আশেক ভক্তের সমাগমে মুখরিত মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ
মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ফটিকছড়ি: মাইজভাণ্ডারে উঠেছে তৌহিদের নিশানা, ঘুমাইয়না মায়া ঘুমে আখের জামানা।
স্কুল খুলেছেরে মওলা স্কুল খুলেছে, গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী স্কুল খুলেছে।
ইত্যাদি মাইজভাণ্ডারী কালাম পরিবেশনের মাধ্যমে ঢোল বাদ্য বাজনা সহকারে গরু,মহিষ,ছাগলসহ বিভিন্ন হাদিয়া নিয়ে দলে দলে আশেক ভক্ত চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে আসছেন।
গাউসুল আযম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (কঃ)’র ১১৯তম ওরশ শরিফ মহাসমারোহে ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
২৪ জানুয়ারি প্রধান দিবসকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে আশেক ভক্ত আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে লোকে লোকারন্য হয়ে পড়েছে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ। বিভিন্ন মনজিল মাসব্যাপী ব্যপক কর্মসূচী পালন করে আসছে।
প্রশাসনের পক্ষেও নেওয়া হয়েছে ব্যপক প্রস্তুতি। একজন ভ্রাম্যমান ম্যাজিস্ট্রেটসহ তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি রয়েছে আইনশৃংঙ্কলা বাহিণীর। এছাড়া প্রসাসনের সমন্বয়ে রয়েছে মনজিল কর্তৃপক্ষের হাজার হাজার সেচ্ছাসেবকবৃন্দ।
রওজা শরিফ গোসল ও গিলাফ চড়ানোর মাধ্যমে উরস্ শরিফের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
২৪ জানুয়ারী শুক্রবার প্রধান দিবসের দিন স্ব স্ব মনজিলে কেন্দ্রিয় মিলাদ মাহ্ফিল ও আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে ।আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন স্ব স্ব মনজিলের প্রধানগণ।
ওরশ শরীফ উদযাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের সাথে আহমদিয়া মনজিল ও গাউছিয়া হক মনজিলের প্রশাসনিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় উরস শরিফ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা, দেশ-বিদেশ হতে আগত আশেক-ভক্ত ও জায়েরীনদের সুবিধার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা,বিভিন্ন হোটেল খাবারের দাম নিয়ন্ত্রন ও আইন শৃংখলা রক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেট, পর্যাপ্ত পুলিশ,আনসার মোতায়েনসহ মন্জিলের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,.ওরশ উপলক্ষে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট,স্পেশাল পুলিশ ফোর্স,পুরুষ মহিলা আনসার টিম আইনশৃংঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বে থাকবে।
এছাড়া বিভিন্ন মনজিলের সমন্বয়ে আগত আশেক ভক্তের সুবিধার্থে ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ওরশ শরীফে প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে বলে জানান বিভিন্ন মনজিলের দায়িত্বশীলরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রওজায় রওজায় চলছে আশেক ভক্তের ইবাদত বন্দেগী,জিকির আজগার,মিলাদ মাহফিল ও জিয়ারত।
ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঢোল বাদ্য বাজনা ও মাইজভাণ্ডারী কালাম পরিবেশন। এক কথায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ।
দরবারে গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের শাহজাদা সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল মাইজভাণ্ডারী জানান, গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারীর ওরশে শরীফে বংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বার্মা, ইরাক, ইরান, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও ধর্মপ্রাণ মুসলমান সহ লাখো সুফী ভক্ত-আশেকগণের সমাগম ঘটে। আমরা ১০দিন ব্যাপী হযরতের মানবিক গুনাবলীর সমন্বয়ে মানবিক ও সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছি।
শাহ এমদাদীয়ার নায়েবে শাজ্জাদানশীন সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভান্ডারী জানান, গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর ওরশে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখো ভক্তের সুবিধাত্বে থাকা-খাওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসা, নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য লাইটিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ ও উরস এন্তেজামিয়া পর্ষদেরর সভাপতি রেজাউল আলী জসিম চৌধুরী বলেন,গাউসিয়া হক মন্জিল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় আশেক-ভক্তদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ২৩ জানুয়ারি হতে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা নাজিরহাট ঝংকার মোড় হতে মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের পুরো এলাকা জুড়ে দায়িত্ব পালন করবেন।
২৩ জানুয়ারি,২৪ জানুয়ারি এবং আগামী ২৭ জানুয়ারি নগরীর মুরাদপুর থেকে মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ পর্যন্ত বিআরটিসি’র বিশেষ বাস সার্ভিস চালু থাকবে।
মহান ১০ই মাঘ উরস শরিফ উপলক্ষে গাউসিয়া হক মন্জিল প্রতিষ্ঠিত শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্ট-এর ১০ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে।
এদিকে ওরশ শরীফ কেন্দ্র করে বসেছে গ্রামীণ লোকজ মেলা।
মেলায় পোষাক,রকমারী খাবার গৃহস্থালি প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। দা ছুরি বটি,বেত সামগ্রী, বেড়া, চাটাই, মাছধরার ফাঁদ, হাতপাখা, মোড়া, ফুলদানি,হাঁড়ি পাতিলসহ ঘরে ব্যবহারের ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যায়। তাই মাঘের মেলার জন্য ঘরের বউ ঝিঁয়েরাও অপেক্ষয় থাকে।
স্থাণীয়দের পাশাপাশি উপজাতীরাও এ মেলায় ছুটে আসে।
এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ বড় বড় সাইজের জাপনী মুলা বিক্রি যা ভাণ্ডারী মূলা নামে খ্যাত। মেলার বিভিন্ন স্থানে জমজমাট মূলা বিক্রির দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।