সত্য ঘটনা অবলম্বনে: নাইরোবিতে অসহায় স্বদেশী
ফজলুর রহমান:: কেনিয়াকে তো চিনেন? সেই আইসিসি ট্রফি, মালয়েশিয়ার কিলাত ক্লাব মাঠ, জাফরুল্লাহ শরাফতের সেই ধারাভাষ্য। ক্রিকেট সূত্রে চিনবেন তো অবশ্যই। স্টিভ টিকেলো, মরিচ ওদুম্বে নামগুলো এখনো অনেকের মনে। আর এক সময়ে আইসিসির দাপুটে সহযোগী কেনিয়ার সাথে বাংলাদেশের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের রব হতো জনেজনে। নানাদেশের পাশাপাশি বেশি ম্যাচ হতো ঢাকায় কিংবা কেনিয়ার নাইরোবিতে।
এখন সেই নাইরোবির একটি ঘটনা বলি। তার আগে নাইরোবিকে একটু ভালো করে চিনে নেয়া যাক।
নাইরোবি কেনিয়ার রাজধানী এবং পূর্ব আফ্রিকার প্রধানতম নগরী। নাইরোবি নামটি মাসাই ভাষার একটি শব্দগুচ্ছ “এনকারে নাইরোবি” থেকে এসেছে, যার অর্থ “শীতল জলাশয়”; শব্দগুচ্ছটি শহরটির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে অবস্থিত একটি পশুদের খাবার পানির প্রাকৃতিক টোল বা গর্তকে নির্দেশ করেছে। নাইরোবি নগরীর আয়তন প্রায় ৬৯৬ বর্গকিলোমিটার। ঢাকার আয়তনের আড়াই গুণ বা কলকাতার আয়তনের সাড়ে তিন গুণ।
২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৪৪ লক্ষ অধিবাসী এবং বৃহত্তর নাইরোবি মহানগরীতে প্রায় ৯৪ লক্ষ লোক বাস করে, ফলে জনসংখ্যার বিচারে এটি পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম এবং সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম নগরী।
সেই নাইরোবির এয়ারপোর্টে পা রাখলেন তিনি। ঘটনাও বলছেন এই পা রাখা পরবর্তী বিষয়ে।
২০০৮ সালের ঘটনা। তিনি তখন ব্যবসায়িক কাজ সেরে দেশে ফেরার পথে। কেনিয়ার নাইরোবি এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেখলেন ১০-১২ জন বাংলাদেশীর অসহায় মুখ। এই স্বদেশীরা ওখানে ইমিগ্রেশন পুলিশের হেফাজতে। দালালদের মাধ্যমে ভিন্ন দেশে পাড়ি দিতে গিয়ে আটক। নাইরোবি ট্রানজিট পয়েন্টে পক্ষকাল ধরে পড়ে আছেন। কেউ নেই পাশে।
নাই রসদ। নাই টাকা-পয়সা। সব ফুরিয়ে হতদশা। দুই দিন ধরে পেটে কিছু পড়েনি। তিনি এই স্বদেশীদের হতভাড়া দৃশ্য দেখলেন। এরপর মানিব্যাগে হাত দিলেন। ডলার দিলেন যতোটা পসিবল। শুকনো খাবারও দিলেন।
অসহায় চেহারায় এবার খুশির ঝিলিক কিছুটা। দাতার মনেও সুখানুভূতি। সেই অবদান ভুলেননি অনেকে। প্রায় এক যুগ পরও একজন ফোন করে কৃতজ্ঞতাবোধ জানিয়ে দিলেন। এতে সেই মানবিক অবদান রাখা ব্যক্তিও আনন্দিত ।
তিনি অনুভূতি প্রকাশ করলেন এই একটি বাক্য দিয়ে- “An act of kindness never goes unrewarded!”
এবার সেই ‘তিনি’ এর পরিচয়ে আসি। এখানের সেই মানবিক ব্যক্তির নাম মি. মুরিদুল আলম চৌধুরী। যিনি বাংলাদেশ জুট গুডস্ এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের একজন পরিচালক। এমন মানুষদের জন্যই পৃথিবী এতো সুন্দর।
এমন মানুষের অবদানে মুখে হাসি ফিরে মানুষের। এমন মানুষদের ভালোবাসায় ধন্য হয় মানব জীবন।
লেখক: ফজলুর রহমান, উপ-পরিচালক (তথ্য ও প্রকাশনা), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।