শিল্প ও সাহিত্য

বুক রিভিউ | শেখ বিবি কাউছার

শেখ বিবি কাউছার:: মানুষের মস্তিষ্ক একটি সুপার কম্পিউটারের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী। তাই মানুষের মাথায় কখন কোথা থেকে আইডিয়া চলে আসে বলা যায় না।

স্টিভের মাথায় কোথা থেকে অ্যাপল কোম্পানি উদ্ভাবনের আইডিয়া আসলো সে গল্প এবং তার শৈশব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আছে ওয়াল্টার আইজ্যাকসনের লেখা ‘স্টিভ জবস ‘ বইটিতে।

আরো আছে অ্যাপল কোম্পানি কিভাবে বিশ্বে একটি সেরা কোম্পানি হয়ে উঠল সে গল্প। পৃথিবী যখন ডিজিটাল হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত তখন অনেকটা আলোকবর্তিকা রূপে আবির্ভূত হয়েছেন স্টিভ জবস। তিনি জানতেন একবিংশ শতাব্দীকে জয় করতে হলে প্রয়োজন সৃজনশীলতা আর টেকনোলোজির অসাধারণ সমন্বয়। তাই তৈরি করলেন এমন এক কোম্পানি যেখানে একসাথে কাজ করে কল্পনা আর ইঞ্জিনিয়ারিং। এই দুই এ মিলে সৃষ্টি করলেন এক জাদুকরী জগৎ। আসলেই আপনি যদি প্রযুক্তিকে ভালো কাজে ব্যবহার করেন তা জাদুর মতো কাজ করে। স্টিভ জবসের সেই জাদুকরী জগৎ নিয়ে লেখা হয়েছে অসাধারণ এই বইটি। মোট ৩৬৮ পাতার বইটিতে স্টিভ জবসের জীবনী সাজানো হয়েছে ৪২টি অধ্যায়ে। সহজ, সরল ভাষায় বইটি অনুবাদ করেছেন মহিউল ইসলাম মিঠু। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যায়ন বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

বইটিতে স্টিভ জবসের পুরো জীবনী উঠে এসেছে নিখুঁতভাবে। এখানে স্টিভ জবসের শৈশবকাল থেকে শুরু করে অ্যাপল কোম্পানির প্রতিষ্ঠার অসাধারণ ঘটনা সব তুলে ধরা চেষ্টা করেছেন লেখক। তাই রিভিউতে তাঁর শৈশবকাল থেকে শুরু করে অ্যাপল কোম্পানি গড়ে তোলার কথাগুলো সংক্ষিপ্তাকারে রিভিউ আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি পাঠকদের জন্য।

লেখক পরিচিতঃ মূল লেখক ওয়াল্টার আইজ্যাকসন একজন সাংবাদিক, লেখক এবং অধ্যাপক। তিনি অ্যাস্পেন ইনস্টিটিউটের( ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক একটি অদলীয় নীতি অধ্যয়ন সংস্থা) প্রেসিডেন্ট ও সিইও, সিএনএন এর চেয়ারম্যান ও টাইম ম্যাগাজিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

লেখক দু’বছর ধরে স্টিভ জবসের চল্লিশটি ও তাঁর পরিবার, সহকর্মী, বন্ধু -শত্রুদের একশোর বেশি ইন্টারভিউ নিয়ে বইটি লিখা।

বিশ্বের মূল্যবান ব্র‍্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল। মূলত মান ও উদ্ভাবনের বদৌলতে তারা ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করেছে। বছরের পর বছর ধরে অ্যাপল কোম্পানি পণ্যের মান ধরে রাখার জন্য বিপুল শ্রম, মেধা ও সময় দিয়ে যাচ্ছে।

স্টিভ জবস বইটিতে লেখক খুব সুন্দরভাবে তাঁর শৈশব ও যৌবনকাল তুলে ধরেছেন।

আগে চলুন জেনে আসি তাঁর শৈশবটা কেমন ছিল?
স্টিভ জবস বড় হয়েছেন দত্তক মা-বাবার কাছে। তাঁর প্রকৃত বাবা-মা হলেন জোয়ান ও আব্দুল ফাতাহ জান্দালি। জান্দালি ছিলেন সিরিয়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্ক হওয়ার পর জোয়ানের বাবা খুব কঠোরভাবে জানিয়ে দিলেন জান্দালিকে বিয়ে করলে তাকে ত্যাজ্য করা হবে।

