞ্চলিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করা প্রয়োজন। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জলঘোলা করা প্রতিক্রিয়াশীল চক্রটি এক সময়ে হারিয়ে যাবে।

পাহাড়ের রাজনৈতিক স্থায়ী সমস্যা সমাধান করতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে যুক্ত করতে হবে পাহাড়ে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী পাহাড়ি-বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে। পাহাড়ের বাইরে যাঁরা বাস করেন তাঁরা কি করে বুঝবেন পাহাড়ে মূল সমস্যা কি ?
২০২৪ সালে এসে পাহাড়ের মূল সমস্যা সমুহ কি-কি ? ভূমি, আইন শৃঙ্খলা, স্থানীয় ভোটার তালিকা ইত্যাদি। ভূমি সমস্যা প্রধান।

৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পাহাড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পর চাঁদাবাজদের উপদ্রব কয়েকগুন বেড়েছে। সেই সাথে পাহাড়ে অবৈধ আধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর-২০২৪ ইংরেজি তারিখ বুধবার রাঙামাটিতে চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের নিকট লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ , রাঙামাটি।

বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ এর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, গত ৫ আগষ্ট-২০২৪ স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর নতুন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি, এ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথে আমরা যে এসেছি তা কিন্তু খুব সহজে হয়ে যায়নি, বৈষম্য ও কোটাবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায় একহাজার জন মানুষের প্রাণ গেছে। সংখ্যাটা যদি আমরা হিসাব করি মহান মুক্তিযুদ্ধ বাদে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন পরিবর্তনের জন্য বা কোন সংগ্রামের জন্য এত আত্মহতি দিতে হয়নি।
বাংলাদেশে এমন একটি সরকার গত ১৫ বছর ধরে চরম কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করে ছিলো সেই স্বৈরাচারকে উৎখাত করার জন্য ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুছ এর নেতৃত্বে রাষ্ট্র সংস্কার কাজ চলছে। রাঙামাটিতে বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজও রাষ্ট্র সংস্কার কাজে নিয়োজিত আছেন।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় কাঠ, মাছ, বাঁশ, গবাদি পশু পালন, কৃষিপণ্য ও মৌসমী ফলের চাষাবাদের ওপর এই এলাকার ৮০% মানুষের জীবন-জিবীকা নির্বাহ করতে হয়।

স্থানীয় জনসাধারন বছরের পর বছর ধরে একটি সিন্ডিকেট এর হাতে জিম্মি হয়ে আছে। পাহাড়ে সকল ক্ষেত্রে অবৈধ চাঁদাবাজী নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, স্বৈরাচার হাসিনা সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পরিবর্তীত বাংলাদেশে আর কোন চাঁদাবাজ যাতে জন্ম না নেয়, বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ প্রত্যাশা করে।

বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ আরো জানান, রাঙামাটি জেলা শহরে বসে রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির নামে প্রতিনিয়ত সাধারন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ট্রাকপ্রতি কাঠের জন্য ১৪ হাজার টাকা করে বছরের পর বছর ধরে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জোত মালিক ও রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির নাম ব্যবহার করে সাধারন কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি-কোটি টাকার চাঁদা আদায় করে স্থানীয় চাঁদাবাজদের হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। সেই সাথে বনবিভাগ এর বিরুদ্ধেও কয়েক স্তরে ঘুষ বাণিজ্যর কথাও শোনা যায়।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট সমুহ চিহ্নিত করে সমুলে এর চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ স্থানীয় সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সকল গোয়েন্দা সংস্থা সমুহ, জেলা প্রশাসন এবং বনবিভাগের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।

বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ রাঙামাটিতে চাঁদাবাজি বন্ধের আবেদন জানিয়েছেন রিজিয়ন কমান্ডার, ৩০৫ পদাতিক ব্রিগেড, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা বরাবর। আর রাঙামাটিতে চাঁদাবাজি বন্ধের আবেদনপত্রে সদয় অবগতি ও কার্যার্থে অনুলিপি কর্ণেল জিএস, ডিজিএফআই শাখা, ডেট কমান্ডার, এএসইউ শাখা, বন সংরক্ষক, রাঙামাটি সার্কেল, জেলা প্রশাসক, জোন কমান্ডার, সদর জোন, পুলিশ সুপার, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা বরাবর। বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ সংগঠকরা নিজেরা স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে আবেদনপত্র এবং অনুলিপির কপি কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করেন।

