মতামত

হযরত শাহসূফি সৈয়দ মৌলভী মোহাম্মদ মিয়া মধ্যম ফরহাদাবাদী ছাহেব কেবলার সংক্ষিপ্ত জীবনী

আজ ১ জানুয়ারি ২০২৫ ইং, ১৭ পৌষ, ১৪৩১, ২৯ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হযরত শাহসূফি সৈয়দ মৌলভী মোহাম্মদ মিয়া মধ্যম ফরহাদাবাদী ছাহেব কেবলার (রহ.) ১২৫ তম পবিত্র খোশরোজ শরীফ চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ফরহাদাবাদ গ্রামে দরবারে মোহাম্মদীয়ায় ( প্রকাশ সৈয়দ কোম্পানী বাড়ী) অনুষ্ঠিত হবে।

শেখ বিবি কাউছার: জেনে রেখো, আল্লাহর অলিদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৬২)

মানুষকে হেদায়েতের জন্য রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে অনেক নবি রাসূল ও অলি আউলিয়াগণ অর্থাৎ আল্লাহর বন্ধুদের এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। যাঁদের পবিত্র জীবন আচার- আচরণ, মুখনিঃসৃত পবিত্র কালাম আমাদের চলার পথে পাথেয়। আবার অনেকের ভাব বিভোর অবস্থায় মুখনিঃসৃত কালাম বুঝা কঠিন হলেও হয়তো সৃষ্টির কেউ না কেউ তা বুঝেন। আমরা যদি তাঁদের জীবন, আচরণ ও আদর্শে নিজেদের গড়তে পারি তবে পৃথিবী হবে সুন্দর ও পরিশীলিত। আউলিয়াগণ কোন নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য নয়। তাঁরা সকল সৃষ্টির জন্য মঙ্গলময় বার্তা প্রচার করেন।

হযরত শাহসূফি সৈয়দ মৌলভী মোহাম্মদ মিয়া মধ্যম ফরহাদাবাদী (রহ.) হাটহাজারী থানার অন্তর্গত মধ্যম ফরহাদাবাদ গ্রামে ( প্রকাশ সৈয়দ কোম্পানী বাড়ী) পিতা সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল লতিফের ঘর আলো করে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯০১ সালে ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।

মাইজভান্ডারী তরিকার প্রবর্তক গাউছুল আজম আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারি (ক.) আধ্যাত্মিক আলোয় আলোকিত হয়ে ফয়েজ প্রাপ্ত হয়েছেন বহু আল্লাহর অলি আউলিয়া। তার মধ্যে হযরত শাহসূফি সৈয়দ মৌলভী মোহাম্মদ মিয়া মধ্যম ফরহাদাবাদী ছাহেব কেবলার (রহ.) একজন। তাঁর ৬ বছর বয়সে চোখে অসুখ দেখা দিলে পিতা সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ ১৯০৬ সালে হযরত গাউছুল আজম আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারির (ওফাত প্রাপ্ত হওয়ার পূর্বে) কাছে নিয়ে যান। হযরত গাউছুল আজম আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) মোহাম্মদ মিয়া মধ্যম ফরহাদাবাদী সাহেব কেবলাকে রুমের ভিতর ডেকে নেন। এবং উনার পিতাকে বলেন, “ আপনার ছেলের সঙ্গে আমার কথা আছে ”। আপনি একটু বাহিরে অপেক্ষা করুন। তারপর উনাকে হযরত কেবলা জিজ্ঞেস করেন, “ তুমি কাকে ভালোবাসো?
উত্তরে তিনি বলেন, “ আমি আল্লাহকে ভালোবাসি।” তারপর হযরত কেবলা মুচকি হাসি দিয়ে উনার চোখ দেখে চোখে ফু দেন। তারপর হযরত কেবলা উনাকে হাতের নখ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “ হাতের নখে তুমি কি দেখতে পাচ্ছ? উত্তরে মোহাম্মদ মিয়া মধ্যম ফরহাদাবাদী সাহেব কেবলা বলেন, “ আমি আপনার হাতের নখে মক্কা মদিনা দেখতে পাচ্ছি। ” সুবাহানাল্লাহ।

শৈশবে গাউছুল আজম হজরত মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারি( ক.) সোহবত পেয়ে মোহাম্মদ মিয়া মধ্যম ফরহাদাবাদী সাহেব কেবলা (র.)’র জীবনে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়।
ছোটবেলা থেকে উনার স্বভাব চরিত্রে আদর্শবান ও ন্যায়পরায়ণতা পরিলক্ষিত হয়। উনি সকলের সাথে ভদ্র ও সুন্দর আচরণ করতেন। শিক্ষা জীবনেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯২০ সালে তিনি ফাস্ট ডিভিশনে সালে মেট্রিক পাস করেন। এরপর উনি ১৯২৩ সাল থেকে চাকুরিজীবন শুরু করেন। ১৯৪১ সালে চাকুরিরত অবস্থায় হঠাৎ উনার মধ্যে পরিবর্তন দেখা দেয় এবং উনি সরকারী চাকুরীতে ইস্তফা দেন। চাকুরি ছাড়ার পর তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেন, “ চার আনা ঘুষের সরকারী চাকরি আমি করিবনা, আল্লাহর সরকারী চাকরি করিব।” তিনি ছিলেন গাউছুল আজম হজরত মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারি
( ক.)’’র সোহবত প্রাপ্ত খলিফাদের একজন।

এরপর থেকে জজবা হালতে তিনি বিভিন্ন কালাম বলতে থাকেন। তিনি নিজে নিজেই সবসময় বলতে লাগলেন,
“ কি জ্বালা দিয়াচ মোরে ওরে শাহ মাইজভান্ডারি গাউছুল আজম ভান্ডারী। ”
আরও বলেন,
‘সাগর কূলে বসিয়া বিরলে, হেরি বলরে মালা এমন বেদনা কভু সমীলনে গগনে জানাব জ্বালা। ”
“বদর বলে দাড়ি পেলে কলমা পড়ে দাও পাড়ি”
“ সাতজন মাঝি নয়জন দাড়ি, মদিনার কূলে মোদের ঘরবাড়ি। ”
তারপর আস্তে আস্তে উনার নানান কেরামত প্রকাশ হওয়া শুরু হলো।

এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হল:
◻️ যে ধন কামাইলাম বাহুর বলে সেই ধন হারাইলাম বৃক্ষের তলে, কন বৃক্ষ অসৎ বৃক্ষের তলে।

◻️ খোদা জানে কেয়ামত মে হামারী কেয়া সাজা হোঁগা রসুল হবে ছরার কাজী, খোদা হবে বাদশা।

◻️ ডাকরে সাঝের পায়রা মণি
পরাণ ভরে ডাক।

◻️ ৭ জন মাঝি ৯ জন দাড়ী মদিনার কূলে মোদের ঘর বাড়ী, বদর বলে দাড়ী পেলে কলমা পড়ে দাও পাড়ি।

উনার আরও অসংখ্য পবিত্র কালাম আছে যা গবেষকদের গবেষণার বিষয়বস্তু হতে পারে।

তিনি ১৯৮০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মহান রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর পরম সান্নিধ্য লাভ করেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে এই মহান অলির ফয়েজ ও বরকত লাভে ধন্য করুক। আমিন।

শেখ বিবি কাউছার
প্রভাষক
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ,
রাউজান, চট্টগ্রাম।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button