এরমধ্যে জোয়ান হয়ে গেলেন গর্ভবতী কিন্তু ক্যাথলিক সোসাইটিতে গর্ভপাত করাকে ভালো চোখে দেখে না। শেষপর্যন্ত জোয়ান সানফ্রান্সিসকোতে গিয়ে একজন ডাক্তারের কাছে আশ্রয় নিলেন।

এই ডাক্তার অবিবাহিত মায়েদের দেখাশোনা করত আর তাদের বাচ্চাদের দত্তকের ব্যবস্থা করে দিত। জোয়ানের একটা শর্ত ছিল, তার বাচ্চাকে যারা দত্তক নেবে তাদের অন্তত কলেজ গ্রাজুয়েট হতে হবে। ডাক্তার সেই মত একজন উকিল দম্পতিকে জোগাড় করে রাখলেন বাচ্চা দত্তক দেয়ার জন্য।

১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জোয়ান জন্ম দিলেন একটা ছেলে বাচ্চা। কিন্তু উকিল দম্পতি চেয়ে ছিল মেয়ে। তাই শেষ-মেষ জোয়ানের ছেলেকে দত্তক নিল হাইস্কুল ড্রপ-আউট এক শখের (পল ও ক্লারা) ম্যাকানিক আর তার বউ। সব জানার পর জোয়ান এডাপশন পেপারে সাইনই করতে চাচ্ছিলেন না কিন্তু শেষে বাচ্চাটির দত্তক মা-বাবা কথা দিল বাচ্চাটাকে তারা কলেজ গ্রাজুয়েট বানাবে।

তারা বাচ্চাটির নাম রাখলেন স্টিভেন পল জবস। স্টিভ ছোটবেলা থেকেই জানতেন যে তিনি এডোপ্টেড চাইল্ড। তবে অবাক করা বিষয় হলো স্টিভ এটিকে শক্তি হিসেবে নিতেন উল্টো নিজেকে আরো স্পেশাল মনে হয়েছে তাঁর। তিনি দত্তক নেয়া পল ও ক্লারাকে আসল মা-বাবাই মনে করতেন। আগেই বলেছি জবসের বাবা পল ছিলেন অটোমোবাইল ম্যাকানিক। তার একটি ছোট্ট গ্যারেজ ছিল। পল যখনই গ্যারেজে কাজ করতে যেতেন তখনই স্টিভকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন।

স্টিভের ভাষায়, “ একটা শিক্ষা আমার বাবা আমার ভেতর খুব ভালোভাবে ঢুকিয়ে দিয়েছিল, তা হলো, প্রতিটি কাজ একেবারে ঠিক মত করা।

বাবা যা করতেন খুব ভালোভাবে করতেন। কাজ একেবারে ঠিকঠাক মত করাই ছিল তার কাজের বিশেষত্ব। বাবা ইলেকট্রনিক্স জিনিসটা খুব ভালো বুঝতেন না ঠিক, কিন্তু অটোমোবাইলে বাবার দক্ষতাই আমার ইলেকট্রনিক্সের প্রতি আগ্রহের বেসিক হিসেবে কাজ করেছে।” প্রতি সপ্তাহেই জবস বাবার সাথে পুরাতন জিনিসপত্রের দোকানে গিয়ে খুঁজে খুঁজে কাজে লাগার মত জেনেরেটর, কার্বুরেটর এসব কিনত।

স্টিভের বাবা খুব শিক্ষিত ছিলেন না,কিন্তু তাঁর চোখে বাবা ছিলেন স্মার্ট একজন মানুষ। আর তাদের কাছে ছিলেন জবস খুবই স্পেশাল। তা্ঁর প্রতি খুব যত্নশীল ছিলেন তাঁরা। কষ্ট করে হলেও তাঁরা স্টিভকে ভালো স্কুল, ভালো একটা জীবন-যাপনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

