ফিচার

রাউজানের ৮’শ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীক সাহেববিবি মসজিদ

আমির হামজা, রাউজান:: প্রায় ৮শ বছরের পুরনো চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার হাঁড়ি মিয়া চৌধুরী বাড়ির ঐতিহ্যবাহী সাহেববিবি মসজিদ। রাউজানে ৮০০ বছরের পুরনো এই মসজিদ অপূর্ব স্থাপত্য শৈলীর এক অনুপম নিদর্শন। যা এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মোঘল আমলে বিদেশী কারিগরের দক্ষতায় এ মসজিদ হয়ে ওঠে নান্দনিক অপূর্ব।

জানা যায়, এ সাহেববিবি মসজিদ চুন সুরকির ও ডিমের আটাধারা গাঁথুনিতে নির্মাণ করা হয় এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি। ইতিহাস থেকে আরোও জানা যায়, আনুমানিক ১৬১২ খৃষ্টাব্দে এই মসজিদ সাহেব বিবি প্রতিষ্ঠা করেন।

রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের হাঁড়ি মিয়া চৌধুরী বাড়িতে অবস্থিত এ মসজিদ শুধু রাউজান নয়, দেশজুড়ে একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও কালজয়ী নাম। এ মসজিদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক কালজয়ী ইতিহাস।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, আরাকান রাজ সভার কবি ‘মহাকবি আলাওলের’ একমাত্র কন্যা সাহেববিবি নামকরণে এই মসজিদ ‘সাহেববিবি মসজিদ’ নামে দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিত।

সাহেববিবি হলেন রাউজান উপজেলার বিশিষ্ট আমলের জমিদার হাঁড়িমিয়া চৌধুরী বংশের ও আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা গ্রামের বিশিষ্ট জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর সহধর্মিণী।

আমির মোহাম্মদ চৌধুরী ও সাহেববিবি দম্পতির দুই কন্যা আলাকা বানু ও মালকা বানু। মালকা বানু বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক কালজয়ী নাম এবং চরিত্র।

সাহেবিবি মেয়ে মালকা বানু চট্টগ্রামের বাঁশখালির মনু মিয়া নামের এক জমিদারের প্রেমে পড়ে তাকেই বিয়ে করেছিলেন। মালকা বানু ও মনু মিয়ার ইতিহাস নিয়ে এই দেশে অসংখ্যা নাটক ছবি গান নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন বই প্রস্তুকে এই ইতিহাস দেখা মিলে।

সাহববিবি মসজিদটি এর পাশে ও সামনে প্রায় ৪ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে গেইট। এক গম্বুজ বিশিষ্ট হলেও বড় গম্বুজের দুই পাশে আরও দুটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। স্থাপনাটি ৮টি ছোট-বড় মিনার, মসজিদে প্রবেশ পথে ৩টি দরজা ও উত্তর-দক্ষিণ হয়ে ২টি জানালা রয়েছে। কারুকাজের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে শৈল্পিক রূপ। এই মসজিদে শতাধিক এর বেশি মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের পাশে রয়েছে বিশাল দীঘি যা শাহী পুকুর নামে পরিচিত। ৮’শ বছর পূর্বে নির্মিত স্থাপনাটি রূপগত পরিবর্তন করে বর্তমানে লাগানো হয়েছে টাইলস।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যাই, মসজটি বিভিন্ন কারুকাজ সম্বলিত টেরাকোটার ইট ও চুন-সুরকির গাঁথুনিতে এই মসজিদ নির্মিত। মসজিদের সামনে রয়েছে ঈদগাহ পাশে রয়েছে কবরস্থান সেই কবরস্থানে শায়িত রয়েছে এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সাহেববিবি।

ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় মসজিদে দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মুসল্লীও এখানে এসে নামাজ আদায় করেন। কালের সাক্ষী এই মসজিদ দেখার জন্য পর্যটকরাও এখানে ভিড় জমান।

মসজিদের চারপাশে নানা রঙের ফুলে ফুলে সাজিয়ে তুলা হয়েছে এই মসজিদ। রয়েছে দুটি সৌদি খেজুর গাছও সেখানে খেজুর ঝুলছে কোথায় কোথায়। সেই ঐতিহাসিক মালকা বানুর মা সাহেববিবির নামে করা সাহেববিবি মসজিদটিও কালজয়ী এক স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে রাউজানের বুকে।

Please follow and like us:

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button