আমের পোকা, সাঁতার ও অন্যান্য
ফজলুর রহমান::
এ এক বিরাট রহস্য। আমের ভিতরে পোকা ঢুকে কেমনে! ছিদ্রযুক্ত আম থাকলে হয়তো ধরে নিতে পারি, আমের ভিতর অচিন পোকা ওই পথ দিয়ে আসে-যায়।
কিন্তু যে আমের ছিদ্র নেই! এমনকি কোন রং, দাগ বা নিশানাও নেই! দরজা জানালা কিচ্ছু নেই, কেমনে পোকার ঘর হয়ে যায়! ছোটবেলায় এই রহস্য জট খুলতে পারিনি।
পরে অবশ্য জেনেছি গোপন রহস্য! আসলে আমাদের দেশে আমের যে পোকা বেশি দেখা যায়, তার নাম Sternochetus mangiferae. যখন আমের অবস্থা যখন একেবারে মুকুল পর্যায়ে থাকে তখন এরা এদের হুলের মাধ্যমে এদের ডিম আমের মাঝে প্রবেশ করিয়ে দেয়।
কিছু সময়ের মাঝে আম বড় হয়ে গেলে এই দাগ মিটে যায়। কিন্তু পোকার ভিতর সে ডিম থেকে যায়। এটা আস্তে আস্তে লার্ভা দশায় এসে আম খেয়ে বড় হয়। এক সময় আম পেকে গেলে এরা আমের গা ছিদ্র করে বের হয়। অথবা সেখানে ঘর বেঁধে রয়ে যায়। এখানে আমরা সব দেখি না। কারণ আমের খুব ছোট দশায় এরা প্রবেশ করে বলেই এমন হয়।
এটা জানলেও আরো অনেক প্রচলিত বিষয় আছে, যার রহস্য অজানা। আদৌ সত্য কি না, বৈজ্ঞানিক, ধর্মীয় বা অন্য কোন ব্যাখ্যা আছে কিনা জানা নেই। দেখা, জানা, শোনা এবং কুড়িয়ে পাওয়া এমন কিছু প্রচলিত কথা এবার তুলে ধরা যাক,
১. আমের পোকা খেলে সাঁতার জানা যায়।
২. গাছে বসে আম খেলে গাছের আমে পোকা হয়।
৩. পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম, দুধ, কলা খাওয়া যাবে না। ডিম খেলে পরীক্ষায় ডিম (গোল্লা) পাবে। দুধ খেলে কিছু না লিখে সাদা খাতা দিয়ে আসতে হবে। কলা খেলে নাম্বারের বদলে কলা পাবে!
৪. দোকানের প্রথম কাস্টমার ফেরত দিতে নাই।
৫. নতুন বউকে শ্বশুর বাড়ীতে নরম স্থানে বসতে দিলে বউয়ের মেজাজ নরম থাকে।
৬. জোড়া কলা খেলে জমজ সন্তান জন্ম নেয়।
৭. রাতে নখ, চুল, দাঁড়ি-গোফ ইত্যাদি কাটতে নেই।
৮. ভাই-বোন মিলে মুরগি জবাই করা যায় না।
৯. ঘরের ময়লা পানি রাতে ঘরের বাইরে ফেলতে হয় না, তাতে সংসারে অমঙ্গল হয়।
১০. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কোন কিছুতে ধাক্কা খেলে একটু বসে পুনরায় যাত্রা শুরু করতে হয়।
১১. ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি হয়।
১২. ছোট বাচ্চাদের দাঁত পড়লে তা ইঁদুরের গর্তে ফেলতে হয়, নয়তো চোখ বন্ধ করে ঘরের চালায় ফেলতে হয়, না হলে দাঁত আঁকাবাঁকা হয়।
১৩. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পেছন দিকে ফিরে তাকানো নিষেধ; তাতে যাত্রা ভঙ্গ হয় বা যাত্রা অশুভ হয়।
১৪. চিতই পিঠা বেশি খেলে কিংবা ডেকচির তলানি খেলে কন্যা সন্তান হয়।
১৫. ভাতের কাঠি দিয়ে মারলে বন্ধ্যা হয়।
১৬. দরগাহ জাতীয় জায়গা থেকে পেছনের দিকে হেঁটে বের হতে হয়।
১৭. শিশু ঘুমানোর সময় উপরে বেয়ে উঠলে হায়াত বেশি হয়, আর নিচের দিকে নামলে হায়াত কম হয়।
১৮. কাতল মাছের মাথা খেলে সন্তানের মুখের হা বড় হয়।
১৯. রাতে গাছের পাতা ছিঁড়া ও ফল তোলা নিষেধ।
২০. ঘর থেকে বের হয়ে বিধবা নারী চোখে পড়লে যাত্রা অশুভ হয়।
২১. বিধবা নারীকে অবশ্য অবশ্যই সাদা কাপড় পরিধান করতে হবে।
২২. ভাঙা আয়না দিয়ে চেহারা দেখা যাবে না, তাতে অমঙ্গল হয়, চেহারার ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়।
২৩. ডান হাতের তালু চুলকালে টাকা আসে, আর বাম হাতের তালু চুলকালে বিপদ আসে।
২৪. খালি ঘরে সন্ধ্যায় বাতি দিতে হয়, না হলে বিপদ অনিবার্য।
২৫. গর্ভবতী মহিলার জন্য কোনো কিছু কাটা/জবাই করা নিষিদ্ধ, তাতে বাচ্চা ঠোঁট কাটা জন্ম নেয়।