সব মিলিয়ে জবস নিজেকে এক দিক থেকে বর্জিত হিসেবে পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু অন্য দিক থেকে পেয়েছিলেন স্পেশাল হিসেবে। স্টিভের পড়াশোনার হাতে খড়ি তাঁর মায়ের কাছেই। প্রথম প্রথম স্কুলের বন্দী জীবন তাঁর ভালো লাগতো না। পড়াশোনায় ছিলেন অমনোযোগী। এমনকি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় দু-তিনবার স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু চর্তুথ শ্রেণিতে যখন উঠলো তখন নতুন ক্লাসে আসলো এক নতুন শিক্ষিকা। সেই একজন শিক্ষকই বদলে দিয়েছেন স্টিভের জীবন।

তাঁর ভাষায়, “ তিনি ছিলেন আমার জীবনে আর্শীবাদ।কারণ স্কুলের পড়া যে আনন্দদায়ক হতে পারে আমি আমার ঐ শিক্ষককের কাছ থেকে জেনেছি এবং অনেক কিছু শিখেছি।তিনি আমার মধ্যে কিছু একটা পেয়েছিলেন, যার জন্য তার চোখে সবসময় আমি আলাদা ছিলাম।”

এর পর থেকে স্টিভ পড়াশোনায় ভালো করতে লাগলো মা-বাবার সাথে সাথে এবার স্কুলের শিক্ষকরাও জানালো স্টিভের ভেতর বিশেষ কিছু আছে।

ছোটবেলায় একবার গ্রীষ্মের সময় স্টিভ তাঁর বাবার সাথে গ্রামে গিয়েছিল বেড়াতে। যদিওবা গ্রাম্য জীবন তাঁকে খুব বেশি টানেনি।কিন্তু সেখানকার একটা ঘটনা খুব ভালোভাবে মনে গেঁথে গিয়েছিল তাঁর । সেখানে ফার্মে একটা বাছুর জন্মাতে দেখেছিলেন তিনি। জন্মের কিছুক্ষন পরেই বাছুর হাঁটতে শুরু করল,ব্যাপারটা তার ব্রেনে এমনভাবে গাথা ছিল যে,তাকে শেখানোর দরকারই ছিল না।

ব্যাপারটাকে হার্ডওয়্যার আর সফটওয়্যারের সাথে তুলনা করে তিনি বলেছেন,” এখানে মস্তিষ্ক এমনভাবে কাজ করেছে যে হাটার কাজটা নিজে নিজেই হয়ে গেছে। কারো কাজ থেকে শেখার দরকার হয়নি। হার্ডওয়্যার আর সফটওয়্যারের সম্পর্কটাও এরকম হওয়া উচিত। ”

এখানে একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয়,ঐ যেএকটা শিক্ষা তাঁর বাবা তাঁর ভেতর খুব ভালোভাবে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন , প্রতিটা কাজ একেবারে ঠিক মত করা। এখন দেখব পরবর্তীতে বিষয়গুলো তার জীবনে কি কাজ দিয়েছিল।

স্টিভ জবসকে খুঁজে পাওয়া যায় তার তৈরি প্রোডাক্টের মধ্য দিয়ে। প্রোডাক্টকে “একদম পারফেক্ট ” বলার আগ পর্যন্ত অনবরত “একেবারে ফালতু” শুনতে হয়েছে তাঁর। উদ্দেশ্য একেবারে নিখুঁত জিনিস তৈরি করা।আর এই নিখুঁত জিনিস তৈরি করার চেষ্টা থেকে এসেছে অ্যাপলের সবগুলো প্রোডাক্টকে কঠোর নিয়মের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা। তিনি অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমকে অন্য সব হার্ডওয়্যারে চলতে দেয়ার যেমন ঘোর বিরোধী ছিলেন, ঠিক তেমনি অন্যদের সফটওয়্যার অ্যাপলের মেশিনে চলতে দেয়ারও বিরোধী ছিলেন। কিন্তু উদ্দেশ্য একটা অন্যান্য খারাপ মানের জিনিস যেন অ্যাপলের অসাধারণত্ব নষ্ট না করে। আর হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সংগতির কারণেই অ্যাপলের প্রোডাক্ট ব্যবহার এত সহজ করা সম্ভব হয়েছিল । যার ধারাবাহিকতা আইফোন আর আইপ্যাডেও দেখা গেছে।

জবসের বিশ্বাস ছিল, এর মধ্যে দিয়ে সে মানুষের সেবা করছে।
তাঁর মতে,” সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত থাকে, তাদের ডিভাইসকে সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর করে রাখার সময় নেই, তাই সেই দায়িত্ব আমরা নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে নিই।”