এসময় বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ, রাঙামাটির সহ সমন্বয়ক জুঁই চাকমা, উন্নয়ন কর্মী মো. নাছির উদ্দিন, ব্যবসায়ী রনি তঞ্চঙ্গ্যা, বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ এর সদস্য এমিলি চৌধুরী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
পার্বত্য চুক্তিকালিন পাহাড়ে ছিলো ১টি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। চুক্তির পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরো ৬টি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। পাহাড়ে এখন ৭টি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। কোন সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কাজ করলে ঐ কাজের ঠিকাদারকে দিতে হয় ৬% করে চাঁদা, অফিস খরচ ৩৭%। ৬% করে ৪টি আঞ্চলিক দলকে = ২৪%+ ৩৭% = ৬১%। ১শত টাকার মধ্যে ৪ আঞ্চলিক দলকে ২৪ টাকা আর অফিসকে ৩৭ টাকা মোট ৬১ টাকা। বাকি ৩৯ টাকায় কোটেশন প্রাপ্ত ঠিকাদারগণ কোন ধরনের গুণগত মানের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করে থাকেন আশা করি বুঝতে কারো অসুবিধা হবে না। কাপ্তাই হৃদে মৎস্য শিকারী, মৎস্য ব্যবসায়ী, বাঁশ ব্যবসায়ী, কাঠ ব্যবসায়ী, মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী, নির্মান সামগ্রী ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, সাধারন ব্যবসায়ী, লঞ্চ, স্পিড বোট, কাঠ, হলুদ, আদা, মৌসুমী ফল, নির্মান সামগ্রী, আন্তঃ জেলা পশু ব্যবসায়ী, মৎস্য পরিবহনকারি ইঞ্জিন বোট, বাস, ট্রাক, সিএনজি অটো রিক্সা, মাইক্রো, চাঁদের গাড়ি (জিপ), মোটরসাইকেলসহ প্রতিটি যানবাহন, গবাদি পশু, শুকর,হাঁস, মুরগী, কৃষিপণ্য, জেলা শহর ব্যতিত প্রতিটি বাজারের দোকানদার, ব্যাংক, বিমা, সুদের কারবারি এনজিও, হোটেল-মোটেল এবং প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা দিয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

আঞ্চলিক দল সমুহের যে কোন অনুষ্ঠানে পাহাড়ে বসবাসকারিদের গুনতে হয় বাড়তি চাঁদা। এসব আঞ্চলিক দল গুলো হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল),পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সংস্কারপন্থী (পিসিজেএসএস-এমএন লারমা), ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মুল), ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট গণতান্ত্রিক (ইউপিডিএফ-সংস্কাপন্থী) আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) মগ পার্টি ও কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট ইত্যাদি। এছাড়া সরকারি বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হুমকিতে তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বসে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না। এলজিইডি, পিডিবি, গণপুর্ত, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগ চাঁদাবাজদের কারণে ঠিক সময়ে উন্নয়ন কাজ শুরু এবং শেষ করতে পারছেন না।

একজন সাংবাদিক সব সময় সব সত্য কথা প্রকাশ করতে পারেনা। আমি তার বাইরে নয়।
এর সহজ সমধান; পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর প্রধান পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সভাপতি শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা প্রকাশ সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এর চেয়ারম্যান হিসাবে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় এবং পিসিজেএসএস এর দলীয় সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এর সদস্য হিসাবে রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। তাদের রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা বাতিলসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণঃমূল্যায়ন করা। একটি স্বাধীন দেশে আপনারা রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন আর দায়িত্ব পালন করবেন না এটা তো হতে দেয়া যায় না। মেনে নেয়া যায় না।

স্থানীয় ভোটার তালিকা প্রনয়ন। ১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহবায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ্ সম্পাদিত চুক্তিতে সই করেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও তাদের দলীয় সরকার একনাগারে ১৬ বছর ক্ষমতাসীন থাকার পরও যখন সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক পাহাড়ে স্থানীয় ভোটার তালিকা প্রনয়নের কাজ শুরু করেন নাই তাহলে আগামী ২শত বছরেও স্থানীয় ভোটার তালিকা প্রনয়নের শুরু করার সম্ভবনা নাই। সম্পাদিত চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী বলে স্থানীয় ভোটার তালিকা প্রনয়নের দাবিতে অনড় ছিলেন পিসিজেএসএস-মুল সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা।

