আমার কৃষি আমার সাফল্য

ফটিকছড়িতে হালদার চর সবজির ভাণ্ডারে পরিণত

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ফটিকছড়ি: চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীর দুই কুলের চর এখন সবজির ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়,উপজেলার নাজিরহাট,কুম্ভারপাড়া, নাইচ্যারকুল, সুয়াবিলের ভাঙা দিঘির পাড়, পূর্ব-সুয়াবিল,মন্দাকিনী ও হালদারকূল এবং সুন্দরপুর ইউনিয়নের এককুলীয়া, পাঁচ পুকুরিয়া, সুন্দরপুর চর ও হারুয়াল ছড়ি,ভুজপুর এলাকার হালদার দুই তীরের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তীর্ণ চরের জমিতে শীতকালীন শাকসবজির চাষাবাদ হয়েছে। এসব খেতে রোপণ করা হয়েছে মুলা,লাল আলু, বেগুন, মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়া ও টমেটোসহ নানা রকম সবজি।

এসব চর এখন কোটি টাকার সবজিতে ভরে গেছে। নদীপারের হাজারো কৃষকের মুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি।

জানা যায়, ১৯৯১ সালের আগে এসব চরে জনবসতি ছিল। পরবর্তী সময়ে বন্যা ও হালদার ভাঙনে এসব বসতি বিলীন হয়ে যায়। ভাঙাগড়ায় এসব এলাকায় ক্রমাগত চর জেগে উঠতে থাকে। বসতভিটা হারিয়ে একসময় যারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন দীর্ঘদিন পর জেগে ওঠা চর তাদের আশার সম্বল হয়ে দাঁড়ায়। এসব চরে সবজি আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অন্তত কয়েক হাজার পরিবার।

কুম্ভারপাড়া গ্রামের কৃষক মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, চরে সবজি চাষে খরচ খুবই কম। সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা সবজি চাষে বেশি বিনিয়োগ করেন। সবজি হিসেবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, মুলা, বরবটি, বেগুন, শিম, টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ ও ধনেপাতার চাষ হয় এখানে।

ধুরুং এলাকার কৃষক আবদুল করিম জানান, প্রতি হেক্টরে ৩০ কেজি ইউরিয়া, ২০ কেজি ফসফেট এবং ৫ কেজি নাইট্রোজেন সার দিতে হয়। অনেকে জৈবসার মিশিয়ে জমিতে বীজ বপন করেন।

নাইচ্যারঘাট এলাকার উপকারভোগী মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, এক একর জমিতে ১৩০ মণ সবজি পেয়েছেন যার বাজারমূল্য দেড় লাখ টাকা। জমিতে তেমন সার প্রয়োগ করতে হয়নি। আরও প্রচুর সবজি পাবেন বলে আশা তার। এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারেও সরবরাহ করা হচ্ছে।

নাজিরহাট বাজারের সবজি ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিন জানান, প্রতি সপ্তাহে কুম্ভারপাড়া এলাকা থেকে তিনি প্রায় এক- দেড় লাখ টাকার সবজি কিনে বাজারে বিক্রি করেন। এতে আশার চেয়েও বেশি লাভ হয় তার। চরগাঁওপাড়ার মুহাম্মদ আজিম উদ্দিন বলেন, হালদার চরে আমার এক একর জমি রয়েছে। এতে বেগুনের চাষ করেছি। প্রতি সপ্তাহে ৪-৫ মণ বেগুন পাই। এতে আমার আয় হয় ৫-৬ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত লাখ টাকার বিক্রি করেছি। সামনে আরও আয় হবে।

দৌলতপুর এলাকার মোহাম্মদ আইয়ুব আলী বলেন, একসময় কাজ ছিল না। এখন কাজের অভাব নেই। বরং এলাকার অনেক বেকার এখন কাজের সুযোগ পাচ্ছে। পাশের গ্রামের অনেকে সবজি ক্ষেতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এটি অনেক বড় আশার খবর।

নাজিরহাট পৌরসভার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, চরের প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ টন সবজি উৎপাদিত হয় যার বাজারমূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। এই হিসেবে ১৫০ হেক্টর জমিতে দেড় হাজার টন সবজি উৎপাদিত হয় যার বাজারমূল্য তিন কোটি টাকারও বেশি। প্রতি বছর বন্যায় হালদার অনেক জমি ঢলে তলিয়ে যায়। বন্যার পর এসব জমিতে প্রচুর পলি জমে। পলিযুক্ত দোআঁশ মাটি সবজি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক বেশ লাভবান হন। আমরাও কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকের উপকারের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, হালদার চরে ১৫০ হেক্টর জমিতে বিপুল পরিমাণ সবজি উৎপাদিত হয়েছে। এলাকার কৃষকদের ভাগ্য বদলের জন্য কৃষি কার্যালয় থেকে প্রযুক্তিগত সব ধরনের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রোগবালাই প্রতিরোধে এলাকার কৃষকরা অনেক সচেতন। লাভবানও হচ্ছেন তারা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার কৃষিবান্ধব। কৃষকদের প্রয়োজনে কৃষিঋণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় সুযোগ- সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button