২৬. বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সামনে দিয়ে খালি কলস নিয়ে কেউ গেলে বা খালি কলস পড়লে যাত্রা অশুভ হয়।
২৭. হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে ভাগ্যে দুর্ভোগ আছে মনে করা হয়।
২৮. কুটুম পাখি ডাকলে বলা হয় আত্মীয় আসবে।
২৯. খাওয়ার সময় ঢেঁকুর আসলে অথবা খাবার আটকে গেলে কেউ তাকে স্মরণ করছে বা গালি দিচ্ছে মনে করা।
৩০. কাকের ডাক বিপদের পূর্বাভাস মনে করা।
৩১. শকূন ডাকলে বা দেখলে কেউ মারা যাবে, এটা মনে করা।
৩২. পেঁচার ডাককে বিপদের কারণ মনে করা।
৩৩. তিনজনের একসঙ্গে পথ চলা অকল্যাণজনক মনে করা।
৩৪. দু’জনের কথার ফাঁকে টিকটিকির আওয়াজকে কথার সত্যায়ন মনে করা।
৩৫. কারো মাথায় টোকা খেলে দ্বিতীয় বার টোকা দেওয়া আবশ্যক মনে করা, না হলে মাথায় রোগ হয় ভাবা।
৩৬. কাপড় দিয়ে কাউকে মারলে হায়াত কমে যায়।
৩৭. সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘর ঝাড়ু দেওয়ার আগ পর্যন্ত খাওয়ার জন্য কাউকে কোনো কিছু দেওয়া নিষেধ।
৩৮. রাতে কোনো কিছুর লেন-দেন করা ভালো নয়।
৩৯. সকালে দোকান খুলে নগদ বিক্রি না করা পর্যন্ত কাউকে বাকি দেওয়া নিষেধ, তাহলে সারাদিন শুধু বাকিই বিক্রি করতে হয়।
৪০. দাঁড়িপাল্লা কিংবা মাপার জিনিস পায়ে লাগলে বা হাত থেকে নিচে পড়ে গেলে সেটাকে সালাম করতে হয়, না হলে ঘরের লক্ষ্মী চলে যায়।
৪১. ফলবান বৃক্ষ বা বাগানে মানুষের বদ নজর এড়াতে মাটির পাতিলে সাদা-কালো রং মেখে তা ঝুলিয়ে রাখতে হয়।
৪২. বিনা ওযুতে বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী(রাঃ)’র নাম নিলে শরীরের পশম পড়ে যায়।
৪৩. সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী নারীরা কিছু কাটলে গর্ভের সন্তান নাক-কান বা ঠোঁট কাটা অবস্থায় জন্ম নেয়।
৪৪. মহিলাদের হাতে বালা বা চুড়ি না পড়লে স্বামীর অমঙ্গল হয়।
৪৫. স্ত্রীর নাকে নাক ফুল পরিধান স্বামীর জন্য মঙ্গলজনক মনে করা।
৪৬. গলায় মাছের কাঁটা বিঁধলে বিড়ালের পা ধরে মাফ চাইতে হয়।
৪৭. বেচা-কেনা বা লেনদেনের সময় জোর সংখ্যা রাখা যাবে না। যেমন, এক লাখ টাকা হলে সেখানে এক লাখ এক টাকা দিতে হয়।
৪৮. হঠাৎ বাম চোখ কাঁপলে দুঃখ আসবে মনে করা।
৪৯. কোরবানির ঈদের দিন দু’পা বিশিষ্ট প্রাণী (হাঁস, মুরগী) ইত্যাদি জবাই করা নিষেধ।
৫০. স্বামীর নাম মুখে বলা যাবে না এতে স্বামীর অমঙ্গল হয়।
৫১. ঢেকির ওপর বসে আহার করলে বউ মারা যায় বলে মনে করা।
৫২. আঙ্গুলের ইশারায় কবর দেখালে সেই আঙ্গুল পঁচে যায়।
৫৩. যে নারীর নাক ঘামে সে স্বামীকে অধিক ভালোবাসে।
৫৪. পুরুষের বুকে লোম থাকা স্ত্রীকে ভালোবাসার পরিচয়াক মনে করা।
৫৫. মাটিতে আঁকাআঁকি করলে বা কিছু লিখলে মেধা কমে যায়।
৫৬. মাথা ন্যাড়া করলে চুল লম্বা হয়।
৫৭. সন্তান জন্মের পর ঘুম ভালো হয় এমন কেউ কোলে নিলে আজীবন সন্তানের ঘুম ভালো হয়।
৫৮. যে টিমের বল গোলবারে লেগে ফিরে আসে সে টিম পরাজিত হয়।
৫৯. এক গালে আদর করে থাপ্পড় দিতে নেই। দিলে দুইগালে দিতে হবে।
৬০. দুলাভাইকে কোলে করে নিয়ে নতুন বউকে ঘরে তুলে আনতে হয়। (যদিও এক দশকের বিবাহিত জীবনে এই দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হয়নি। আর এখন যে অবস্থা, মেকাপ নষ্টের ভয়ে সেই সাবেকি কান্নাকাটি, আহাজারিও যেখানে বন্ধ সেখানে শাড়ি-লেহেঙ্গার ভাঁজ নষ্টের অধিকার ফলাতে এলে কষা কিছু থাপ্পড় বখশিশ মিলতে পারে!)।
লেখক, রচনা সাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং ডেপুটি ডিরেক্টর, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।