এই চিন্তা তাঁর ভুল ছিল না।ব্যবহারকারীর আস্থা অবশ্যই অনেক বড় অর্জন।আর এই আস্থা খুব ভালভাবেই অর্জন করেছে অ্যাপল।জবসের আরেকটা বিশেষত্বের কথা না বলেই নয় তা হলো, তাঁর মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা। তিনি প্রথমে প্রয়োজন নির্ধারণ করতেন তারপর বাকি সব বাদ দিয়ে তীক্ষ্ণ মনোযোগ দিতেন ওই প্রয়োজনের দিকে।একবার একটা কিছু মাথায় ঢুকলে,নিজের সবকিছু দিয়ে সেটাকে সুন্দর করার চেষ্টা করতেন। আর কোন কিছুর মুখোমুখি হতে না চাইলে কোনভাবেই তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব হতো না।তাঁর তীক্ষ্ণ মনোযোগ, তাঁকে ‘না’ বলার ক্ষমতাও দিয়েছিল।মাঝে মাঝে এই না বলতে পারার ক্ষমতাটা খুবই জরুরি।

এজন্য তাঁর প্রোডাক্ট হয়েছে সহজ ও সুন্দর। বাড়ির গ্যারেজে যাত্রা শুরু করেছিল যে কোম্পানি সেটা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে দামি টেকনোলোজি কোম্পানি। স্টিভ খুব বেশি কিছু তৈরি করে নি।আইডিয়া, আর্ট আর টেকনোলোজি মিলিয়ে ভবিষ্যৎ তৈরি করেছে শুধু। কেউ কেউ নতুনত্বকে দূরে ঠেলে শুধু বিজ্ঞাপন পুঁজি করে সফল হয়।আবার কেউ অসাধারণকে পুঁজি করে। স্টিভ দুটোকেই পুঁজি করে সফল হয়েছিলেন। এইজন্যই একের পর এক অসাধারণ সব জিনিস তৈরি করে পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের হাতে।

তাহলে কি খুবই স্মার্ট মানুষ ছিলেন স্টিভ? হ্যা,তবে আহামরি কিছু নয়।বরং তাকে জিনিয়াস বলাই ভালো। তার কল্পনা শক্তি অসাধারণ স্তরকে ছাড়িয়ে গেছে। পৌঁছে গেছে জাদুকরী স্তরে।ভবিষ্যত দেখতে পাওয়ার ক্ষমতা অবশ্যই জাদুকরী ক্ষমতা।

বিল গেটসও স্টিভ সম্পর্কে বলেন, “ সাধারণ ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে স্টিভ আসলেই প্রোডাক্টকে অসাধারণভাবে তৈরি করতে পারে। মাঝে মাঝে এই জাদুকরী ক্ষমতা দেখে অবাক হই আমি।”

যদিওবা অনেক সময় তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্কও ছিল। তাঁর তৈরি জিনিস গুলোর প্রতিটাই একটা কবিতা, গল্প,যে কবিতা, গল্প বাইনারি ভাষায় কথা বলে, প্রসেসরের ভাষায় কাজ করে।তাঁর ভাষায়,” আমার সবচেয়ে বড় চাওয়া হল,এমন একটা কোম্পানি তৈরি করা যে কোম্পানিতে সবার আসল টার্গেট হবে ভালো জিনিস তৈরি করা। লাভও দরকার আছে। কিন্তু সারা দিন লাভ লাভ করলে, মিটিং এ শুধু লাভ নিয়ে আলোচনা হলে, কোম্পানির সবার মোটিভেশন অটোম্যাটিক লাভের দিকে চলে যাবে।আমাদের লাভ হল গ্রাহকের দরকারটা গ্রাহকের চেয়ে বেশি বোঝা। বিজ্ঞান আর মানবতা যেখানে পরস্পরকে ছেদ করেছে সেখানে জাদুকরী একটা ব্যাপার তৈরি হয়েছে। অ্যাপলের প্রোডাক্ট সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে কারণ সেগুলোতে মানবতা একটা বড় জায়গা দখল করে আছে। অ্যাপল এ চাকরি হওয়ার পর স্টিভ চোখের সামনে অনেককেই দেখেছেন বদলে যেতে। দামি গাড়ি, দামি বাড়ি কি করেনি! কিন্তু এক্ষেত্রে স্টিভ ছিলেন ব্যতিক্রম।