রাষ্ট্রীয় আইনে এবং করোনা মহামারীর সনদপত্র ব্যতিত চিকিৎসার জন্য ভারত গমনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে সম্পাদিত চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা প্রকাশ সন্তু লারমাকেও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে প্রচলিত নিয়ম মেনে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহন করতে হয়েছে।

পাহাড়ের সাধারন জনগণ ক্রমেই জিম্মি হয়ে পড়েছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা, দল ও উপদল সমুহের কাছে। গণমাধ্যমে পার্বত্য চুক্তির পক্ষে যাতে জনমত গড়ে না উঠে, পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকদের সমিতি, কমিটি, প্রেসক্লাব ও সংগঠন সমুহে বহিরাগত উগ্রসম্প্রদায় ব্যতিত স্থানীয় প্রগতিশীল কোন সাংবাদিক যেন সদস্য হতে না পারে তা ঠিক করে দেয় সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।

কেউকেউ গণতন্ত্রের লেবাসধারী আপাদমস্তক সুবিধাবাদী, নীতিভ্রষ্ট, বহুরূপী ডিগবাজিতে পারদর্শী ও জনগণের শত্রু। আওয়ামীলীগের দোসররা ‘মুক্তিযোদ্ধার’ নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন টকশো, মিডিয়ায় ‘নিরাপত্তা বিশ্লেষক’ ‘গবেষক’–ইত্যাদি নানা তকমা লাগিয়ে লোকজনকে বিভ্রান্ত করেন। আত্মকাহিনীর ফিরিস্তি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলন সংগ্রাম সম্পর্কে নিম্নমানের ও বিতর্কিত পুস্তিকাও রচনা করেছেন।

এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিৎ কারণ তারা সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী। গোয়েন্দা সংস্থার ইচ্ছা বা মতের বাইরে পার্বত্য অঞ্চলের জনস্বার্থে কোন সংবাদ পরিবেশন বা প্রকাশ করলে সেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তাদের চক্রের লোক দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বানোয়াট হয়রানি মুলক মামলা দায়ের, পুলিশ এবং আওয়ামীলীগের ক্ষমতাসীদের গুন্ডা-মাস্তান বাহিনী দিয়ে ঐ সাংবাদিকের বাড়ি-ঘরে গভীর রাতে হামলা-ভাংচুড় করে।

সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় সেই সাংবাদিককে ২৪ মাসের দুধের শিশু-স্ত্রীসহ মিথ্যা মামলায় জেলখাটানো তার পর র‌্যাব-৭ এর মেজর ফাহিমকে দিয়ে সেই সাংবাদিক-কে অপহরণ করে সিলেট হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে চোখ বাঁধাবস্থায় ফেলে দিয়ে আসার নজির দেশের মানবিধাকারের জন্য মোটেও শুভ লক্ষণ নয়।

২৭ বছরে পার্বত্য অঞ্চলে সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু সংবাদিকতার মূল কাজ যে পিসিজেএসএস-মূল, সেনাবাহিনী, বেসামরিক প্রশাসন ও ক্ষমতাবানদের কাছে প্রশ্ন করার সেই ক্ষমতা মোটেই বাড়েনি।
আয়নাঘর এর কারণে ডিজিএফআই নিয়ে জনমনে বিরুপ ধারন জন্ম নিয়েছে।

গত ২৭ আগস্ট-২০২৪ ইংরেজি তারিখ জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল জুলকিফলী আরমান তার দুই জওয়ানসহ সাদা পোষাকে উপজেলা সদরে সান্ধ্য ভ্রমণে বের হন। এ সময় রাস্তার পাশের একটি দোকানে থাকা তিন পুলিশ সদস্য দয়াল চাকমা, তুহিন চাকমা ও নিরধ কুমার চাকমা তাকে সালাম না দেয়ায় সেনা সদস্যরা তাদেরকে মারধর শুরু করে। এতে পুলিশ সদস্যরা আত্মরক্ষার চেষ্টা চালালে হামলা হাতাহাতির রূপ নেয়। এরপর জোন কমান্ডার ক্যাম্পে ফিরে যান, তবে কিছুক্ষণ পর তিনি তার দলবল নিয়ে জুরাছড়ি থানায় হাজির হন এবং কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে থানা আক্রমণ করেন।

এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা উক্ত তিন পুলিশ সদস্যকে প্রচণ্ড মারধর করেন এবং আটক করে জোনে নিয়ে যান। সেনারা থানায় ব্যাপক ভাঙচুরও চালায়।

থানার ওসি ও কতিপয় পুলিশ সদস্য তাদের উচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জোনে তাদের সহকর্মীদের খবর নিতে গেলে সেনা সদস্যরা তাদেরকে ক্যাম্পের সামনে আটকায় এবং ওসিসহ সবাইকে মারধর করে। সব মিলিয়ে সেনাদের হামলায় ১১ জন পুলিশ আহত হয়। অনেক পুলিশ থানা থেকে পালিয়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেয়।

বুধবার ২৮ আগষ্ট-২০২৪ পুলিশের পাহারায় জুরাছড়ি থানার আহত পুলিশ সদস্য রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তাদের ভর্তি করেন।

এসময় রাঙামাটি জেলার সাবেক পুলিশ সুপার আবু তৌহিদ বিপিএম রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন।
জুরাছড়ি থানার আহত পুলিশ সদস্যরা ছিলেন : এসআই মোস্তাক আহম্মদ (৩৭), পিতা মৃত আব্দুল গফুর, মাতা আছিয়া খাতুন।

এএসআই মিজানুর রহমন (৩৭), পিতা হুমায়ন কবির, মাতা পারভিন আক্তার।
কনেষ্টবল আব্দুস সালাম (৪৭), পিতা মৃত আব্দুল জলিল, মাতা ফিরোজা বেগম।
কনেষ্টবল মোরশেদ আলম (৩৭), পিতা জাকির হোসেন, মাতা হোসনে আরা।
কনেষ্টবল সাজেদুল হক (৩৭), পিতা শাহ আলম, মাতা মতিয়া বেগম।

এসআই মো. নুরুল আলম (৫৫), পিতা মৃত ফয়েজুল রহমান, মাতা আশরাফুনেছা। কনেষ্টবল শাহজাহান বিন রাব্বি (৩০), পিতা মৃত আব্দুল মবিন, মাতা মুত শাহানাজ বেগম। কনেষ্টবল তুহিন চাকমা (৪০), পিতা উপেন্দ্র চাকমা, মাতা ধংগ চাকমা। কনেষ্টবল দয়াল কান্তি চাকমা (৪৯), পিতা লক্ষীধন চাকমা, মাতা মৃত সূর্যহেলা চাকমা। কনেষ্টবল নিরধ কুমার চাকম (৪৫), পিতা মৃত বিবিসন চাকমা, ছায়া রানী চাকমা। কনেষ্টবল মো. মনিরুজ্জামান(৪৯), পিতা সুলতান আহম্মদ, মাতা মৃত শেফালী বেগম।

জুরাছড়ি থানার সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে মারধরের শিকার আহত ১১ পুলিশ সদস্য এ সংবাদটি হাতে গোনা কয়েকজন সংবাদিক ব্যতিত, রাঙামাটি জেলায় ও জুরাছড়ি উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা সংবাদ প্রকাশে এগিয়ে আসেনি। পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ভাল কাজের নজির আছে।

দেশ ছেড়ে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সম্মানিত আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)র নিকট বিনয়ের সাথে গণমাধ্যমের মাধ্যমে পার্বত্যবাসীর পক্ষ হয়ে একটি প্রশ্ন রাখতে চাই “পার্বত্য চুক্তির সুবিধাভোগী কারা”?
পার্বত্য জেলা পরিষদ সমূহ অধিকতর শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে ২৩ জন সদস্য নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। অন্তর্বতীকালীন গঠিত এ আঞ্চলিক পরিষদ চুক্তির পরবর্তী বছর দুয়েক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তদারকি ও সমন্বয় সাধনের কাজ করলেও বিগত বছরগুলিতে এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ। সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং তার সদস্যরা পার্বত্য চুক্তি পরবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত অধিবাসীদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ তিন পার্বত্য জেলার সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে না। দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে তিনটি (চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা) সম্প্রদায় কেবল দায়িত্ব পালন করবে পার্বত্য অধিবাসীরা মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেন না। যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্যের স্বীকার তাদের দ্বারায় স্বগোত্রের বা সম্প্রদায়ের জনসাধারন বৈষম্যে এবং নির্যাতনের শিকার।

চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে উপস্থাপন করা হয়েছে, এ পরিষদ পৌরসভাসহ স্থানীয় পরিষদ সমূহ তত্বাবধান ও সমন্বয় করবে, তিন পার্বত্য জেলায় সাধারন প্রশাসন, আইন শৃংখলা উন্নয়নের ব্যাপারে আঞ্চলিক পরিষদ সমন্বয় সাধন ও তত্বাবধান করতে পারবে। আঞ্চলিক পরিষদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান কার্যক্রম পরিচালনাসহ এনজিওদের কার্যবলী সমন্বয় সাধন করতে পারবে। উপজাতীয় আইন ও সামাজিক বিচার আঞ্চলিক পরিষদের আওতাভুক্ত থাকবে। আঞ্চলিক পরিষদ ভারী শিল্পের লাইসেন্স প্রদান করতে পারবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পরিষদের সাধারন ও সার্বিক তত্বাবধানে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।

তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে পরিচালিত সকল উন্নয়ন কার্যক্রম সমন্বয় সাধন করবে ইত্যাদি। এতকিছুর পরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সুবিধাভোগী কারা ২৭ বছরেও বিষয়টি পরিস্কার নয় পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের কাছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে “পার্বত্য চট্টগ্রাম চাকমা পরিষদ” নামে নামকরণ করিলে ভুল হবেনা কারণ এ পরিষদের ৯৯% অফিসার, পিয়ন-আদালী সবাই চাকমা জনগোষ্ঠীর সদস্য। শরণার্থী বিষয়ক টাস্কর্ফোসের অফিস, জনবল ও অবকাঠামো চুক্তির ২৭ বছর পরেও দৃশ্যমান নয়। এই টাস্কর্ফোসের অধীনে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যতে অবস্থানরত শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনার পর শরণার্থীদের সর্বশেষ অবস্থান খুজে পাওয়া মুশকিল।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশন এর কার্যক্রম এখনো পর্যন্ত সভা আর সাংবাদিকদের স্বাক্ষাতকার প্রদান ছাড়া মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশনের প্রবিধান আজও আলোর মূখ দেখেনি।

অথচ এই কমিশনের চেয়ারম্যান একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির প্রতি তিন বছর অন্তর- অন্তর মেয়াদ বৃদ্ধি করে ব্যয়ভার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে করা হচ্ছে। তার সাথে সদস্য হিসাবে রয়েছেন তিন সার্কেল চীফ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার (রাষ্ট্রিয় প্রতিনিধি) ও রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ।

পার্বত্য চুক্তির মুল সমস্যা ভুমি সমস্যা। এই পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশন কি কাজ করেন পার্বত্য অধিবাসীদের কাছে আদৌ পরিস্কার নয়। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশনে বাঙ্গালী, বড়ুয়া, তঞ্চঙ্গ্যা,সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর কোন প্রতিনিধি ভুমি কমিশনে অন্তর্ভক্ত নাই। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি থাকতে পারলে অন্য সকল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি কেন থাকতে পরবেনা ? তাহলে কি পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে কেবলমাত্র তিনটি জনগোষ্ঠীর কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সরকার কৌশলে লিজ দিয়েছেন !

হতাশার কথা দুঃখজনক হলেও সত্য ২৭ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশন আজ পর্যন্ত একটি অভিযোগের ও নিষ্পত্তি করতে পারেনি।

অন্যদিকে পাহাড়ের প্রতিটি উপজেলা ভুমি অফিসে কর্মরত চাকমা জনগোষ্ঠীর চেইনম্যান, কানুগো, রেকর্ড কিপারদের কারণে ভুমি নিয়ে জটিলতা কাটছেনা। পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিটি উপজেলা ভুমি অফিস থেকে চাকমা জনগোষ্ঠীর লোকজনদের সরিয়ে নিলে এ অঞ্চলের ভুমি সমস্যা অনেক অংশে কমে যাবে বলে অভিজ্ঞজনদের ধারনা।

বিগত ২৭ বছরে পাহাড়ে ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তির পরিবর্তে ভুমি বিরোধ প্রতিনিয়ত ভাবে বেড়েই চলছে। পাহাড়ে বিগত বছরের তুলনায় আওয়ামীলীগের গত ১৬ বছরে হাজার-হাজার অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে, রাঙামাটি শহরের ভেদ ভেদী এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রয়াত রুহিনী বড়ুয়া জায়গা দখল করে গড়ে তুলা হয়েছে রাঙামাটি পৌর কাঁচা বাজার ও রাসেল স্মৃতি সংসদ তথা আওয়ামীলীগের অফিস।

