ফিচার

৪র্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই

শেখ বিবি কাউছার :: ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই। যার কারণে আমরা এখন বুঝতে পারছি যে বাংলাদেশ যদি এটার সাথে সমান তালে চলতে না পারে তাহলে বাংলাদেশ Sustain করতে পারবে না। তাই আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে ‘Digital Bangladesh’ এর কথা শুনতে পাচ্ছি, শুনতে পাচ্ছি ‘Industrial Revolution’ এর কথা। বলা হচ্ছে বর্তমান ইন্টারনেটই ৪র্থ শিল্প বিপ্লবকে বেগবান করবে। আসলে করছেও তাই। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব ইতিমধ্যে কড়া নেড়ে আমাদের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে প্রবেশ করে ফেলেছে।

স্মার্টফোনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের তথ্য প্রযুক্তি খাতের পরিবর্তন, ইন্টারনেট অব থিংস, যন্ত্রপাতি পরিচালনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ, রোবোটিকস, জৈব প্রযুক্তি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো বিষয়গুলো ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সূচনা করছে। আর আপনি কি জানেন ‘4th Industry Revolution’ এ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষাখাত। আর এই শিক্ষাখাতকে ডিজিটালাইজড ব্যতীত আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই শিক্ষক হিসেবে আমাদের ‘4th Industrial Revolution’ সম্পর্কে জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ আমরা জানলেই জানবে আগামী প্রজন্ম।

সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও রোবটিক্সসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন করা হবে। তবে জেনে অবাক হবেন বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন আগের তিনটি বিপ্লবকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ডিজিটাল বিপ্লব এই নিয়ে এখন সারা দুনিয়া তোলপাড়। আমাদের দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন সরকার। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রয়োজন হবে প্রচুর দক্ষ মানুষের।

তাহলে চিন্তা করে দেখুন তো আমি বা আপনি একজন শিক্ষক হিসেবে কিভাবে শিক্ষার্থীদেরকে প্রযুক্তিগত জ্ঞান আর মানবিক শিক্ষা দিয়ে দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। দেখুন মধ্যযুগে মুঘল সম্রাটগণ যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সে সময়ের উন্নত অস্ত্রশস্ত্র যেমনঃ কামান,গোলাবারুদ, হস্তী, ঘোড়া ইত্যাদি ব্যবহার করছেন। কিন্তু তাদের সময় যদি রোবট প্রযুক্তি বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স থাকত তারা কি সেটা ব্যবহার করতেন না যুদ্ধক্ষেত্রে? বিশ্ব বদলে যাচ্ছে।

৪র্থ শিল্প বিপ্লব বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ কাজের উপর প্রভাব ফেলবে অনেক বেশি।তাই আমাদের এমন একটি ভবিষ্যতের কথা কল্পনা করতে হবে যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নিয়োগকর্তা এবং ব্যক্তিগণ সম্পর্ণ নতুন উপায়ে একসাথে কাজ করবে।

বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তি ব্যাপক ব্যবহারের জন্য অবকাঠামোগত সুবিধাদি যেমনঃ হাই -টেক পার্ক,সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি পার্ক,আইটি ইনকিউবেটর ইত্যাদি স্থাপনা সৃষ্টির মাধ্যমে বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দিচ্ছে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানও এসব পার্কে কাজের সুযোগ পাবে।

আশা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এসব হাইটেক পার্কে ৫০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে এ উদ্যােগ আরো একধাপ এগিয়ে দিল বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের প্রথম হাইটেক পার্ক ঢাকা বিভাগের গাজীপুর জেলায় কালিয়াকৈর শহরে অবস্থিত।

৪র্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে কথা বলতে বলতে হঠাৎ আমাদের কাজী নজরুল ইসলাম এর একটা উক্তি মনে পড়ে গেল। তিনি বলেছিলেন, ” বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে, আমরা তখনও বসে বিবি-তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি,ফিকাহ ও হাদিস চষে”। আসলেই কবি বাঙালিদের স্বভাবটি বুঝতে পেরেছিলেন বলে এ কথাটি বলেছিলেন। আমরা বাঙালিরা কত বাজে কাজে যে সময় নষ্ট করি তার কোন হিসেব নেই। বিজ্ঞানের হাত ধরে বিশ্ব যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন আমরা , কে কী করল,কোথায় গেল,কি করল তা নিয়ে ব্যস্ত। তাই আধুনিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত বিজ্ঞানমনস্ক, তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ এবং মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের দেশ হিসেবে দেখতে চাই তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষাই হোক প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

লেখক: প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ, রাউজান, চট্টগ্রাম।

 

Please follow and like us:

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button