তিনি বলতেন, “ আমি কখনই এমন জীবন চাই না। নিজের কাছে আমার প্রতিজ্ঞা ছিল, টাকা কোনভাবেই আমাকে নিয়ন্ত্রণ করবে না, আমি টাকাকে আমার জীবনের বারোটা বাজতে দেব না।” বইটি পড়তে পড়তে আপনি হারিয়ে যাবেন সত্যিই এক জাদুকরী জগতে।

আবার উল্লেখ করছি, বাবার কাছ থেকে স্টিভ একটা জিনিস শিখেছিল, কোন কাজ ভালো ভাবে করা। পরবর্তীতে তিনি কথাটি তাঁর ব্যবসায় কাজে লাগিয়েছিলেন এভাবে যে, একটা ত্রুটি হয়তো কাস্টমারের চোখে পড়বে না, কিন্তু তাই বলে সেই ত্রুটি রেখে দেয়া যাবে না। স্টিভের পরিশ্রম, সততা, ছোটবেলায় বাবার শিক্ষা, সেই সাথে শিক্ষিকার অনুপ্রেরণা এবং ভালো বন্ধুর সহযোগিতা এ বিষয়গুলো কাজ করেছে অ্যাপলের পণ্যগুলিকে অসাধারণ উচ্চতায় নিয়ে যেতে। তিনি পণ্যের quantity চেয়ে quality (গুণগততেই বেশি বিশ্বাসী ছিলেন। তাই সেদিকেই মনোনিবেশ ছিল বেশি।

জবস ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ভুগে মৃত্যুবরণ করেন।

আসলে মানুষের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হলো সময়। যেকোনো সফল মানুষই সময়ের প্রতি সচেতন। সময়কে গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই কিন্তু সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে পেরেছেন। সুন্দর টাইম ম্যানেজমেন্টের কারণেই কিন্তু বড় বড় উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, জবস ঠিক সেটাই করে দেখিয়েছেন। আগ্রহকের চাহিদার ক্ষেত্রে জবস তাঁর কথা ও কাজে মিল রেখেছেন। তাই আগ্রহকদের আস্থাও অর্জন করেন। এই গুণটি একজন উদ্যোক্তার জন্য খুব প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের দেশের অনেক বড় বড় উদ্যোক্তা কোম্পানি শুধুমাত্র এই কারণেই বাজারে টিকে থাকতে পারছেনা। জবস সবসময় নতুন কিছু শিখতেন আর তা প্রয়োগ করতেন।

আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুক – এর মতো বড় বড় কোম্পানিগুলো কেন কিছুদিন পরপরই আপডেট আনে? এর কারণ তারা প্রতিটি মূহুর্তে ক্রেতাদের চাহিদা সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখেন এবং সেই অনুযায়ী নিজেদের পণ্য ও সার্ভিস আপডেট করে। এই ধরনের আপডেট আসলে যেকোনো পেশাতেও আনা প্রয়োজন।

‘স্টিভ জবস ‘ বইটি রিভিউ করার আমার একটাই উদ্দেশ্য সেটা হল, আমরা যেন স্টিভ জবসের জীবনী থেকে কিছু শিখতে ও শেখাতে পারি।

পরিশেষে এটাই বলতে পারি যে, দিনশেষে একজন উদ্যোক্তাকে লাভের চিন্তাও করতে হবে তাই বলে মানুষের সাথে প্রতারণা করে নয়।

যেকোন উদ্যোক্তার প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত সততা ও আস্থার সংকট পূরণ করা। আপনি ই-কমার্স করেন কিংবা সরাসরি ব্যবসায়ই করেন সবার আগে প্রয়োজন গ্রাহকের আস্থা অর্জন ও তা ধরে রাখার চেষ্টা।

 

বইয়ের নামঃ স্টিভ জবস
মূল লেখকঃ ওয়াল্টার আইজ্যাকসন
অনুবাদকঃ মহিউল ইসলাম মিঠু
প্রকাশনীঃ চারদিক
পৃষ্ঠাঃ ৩৬৮

 

শেখ বিবি কাউছার
প্রভাষক
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ
রাউজান, চট্টগ্রাম।
koucherihc14@gmail.com

Please follow and like us:

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button