এছাড়া রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদ ও পাহাড় কেটে দুষন এবং দখলের প্রতিযোগিতা থামছে না। যত্রতত্র দখল ও দুষনের কারণে পর্যটন শহর পরিবেশ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। দখলের প্রতিযোগিতায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের দুইপাশ্বে টার্মিনালসহ সরকারি-বেসরকারী কোথাও বাদ পড়েনি।

১৯৬০ সালে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কাপ্তাই বাধ দেয়া হলে ৭২৫ বর্গকিলোমিটার দৈর্ঘ্য কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টি হয় । বর্জ্য ফেলে হ্রদের নাব্যতা কমে গিয়ে পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও নেই কোন ড্রেজিং করার পরিকল্পনা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম কাপ্তাই লেকে জরিপ করে অবৈধ দখলদারদের তালিকা ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কাপ্তাই লেকে মাটি ভরাট,দখল, ড্যাম,স্থাপনা অবকাঠামো যেন আর নির্মাণ না হয় সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এখনো কোন প্রতিষ্টান বা সংস্থা কার্যক্রম শুরু করার প্রক্রিয়া চোখে পড়েনি। উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, রাঙামাটি সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপক, রাঙামাটি সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি), রাঙামাটির কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৭ অক্টোবর-২০২২ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। কাপ্তাই লেকের মধ্যে নির্মিত সকল অবকাঠামো স্থাপনা, ড্যাম ধ্বংস, উচ্ছেদে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং কাপ্তাই লেকের সকল ধরনের দখল, ভরাট,ড্যাম, স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা অপসারণে সকল বিবাদীদের ব্যর্থতা নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। এসব আওয়ামীলীগ ধামা-চাপা দিয়েছে। মহামান্য হাই কোর্ট বলেছেন, পার্বত্য চুক্তি আইন হচ্ছে : দেশের সংবিধান পরিপন্থি এবং বৈষম্যেমূলক আইন।

এছাড়াও প্রত্যকটি পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তে চালানো হচ্ছে অ-নির্বাচিতদের দ্বারা এদিকে ৩১ জন সদস্যদের পরিবর্তে কখনো ৫ সদস্য, কখনো ১০ সদস্য আবার কখনো ১৫ জন সদস্যদের দিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করা হচ্ছে, আইন বা নিয়ম নীতি কোন বলাই নেই। পার্বত্য চুক্তির আলোকে যে সমস্ত বিভাগ পার্বত্য জেলা পরষদ সমূহে হস্তান্তরিত করা হয়েছে তন্মধ্যে – ১.কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২.জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ৩.মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ ৪.তুলা উন্নয়ন বোর্ড ৫.জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ৬.পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ ৭. প্রাণীসম্পদ বিভাগ ৮.মৎস্য বিভাগ ৯.বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ১০.ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতি ইন্সটিটিউট ১১.জেলা শিল্পকলা একাডেমী ১২.বাজারফান্ড প্রশাসন ১৩.টেক্সটাইল ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ১৪.জেলা সরকারী গণগ্রন্থাগার ১৫.যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ১৬.স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৭.আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট (আরপিটিআই) ১৮.জেলা সমাজসেবা বিভাগ ১৯.হর্টিকালচার সেন্টার ২০.জেলা সমবায় বিভাগ ২১. নার্সিং ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ২২. স্বাস্থ্য বিভাগ ২৩. জুমচাষ ২৪. কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ২৫. জেলা ক্রীড়া অফিস ২৬. পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতিত ইমপ্রুভমেন্ট ষ্ট্রাষ্ট ও অন্যান্য শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ২৭. স্থানীয় শিল্প বানিজ্য লাইসেন্স ২৮. জন্ম-মৃত্যু ও অন্যান্য পরিসংখ্যান ২৯. মহাজনি কারবার ৩০. স্থানীয় পর্যটন ইত্যাদি। জেলা পরিষদ সমূহের কাছে হস্তান্তরিত এসব বিভাগ সমূহের কাজ কি ? প্রতিমাসে জেলা পরিষদ সমূহের সাথে মাসিক উন্নয়ন সভা-সমন্বয় সভা ব্যতিত হস্তান্তরিত বিভাগের বেতন ভাতা স্বাক্ষর করা ছাড়া উন্নয়ন বা অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়।

পার্বত্য চুক্তি করার পর থেকে পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় মানুষ যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরী পাবে এমন আশা করেছিলো, সমতলে যেখানে তিন লক্ষ টাকা খরচ করে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রার্থী চাকুরী পায়, সেখানে পার্বত্য অঞ্চলে জেলা পরিষদগুলোর মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকরী পেতে গুনতে হয় আট থেকে দশ লক্ষ টাকা। পার্বত্য চুক্তির পর একটি বারের জন্য চুক্তি সম্পাদনকারী উভয়ে কেউ বলেনি যে, সরকারী চাকুরী পেতে ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করা হোক। উল্টো চুক্তি সম্পাদনকারীদের দলীয় নেতাদের ঘুষ না দিলে মিলেনা চাকুরী। এখানে একটি কথা পরিষ্কারভাবে খোলাসা করা প্রয়োজন- পার্বত্য চুক্তির আলোকে স্থানীয় পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরী পাওয়ার কথা কিন্তু ঘুষ বাণিজ্য ও আমলাতন্ত্রের জটিলতার কারণে পার্বত্য অঞ্চলের বাহিরের লোকজন চাকুরীর বাজার দখল করে আছে।

মূলতঃ ২০০৭ সালের পর থেকে পার্বত্য চুক্তি মুখ থুবরে পরেছে। সরকারের বাস্তবায়নকারীরা সরে গেছে তাদের মূল স্প্রিড থেকে। বৈষম্যমূলক ভাবে করা পার্বত্য চুক্তি বাতিল চায় স্থানীয়রা ভারতের তাবিদার আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনা ও পিসিজেএসএস-মূল প্রধান জ্যোতিরিন্দ্রিবোধিপ্রিয় লারমার মধ্যে করা পার্বত্য চুক্তি সকল কার্যক্রম আন্তর্বর্তীকালিন সরকারের সময়কাল পর্যন্ত বন্ধ রাখার দাবি উঠেছে তা বৈষম্যহীনভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

পার্বত্য অঞ্চলের মুল সমস্যা হচ্ছে ভুমি সমস্যা যা চুক্তির ২৭ বছরেও সমধান হয়নি।
দেশের সংবিধান পরিপন্থি এবং বৈষম্যেমূলক আইনে বিগত ২৭ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কিছুই পায়নি বিধায় পাহাড়ে কর্মকান্ড আছে সেই সকল জাতীয়, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং পাহাড়ে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে কেবল মাত্র কাগজে কলমে নয়, বাসতবসম্মতভাবে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণঃ মুল্যায়ন করা এখন পার্বত্যবাসীর প্রাণের দাবি।

এদিকে দুর্নীতিবিরোধী সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়কে বিলুপ্ত করে একটি ডাইভারসিটি কমিশন তথা বৈচিত্র্য কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন। কারণ, তিনি মনে করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ট্রাইবালদের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
২৪ নভেম্বর-২০২৪ রবিবার ডেইলি স্টারের ইংরেজি অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকায় ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে কাপেং ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেন “পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় ট্রাইবালদের অধিকার রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এটি বাতিল করা উচিত, এটি উন্নয়নকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে এবং এর ফলে ট্রাইবাল জনগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের অধীন হয়ে গেছে।”

বাংলাদেশের ট্রাইবালদের অবস্থা এবং করণীয় নিয়ে এক আলোচনা সভার ভাষণে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় কেবলমাত্র অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলি অনুসরণ করছে, যা ট্রাইবালদের অধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিবর্তে স্থানীয় জনগণের বংশগত সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্নীতিবিরোধী সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামানও ট্রাইবালদের জন্য সাংবিধানিক স্বীকৃতির গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, এটি তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কারণে অনস্বীকার্য অধিকার।

ট্রাইবালদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সাংবিধানিক কমিশনকেও অনুরোধ করেন তিনি। ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, ট্রাইবালদের অধিকার কখনই প্রতিষ্ঠিত হবে না যতক্ষণ না প্রতিটি নাগরিক এ সংগ্রামকে তাদের নিজস্ব মনে করে।

বৈষম্যমূলক পার্বত্য চুক্তি সকল কার্যক্রম স্থগিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক কমিশন তথা বৈচিত্র্য কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। শান্তি চুক্তি পাহাড়ে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

লেখক : সাংবাদিক নির্মল বড়ুয়া মিলন
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক লেখক
তারিখ : ২৭ নভেম্বর-২০২৪ ইংরেজি
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button